মায়ের দেয়া ৩০০ টাকাই উদ্যোক্তা জীবনের আশীর্বাদ

0
উদ্যোক্তা উম্মে কুলসুম

উদ্যোক্তা উম্মে কুলসুম পাশিয়া ওরফে পিউলি হক। বাস করেন রাজশাহী শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া গ্রামে। বাড়িতে বসে আড্ডা- গল্পের মাঝে চাচির কাছ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় শিখেছিলেন কুশিকাটার কাজ। আজ তার প্রতিষ্ঠান ক্রাফট ক্রিয়েশন আর্ট যেন কুশিকাটায় বোনা এক রঙিন সাম্রাজ্য।

ছোট্ট সোনামণিদের ফ্রক, টুপি, সোয়েটার– কী নেই ক্রাফট ক্রিয়েশন আর্টে! ঘর সাজাতে কুশন কভার, টেবিল রানার কিংবা ম্যাট; তাও মিলবে এখানে। শুধু কুশিকাটার পণ্য নয়, আরও আছে হলুদের গহনা। সম্প্রতি হ্যান্ডপেইন্ট পোশাকও যুক্ত করেছেন পণ্য তালিকায়।

উদ্যোক্তা উম্মে কুলসুম বলেন, “চাচির থেকে কুশিকাটা কাজ শিখেছিলাম। এরপর আমরা চারজন মিলে ২০১৯ এর শেষ দিকে উদ্যোক্তা জীবনে আসি। কুশিকাটার বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমরা তৈরি করতাম। একসময় আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে এককভাবে উদ্যোগ  এগিয়ে নিয়ে যাবো। পরবর্তীতে ২০২১ সালের শুরুর দিকে ক্রাফট ক্রিয়েশন আর্ট এর পথচলা শুরু। মায়ের কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে আমি উদ্যোক্তা জীবনে আসি। আজ আমার প্রতিষ্ঠানে কুশিকাটার যাবতীয় পণ্য তৈরি হচ্ছে। এমনও হয়েছে আমার অনেক ক্রেতা ৭/৮ বার পণ্য নিয়েছেন। এত অল্প সময়ে আমার ৯০ শতাংশ রিপিট কাস্টমার। যিনি এই পণ্যগুলো নিচ্ছেন তিনি আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে গল্প করলে তারাও অর্ডার করেন। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে আমার ক্রাফট ক্রিয়েশন আর্ট।”

বাচ্চাদের কুশিকাটার নেক, কুশিকাটার হাফ বডি, জুতা, ব্যাগ, নামাজের টুপি, মাস্ক এডাপ্টরসহ যাবতীয় কুশিকাটা পণ্য রয়েছে  ক্রাফট ক্রিয়েশন আর্ট-এ। সে সঙ্গে মিলবে কুশন কভার, ম্যাট, টেবিল রানার এবং হ্যান্ডপেইন্ট মাস্ক ও পাঞ্জাবি। নিজের পছন্দসই রঙ আর নকশায় করিয়ে নেওয়া যায় কাস্টমাইজড পণ্য। সাইজ এবং ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে পণ্যের  দাম। এখানে ৫০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা মূল্যের পণ্য রয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে পিউলি হকের পণ্য  পৌঁছে যাচ্ছে। মফস্বল এলাকায় বাস করলেও কাছাকাছি কুরিয়ার অফিস থাকায় সারাদেশে পণ্য ডেলিভারি করতে খুব একটা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় না।

পিউলি হক মূলত খুচরায় পণ্য বিক্রয় করেন। তবে বেশ কয়েকবার তার কুশিকাটার নেক, মাস্ক এডাপ্টর, হাফ বডি এগুলো পাইকারি অর্ডার পেয়েছেন এবং ভালোভাবে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হয়েছেন। উদ্যোক্তা এখন পর্যন্ত নিজেই সবটা সামলাচ্ছেন, তবে পাইকারি অর্ডার বেশি থাকলে তার বোনেরা তাকে সাহায্য করেন।

তিনি বললেন, অনেক নারীই শখের কাজগুলোকে তেমন একটা মূল্য দেন না। সেলাই, কুশিকাটা কিংবা অন্য কোনো কাজ পারলেও একসময় অলসতা বা ব্যস্ততায় আর করেন না। পিউলি হক চান তার কাজগুলো দেখে অন্য নারীরা উৎসাহী হোক, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখুক। ইতোমধ্যে তার গ্রামের কয়েকজনকে কাজ শেখার আহবানও জানিয়েছেন তিনি।

উদ্যোক্তা পিউলি হক পুঠিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। আগামীতে উদ্যোগের পরিসর বাড়িয়ে তার গ্রামের অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান। ভিন্ন ডিজাইনের একটি রেস্তোরাঁও গড়তে চান এলাকায়।

পরিবারের সমর্থন, কাজের প্রতি ভালোবাসা  এবং পরিশ্রম দিয়ে সাফল্য স্পর্শ করেছেন পুঠিয়ার এই তরুণী। কুরুশ-কাটায় গেঁথে চলেছেন তার স্বপ্ন।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here