মা দিয়েছিলেন দোয়া আর অনুপ্রেরণা

0
উদ্যোক্তা সাদিয়া মুল্কজাদী

আমাদের দেশের নারীরা ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় পর্দার প্রতি শ্রদ্ধাশীল । পাশাপাশি আধুনিক ফ্যাশনও পছন্দ করে। বর্তমান সময়কার বাজারে আবায়া, হিজাব ও বোরকার ডিজাইনে আধুনিক ফ্যাশনের ছোঁয়া লেগেছে। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশী ও ভিন দেশি নারীরাও, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে আবায়া, হিজাব ও বোরকার প্রতি ঝোঁকের বিষয়টি উঠে এসেছে। আর যেহেতু এ সব বিষয় খেয়াল রেখে গড়ে তুলেছেন “মুল্কজাদে” নিজের ডিজাইনিং ও দক্ষ সহকর্মীদের এগিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন সাদিয়া মুল্কজাদী।

একজন তরুণ যার নাম সাদিয়া মুল্কজাদী। তার প্রতিষ্ঠানের নাম “মুল্কজাদে” ঢাকায় জন্ম এবং বেড়েও উঠেছে ঢাকাতেই । বাবা-মা দুজনই ব্যবসায়ী ছিলেন। ৬ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় জন তিনি। আইইউবি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন ডেভলপমেন্ট বিষয়ে স্নাতক শেষ করেন।কলেজ জীবন থেকে কাজের সঙ্গে জড়িত  ছিলেন এবং একটি লক্ষ্য ছিল তার সব সময়। তবে পেশাগতভাবে শুরু করেন স্নাতকের পরে।

উদ্যোক্তা সাদিয়া মুল্কজাদী বলেনঃ স্নাতক শেষ করে চিন্তা ভাবনা ছিল কিছু করবো। নিজের একটি পরিচয় তৈরি করবো। আমার বাবা- মা দুজনেই ব্যবসায়ী ছিলেন। যদিও বাবা খুব ব্যস্ত থাকতেন আর মা বাসায় ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বাবাতো তেমন সময় দিতে পারতেন না কিন্তু মা ব্যবসা পাশাপাশি আমাদের ৬ বোনকে সব সময় শিখিয়েছে নিজের পরিচয় যেন নিজেদের মেধা ও পড়াশোনা কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলি। এসব ভাবনা আর মায়ের দোয়া অনুপ্রেরণা নিয়ে শুরু করেছিলাম ২০১৮ সালে “মুল্কজাদে” অনলাইন ফেসবুক পেজ।”

তিনি বলেন, ব্যবসার প্রথমে কিছু হোম ডেকর নিজস্ব ডিজাইনের পণ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম কিন্তু পরে আরো জমানো টাকা দিয়ে কাপড়  কিনে আনি। সেগুলো ডিজাইন করা শুরু করি। এক্ষেত্রে মা ও ছোট বোনের আমাকে খুব সহযোগিতা করে। বিশেষ করে আমার মা কি ডিজাইন হবে? কেমন কাপড় হবে? কিভাবে ছবি দিলে ভালো সব কিছু ঠিক করে মায়ের নির্দেশনা নিয়ে প্রথম ৫/৬টি পণ্যের ছবি ফেসবুক বিজনেস পেজে আপ্লোড দেওয়া ৭ দিনের মধ্যে সেল হয়ে গেল। এ থেকে শুরু হলো বর্তমানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাহিরের দেশেও আমার পণ্য বিক্রি হয়।’

উদ্যোক্তা সাদিয়া মুল্কজাদী ১০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন মুল্কজাদে অনলাইন পেজের মাধ্যমে । বেশ কয়েকটি বৈচিত্র্যের পরিমিত পোশাক রয়েছে তার পেজে। যেমন -আবায়া, বোরকা, কেপ, হিজাব, ডিজাইনিং মাস্ক। শুধুমাত্র দেশব্যাপী নয় সারা বাংলাদেশের গ্রাহকদের ডেলিভারি করেন। আর দেশের বাহিরে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রাহক রয়েছে, বেশিরভাগই পণ্য বিক্রি হয় যেসকল দেশ গুলোতে  সেগুলো হলো-  যুক্তরাজ্য, মার্কিন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া আরো অনেক দেশে, তিনি জানান।

সাদিয়া মুল্কজাদী বলেন, ব্যবসার শুরুতে পণ্য ও পেজ যখন ব্যপক সারা পেল তখন আশেপাশের কিছু ব্যবসায়ী উল পালটা হিউমার ছড়িয়ে ছিল। যে আমার পণ্য ভালো না এ ধরনের আরো বাজে কথা কিন্তু আমি থামিনি। এ সব ধরনের মানুষেদের এড়িয়ে নিজের মতো নিজের কাজ করে এগিয়ে গেয়েছি।এর জন্য আমার কাস্টমাররা বর্তমানে আমার সামনে পিছনে সব সময় প্রসংশা করেন। এছাড়াও দেশের বাহিরে যে সব ক্রেতারা আছেন তারা আমাকে আরো অনুপ্রাণিত করেন কেন আমি সব সময় তাদের কাছে পণ্য পাঠানোর একটি রাস্তা বের করিনা।কেন বিদেশে নিজের ব্যবসা শিফট করি না। কিন্তু আমি উত্তর দিই- আমার দেশের কারিগররা যেভাবে কাজ তা নিয়ে আমি গর্বিত। তাদের কাজ সূক্ষ্ম এতো সুন্দর যা আমি অন্য কোথাও করাতে পারব না। আর আমি চাই এ কারিগর ও আমার কর্মীরা যেন সংস্থাহীন না হয় আমার পণ্যকে আমি যে ভাবে রূপ দিয়ে তৈরি করতে চায় তারা ঠিক সেই ভাবে আমার পণ্য গুলো উৎপাদন করতে আমাকে সহায়তা করে এবং এর জন্য আমার পণ্য তৈরি হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে সেল হয়ে যায়।’

তরুণদের পরামর্শ দেন, স্টুডেন্ট অবস্থায় থেকে যেন কাজে যুক্ত হয়ে যায়। নিজেকে যে বিষয় দক্ষ মনে হবে সেই বিষয় নিয়ে যে কাজ শুরু করে। বর্তমানে সব কিছুই অনেক চ্যালেঞ্জিং। যদি স্টুডেন্ট জীবন থেকে কেউ কাজ শুরু করতে পারেন তাহলে সাফল্য অর্জন করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না।

ভবিষ্যতে তিনি একটি বড় কারখানা তৈরি করতে চান। যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এছাড়াও  মুল্কজাদে আরো সূক্ষ্ম এবং কোয়ালিটি মানের পণ্য তৈরি করবে যাতে দ্বিতীয় কোন জায়গায় এমন  পণ্য না পাওয়া যায়।

মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here