উদ্যোক্তা - মুক্তামনি

নারী শাড়িতেই সুন্দরী। অনুষ্ঠান হলেই শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ লাগে। এমনকি ফর্মাল লুক মানেই শাড়ি, প্রেজেন্টেশন লুক! শাড়ি লাগে সবকিছুতেই। আর সব শাড়ির সংগ্রহ নিয়ে এসেছেন ‘গ্রীণ ফ্যাশন’। গ্রীণ ফ্যাশনের কর্ণধার মুক্তামনির উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পটা চলুন জেনে নিইঃ 

মুক্তামনি জন্মগ্রহণ করেন লক্ষ্মীপুরে। পড়াশোনার সুবাদে টাংগাইলে পারি জমান। পড়াশোনা করেছেন সমাজবিজ্ঞানে মওলানা ভাসানী কলেজে। টাংগাইল কোর্টেও যাওয়া আসা করেছেন কিছুদিন। কিন্তু কোর্ট থেকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য উৎকোচ দাবী করেন। মুক্তামনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তিনি উৎকোচ দিয়ে চাকরি করবেন না। তাই মুক্তা কোর্টে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তখন মুক্তামনি টাংগাইল জেলা প্রশাসকের অধীনে তিনটি প্রজেক্টে চাকরি শুরু করেন, প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মুক্তা বেকার হয়ে পরেন এবং হতাশার মধ্যে পরে যান।

সে সময় মুক্তামনির দু’জন স্যার তাকে ব্যবসা করার কথা বলেন একজন টাংগাইলের এসিল্যান্ড সুফল চন্দ্র গোলদার, অন্যজন সিএ – শামসুজ্জামান শামীম। তাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি উদ্যোক্তা; মুক্তামনি এমনটাই বলছিলেন উদ্যোক্তা বার্তাকে।আগে কোনো রকম অভিজ্ঞতা ছিল না। মুক্তার উদ্যোগ নেওয়ার পর দেড় থেকে দুই মাস বিভিন্ন তাঁতে গিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা নেন মুক্তা।

মুক্তামনি ২০১৯ সালে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা নিয়ে “গ্রীণ ফ্যাশন” নাম দিয়ে শুরু করেন টাংগাইলে শাড়ির ব্যবসা। পার্টনার হিসেবে বন্ধু মো. মোকলেছুর রহমানকে পাশে পেয়েছেন। অফিস দিয়েছেন। তিনটি তাঁত শিল্পের সাথে চুক্তি হয়েছিল মুক্তামনির যে, তারা যেন তাদের পণ্য ‘গ্রীণ ফ্যাশন’ এর বাইরে কাওকে না দেয়। সাথে একটা গোডাউন ও আছে মুক্তামনির।

মুক্তামনি এই চার পাঁচ মাসে অনেকের কাছে নানারকম কথা শুনেছেন, কি করছ এসব? অনলাইনের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। যা পুঁজি আছে সেটাও হারাবে এরকম নানা প্রশ্নের মুখো-মুখি হয়েছেন মুক্তা তারপরও নিজের সিদ্ধান্ত অটল থেকেছেন; বিশ্বাস ছিল নিজের প্রতি।

মুক্তামনির তাঁতের শাড়ি শুধু দেশের মাটিতেই জনপ্রিয় না, জনপ্রিয় হয়েছে ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং লন্ডনে। দেশের পণ্য বিদেশে পাঠিয়েছেন মুক্তামনি। ক্রেতাদের থেকে ভাল সাড়া পান এবং একবার যে পণ্য ক্রয় করে  পুনরায় সে অর্ডার করে। মুক্তামনি ক্রেতাদের এক আস্থার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছেন৷ যারা চাকরিজীবী তাদের জন্য মুক্তামনি অনলাইন ড্রেসের ব্যবসায় এক ভরসার নাম ‘গ্রীণ ফ্যাশন’।

পরিবার থেকে সহযোগিতা বলকে শুধু মাত্র মেজ ভাইয়ের কাছ থেকে মানসিক সহায়তা পেয়েছেন বলে জানান এই উদ্যোক্তা। এখনো মুক্তামনির মা মুক্তাকে বলে এসব করোনা।

গ্রীণ ফ্যাশনে পাওয়া যায় জামদানি, হাফ সিল্ক, কাতান সিল্ক, পিওর সিল্ক, কটন, গ্যাস সিল্ক, বিভিন্ন রকমের শাড়ি যার সর্বনিম্ন মূল্য ৭২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ৯৯৯০ টাকা।

মুক্তামনি শুধু নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করেন নি করেছেন আরো ১০-১২ জন মানুষের কর্মসংস্থান।

মুক্তামনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে হেরে যাওয়ার জন্য আসিনি। হেরে যাওয়ার অনেক কারণ থাকে কিন্তু সফলতার একটাই পথ আর তা হল, বার বার চেষ্টা করা। চেষ্টার ওপরে আর কিছু নাই।’

ভবিষ্যতে গ্রীণ ফ্যাশনকে নিয়ে মুক্তামনি অনেক দূর এগিয়ে যেতে চান। আউটলেট হবে। আলিবাবা,দারাজ এর মত একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে গ্রীণ ফ্যাশন অনলাইন। সবাই এক নামে চিনবে এমনটাই পরিকল্পনা মুক্তার।

পুঁজির ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা ৪/৫ মাসে ১৯ লাখে দাঁড়িয়েছে। যার কারণ,পরিশ্রম এবং সাহসিকতার সাথে কাজ করা।

নারী মানে থেমে যাওয়া নয়। নারী মানে শুধুমাত্র প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা হওয়া নয়। নারী মানে বিয়ের আগে বাবার পরিচয় বিয়ের পর স্বামীর পরিচয় নয়। একজন নারী নিজের পরিচয়ে বাঁচতে পারেন। যেমনটা পেরেছেন মুক্তামনি।

একজন নারীও পারে উদ্যোগ নিয়ে সফলতা অর্জন করে আরো দশ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে। একজন নারী যখন আয় করে তখন তার পরিবার, সমাজ তাকে সম্মানের চোখে দেখেন। একটা পরিচয় তৈরী হয়। মুক্তামনি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং সফল নারী উদ্যোক্তা।

 

খাদিজা খাতুন স্বপ্না 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here