উদ্যোক্তা- মোঃ মনির হোসেন

এইচএসসি ২০০২ সালে সম্পন্ন করেন পঞ্চগড়ের ছেলে মোঃ মনির হোসেন।বাবা বলেছিলেন পড়াশোনা করে নিজের মত চাকরী করে সফল হতে অথবা বিদেশ যেতে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং এ ভর্তি হলেন মনির হোসেন। নিজের খরচ চালানো কঠিন ছিলো। সব বন্ধু টিউশনই করতো, কিন্তু মনিরের টিউশনি একদমই পছন্দ ছিলো না।

২০০৪ সাল একটেক-এ গ্রাফিক্স মাল্টিমিডিয়া ডিপার্টমেন্টে একটি ডিপ্লোমা কোর্স করা শুরু করলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক মনির। পেটের দায়ে কিছু করার তাগিদ যেখানে, পরিবারকে নিজের পড়াশোনার খরচের জন্য চাপ না দেবার বাসনা সেখানে, সেইখানে গ্রাফিক্সের ভুবন তরুণটির মন রঙ্গিন করে তুললো। গ্রাফিক্সের সুন্দর ডিজাইন আর বর্ণিল ভুবন দেখে মনে হল তার তিনি শিখতে পারবেনই। আবার তার পড়াশোনা ছিল মার্কেটিং এ। সব মিলিয়ে দৃঢ় প্রত্যয় হাতে নিলেন। স্বপ্ন আঁকলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ মনির হোসেন।

২০০৭-২০০৮ সাল, এক টেক এরিনা মাল্টিমিডিয়াতে প্রথম জব ছিলো ল্যাব এসিস্টেন্টের। জব টি করলেন মনির ভীষণ মন দিয়ে। ২০০৯, সিনিয়র ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে পদোন্নতি পেলেন। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে গেলো। সেই সময়টির মধ্যেই, নিজে পোস্টার বানিয়ে নিজেই প্রচারণা চালাতেন। সেই সময় একটেক কে ভীষণ আপনার করে একটি প্রতিষ্ঠানকে চালিয়ে নেবার স্কিল ডেভেলপ করলেন এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে চালাবার অনেক নিয়ম-কানুন শিখে ফেললেন তরুণ মনির।
২০০৮ সাল, তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আইটি সেক্টরে নিজ কার্যক্রম শুরু করলেন মনির হোসেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের এক নতুন স্বপ্ন প্রত্যয়ে ১০০০ স্কয়ার ফিটে ধানমন্ডির অর্কিড প্লাজায় যাত্রা শুরু হলো ক্রিয়েটিভ আইটি’র। শুরুতেই সার্ভিস ওরিয়েন্টেড প্লাটফর্ম করলেন উদ্যোক্তা মনির হোসেন।

২০০৯ সাল, গ্রাফিক্স, ওয়েব ডিজাইন এবং অ্যানিমেশনের এই ৩টি কোর্স ইন্ট্রোডিউসড হলো। আউট অব দ্য বক্স প্ল্যান, পূর্ববর্তী এক্সপেরিয়েন্স বলেছে ইন্সটিটিউট ইন্সটিটিউট হিসেবে থাকে, ডেভেলপমেন্ট দুটি আলাদা স্বত্বা নয়। একই এনটিটিতে দুটি পালক হিসেবে উপহার দিলেন তরুণ এই সাহ্নিক উদ্যোক্তা – ট্রেনিং এবং ডেভেলপমেন্ট। আইটি ট্রেনিং এবং আইটি খাতে ডেভেলপমেন্ট। আইটি খাতে এগিয়ে চলে ক্রিয়েটিভ আইটি। কোয়ালিটি এনশিওর করতে ভীষণ মনোযোগী হলেন তরুণ উদ্যোক্তা প্রথম ৫ জন কর্মী এবং সহকর্মীদের নিয়ে। যা শেখানো হয় প্রায়োগিক জ্ঞানে জব মার্কেটের সাথে সরাসরি কানেক্টেড করে কমার্শিয়ালী একজন শিক্ষার্থী এনরোল করা হয়।

