মালদ্বীপের আদলে সাজছে সেন্টমার্টিন

0

কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই পর্যটন নগরীতে অন্তত ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বিশেষ করে মালদ্বীপের আদলে সাজানো হচ্ছে সেন্টমার্টিনের প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্র। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন পর্যটন শিল্পের টেকসই বিকাশ নিশ্চিত হবে অন্যদিকে আধুনিক নগরী হয়ে উঠবে কক্সবাজার। সেইসঙ্গে সারা বছর ঢল নামবে দেশি-বিদেশি পর্যটকের। অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা, গতি আসবে স্থানীয়দের জীবনযাত্রায়। নিশ্চিত হবে জীবনমানের উন্নয়ন।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ, সোনাদিয়াকে বিশেষ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, ইনানী সৈকতের উন্নয়ন, টেকনাফের সাবরায়েং ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ, শামলাপুর সৈকতের উন্নয়ন, চকরিয়ায় মিনি সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক আধুনিকায়নসহ অন্তত ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে সেন্টমার্টিনকে সাজানো হচ্ছে মালদ্বীপের আদলে। ভ্রমণের জন্য সেন্টমার্টিনে নামবে সি-প্লেন। কক্সবাজার-মহেশখালী ও টেকনাফে চলবে ক্যাবল কার। এগুলোকে সমন্বয় করতে চলছে নানা উন্নয়নকাজ। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে এই পর্যটন নগরী।

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প

দেশের প্রথম সমুদ্রবক্ষের ওপর নির্মিতব্য কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরে শেষের দিকে আন্তর্জাতিকভাবে বিমান ওঠানামা করবে। রানওয়ের দৈর্ঘ্য  ১০ হাজার ৭০০ ফুট, যা হবে দেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সহজ যাতায়াতের জন্য এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

দেশের প্রথম বিশেষায়িত ট্যুরিজম পার্ক

দেশের প্রথম বিশেষায়িত ট্যুরিজম পার্কটি নির্মিত হচ্ছে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে। এর নাম সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ করেই এটি তৈরি করা হচ্ছে। সাবরাং এলাকার পর্যটন অঞ্চলটিকে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৫ ফুট উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে আইকোনিক ফটো কর্নার উদ্বোধন করা হয়েছে। ৩০ শতাংশ জায়গায় গড়ে উঠছে তারকা মানের হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ। ৩০ একর জায়গায় করা হচ্ছে শপিং সেন্টার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, এমপি থিয়েটার ও কনভেনশন হল এবং এমিউজমেন্ট পার্ক। ২০ একর জায়গায় হচ্ছে প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। ২৬ একর জায়গায় পয়োবর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট, কঠিন বর্জ্য ও ই-বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট, পাওয়ার প্ল্যান্ট, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, পানি পরিশোধন ও সংরক্ষণাগার, সোলার প্ল্যান্ট এবং বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করা হচ্ছে। ১৩ একর জায়গায় ওয়েলফেয়ার সেন্টার, আট একর জায়গায় বাস ডিপো, ট্রান্সপোর্টেশন হাব, হ্যালিপ্যাড এবং জেটি স্থাপন করা হবে। ৫৪ একর জায়গায় হাঁটার পথ এবং বাইসাইকেল লেন করা হবে। ৫২৮ একর জায়গায় ঝাউগাছ লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ট্যুরিজম পার্কটির কাজ শেষ করার আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

জালিয়ার দ্বীপে এক্সক্লুসিভ নাফ ট্যুরিজম পার্ক

টেকনাফের নাফ নদের বুকে জেগে উঠা জালিয়ার দ্বীপে গড়ে উঠছে এক্সক্লুসিভ নাফ ট্যুরিজম পার্ক। পার্কটি বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য কেবল কার, প্যারা সেইলিং, স্কুবা ডাইভিং, সি-ক্রুসিংসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। এর উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। কাজ শেষ হলে এখানে বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প

কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক চারলেন করার পাশাপাশি নির্মাণ করা হচ্ছে রেললাইন। ইতিমধ্যে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অক্টোবরের যেকোনো সময়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ইতিমধ্যে ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের ৯৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি পাঁচ কিলোমিটার রেললাইন অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে। ইতোমধ্যে ট্রেন চলাচলের জন্য পটিয়া স্টেশনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ছয়টি বগি ও দুই হাজার ২০০ সিরিজের একটি ইঞ্জিন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করবেন। এর মধ্য দিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সহজেই যেতে পারবেন পর্যটকরা।

দেশি-বিদেশি পর্যটক টানতে কক্সবাজারে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানালেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের নানা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সি-প্লেন ও ক্যাবল কার। যা পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করবে। পর্যটনসেবার মানও উন্নত হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দৃষ্টিনন্দন হবে পর্যটন নগরী। পর্যটকের সমাগম বাড়বে কয়েকগুণ।’

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যুক্ত হচ্ছে সি-প্লেন

পর্যটন শিল্পের টেকসই বিকাশ নিশ্চিত করতে কক্সবাজারে অনেকগুলো মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার। তিনি বলেন, ‘পর্যটন নগরীকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হচ্ছে। পর্যটনের উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এতে যুক্ত হচ্ছে সি-প্লেন। কক্সবাজার-মহেশখালী এবং টেকনাফে ক্যাবল কার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সারা বছর সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন পর্যটকরা। এ ছাড়া সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে আন্ডার সি অ্যাকুরিয়াম, সার্কুলার বাস টার্মিনাল, মেরিনা বে-রিসোর্ট, খুরুশকুল স্মার্ট সিটি, থিম পার্ক, ইকো রিসোর্ট, চৌফলদন্ডীতে রিভাররেইন ট্যুরিজমের কাজ চলছে। আশা করছি, এখানে সারা বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকরা থাকবেন।’

সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশের ভারসাম্য মেনে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কাজ চলছে বলে জানালেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বিদেশি পর্যটক টানতে মূলত এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।’

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here