ক্রিয়েটিভ আইটিতে প্রথম ৫ বছর কঠোর পরিশ্রম করে দিনে আঠারো ঘণ্টা সময় দিয়েছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। ক্লাস কন্টাক্ট, পলিসি মেকিং, মার্কেটিং, অফিস ম্যানেজমেন্টে নিজেদের উৎকর্ষতা সাধনে নিবিড় সময় দিলেন উদ্যোক্তা মনির হোসেন। নাম ছড়িয়ে পরলো ক্রিয়েটিভ আইটি’র।

২০১৩ সাল। ৫০ জন কর্মীকে নিয়ে ৩০০০ স্কয়ার ফিটে নতুন কর্মভুবন উদ্যোক্তার স্থান। ৫ হাজারের মত শিক্ষার্থীদের ইতিমধ্যে নিজেদের কর্মে আলোকিত করেছে উদ্যোক্তার উদ্যোগ ক্রিয়েটিভ আইটি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মিনিস্ট্রি, বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশের সাথে কাজ করা শুরু হলো। ট্রেনিং এবং সার্ভিসে এক উজ্জ্বল নাম প্রতিষ্ঠা হলো ক্রিয়েটিভ আইটি’র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ডিপার্টমেন্টের সাথে একাডেমিক পার্টনারশিপে কাজ করা শুরু হলো। আর এক নতুন পালক যোগ হলো তার পথে হাঁটবার। ২০১৫- আইএসও সনদ প্রাপ্তি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনে উদ্যোক্তা তার উদ্যোগ নিয়ে। মনির হোসেন কে এক দুরন্ত দূর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যায় তার উৎসাহ। একে একে অর্জন করা স্বীকৃতিগুলো উদ্যোক্তা মনির হোসেনকে এক দুরন্ত-দূর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যায় তার কর্ম ভুবনে তার নিরলস পরিশ্রম এবং আইটি খাতে নিবিড়ভাবে সময় দেয়া উদ্যোক্তা হিসেবে।

২০১৯ সাল, ১০ বছরে অর্জনে আজ এক হাজার স্কয়ার ফিট থেকে তিন হাজার স্কয়ার ফিট, তিন হাজার স্কয়ার ফিট থেকে ২০ হাজার স্কয়ার ফিটে উদ্যোক্তার উদ্যোগ ক্রিয়েটিভ আইটি। আজ ৩০ হাজার এক্সপার্ট বেরিয়েছে ক্রিয়েটিভ আইটি থেকে। ১৫ হাজার শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্সিং এ সরাসরি উপার্জন করছেন দেশী এবং বৈদেশিক মুদ্রা। ১০ হাজার সফল ছাত্র যারা বাংলাদেশকে করছে আলোকিত। ১৮টি কোর্স আজ ২ হাজারের বেশি চলমান শিক্ষার্থী। আইটি ও আইসিটি খাতের শিক্ষণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং দিচ্ছেন উদ্যোক্তা। কর্মসংস্থানের সুযোগ করছেন সৃষ্টি। বয়স্কদের নিয়ে আইটি খাতের শিক্ষণে যোগ করেছেন নতুন স্বপ্ন, এগিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোক্তা। শাণিত মেধায় ছড়াচ্ছেন প্রভা। হাজার হাজার ঝলমলে তরুণদের এক কম্পিটেটিভ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিশ্বমানে সরাসরি শিক্ষিত, কর্মক্ষম ও বিশ্ববাজারে কর্মসম্পাদন উপার্জানের প্রতক্ষ ভূমিকা রাখছে আজ ক্রিয়েটিভ আইটি। আইসিটি স্কিল ডেভেলপমেন্টে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে আজ তাদের উদ্যোগকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা মনির হোসেন।

চাকরি থেকে জমানো মাত্র ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে দেশের জন্য কিছু করবার দৃঢ় প্রত্যয় বলীয়ান এক স্বপ্নিক তরুণ তার উদ্যোগ নিয়ে যাত্রা শুর করেছিলেন। আজ তার উদ্যোগ বছরে মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে দেশের জন্য, সক্ষমতা অর্জন করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে। নিজেকে প্রমাণ করেছে দেশ ও বিশ্বের সামনে।

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here