উদ্যোক্তা- শান্তি রঞ্জন সরকার

পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার মধ্যে বড় হয় একটি পথশিশু। শিশু হলেও থাকে না তাদের শৈশব। নিষ্ঠুর নিয়তির কড়াল গ্রাসে বন্দী তারা। কেউ কি চায় তাদের এ বন্দী দশা থেকে মুক্তি দিতে? সাম্প্রতি অনেক সংস্থা এসব পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে। তেমনই একটা প্রজেক্টে কর্মরত ছিলেন শান্তি রঞ্জন সরকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে চাকরি জীবনে পা রাখেন তিনি। অন্য চাকরির সুযোগ থাকলেও তিনি পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন প্রজেক্টে যোগদান করলেন।ফান্ড ভিত্তিক এসব প্রকল্প বেশী দিন স্থায়ী হয়না শুরু হয় অন্য প্রকল্পের কাজ। কিছুটা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এসব পথশিশু আবার ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তখন থেকেই শান্তি রঞ্জন সরকারের মনে হতে শুরু হয় এই পথশিশু গুলোকে একটা নির্দিষ্ট পরিচয় দিতে একটা নির্দিষ্ট কর্ম দিতে। সেই ভাবনা থেকেই কিছু দিন পর চাকরিটা ছেড়ে দেন। পুরো সময় দিয়ে কাজ শুরু করেন পথশিশুদের নিয়ে। বিশেষ করে যারা শারিরীক প্রতিবন্ধী তাদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেন।যাত্রা শুরু হয় ‘ইকোবাংলা’র। চারটি মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে এগিয়ে চলে ইকোবাংলা।যেগুলো হচ্ছে, এমন পণ্য তৈরী না করা যেগুলো দেশ, পরিবেশ বা মানুষের ক্ষতিসাধন করে।প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কোমলমতি শিশুদের পরিবেশ বান্ধব পণ্য সম্পর্কে সচেতন করা।পিছিয়ে পরা নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং ন্যায্য মজুরি প্রদান। ইকোবাংলার সকল পণ্য তৈরী করেন একঝাঁক পথশিশু যারা এখন প্রাপ্তবয়স্ক, যাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার দুই শিক্ষার্থী। পণ্যের নতুনত্ব, ডিজাইন এবং দামের সাথে পণ্যের মানের বিষয়গুলো দেখেন তারা।শান্তি রঞ্জন সরকারের পুরো উদ্যোগটি একা পরিচালনা করতে হিমসিম খেতে হয়। তাই তিনি তার আপন ভ্রাতৃপত্নীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেন। ৫জন মিলেই এখন উদ্যোগটি পরিচালনা করছেন। মুলত ভালোবাসা, মনুষ্যত্ববোধ থেকেই তারা এই ব্যবসাটি পরিচালনা করছেন যেখানে অর্থ উপার্জন মূখ্য নয়। ৩ বছর পেরিয়েছে তাদের উদ্যোগ, উদ্যোগ থেকে যা উপার্জন হয় তার নির্দিষ্ট একটা পরিমাণ সেই পথশিশুদের জন্য বরাদ্দ থাকে।শান্তি রঞ্জন সরকারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আগামী এক বছর সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে শারিরীক ভাবে অক্ষম এমন কিছু সুবিধাবঞ্চিত মানুষ বেড় করা, যাদের কেউ কাজ দেয়না । তাদের বিষেশ ভাবে ট্রেনিং দিয়ে কাজ দেয়া। তাদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কারণ বাংলাদেশে অনেক প্রাকৃতিক রিসোর্স আছে যার খুব কম আমরা ব্যবহার করছি, এই রিসোর্স গুলো পরিপূর্ণ ভাবে ব্যবহার করতে চাই এবং এই ইকোবাংলার সকল কর্মী হবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। শান্তি রঞ্জন আবেগে আপ্লুত হয়ে আরও বলেন, “সেদিনের সেই ছোট্ট শিশুগুলো আজ প্রাপ্ত বয়স্ক, তারা সবাই একেকজন শিল্পী”। সুন্দর সুন্দর কিছু চিত্র দেখিয়ে বলেন এগুলো তাদের আঁকা। আমি চাই এরা অনেক দূর এগিয়ে যাক, এদের হাত ধরে ইকোবাংলা পরিচিতি পাক দেশে- বিদেশে।গৃহসজ্জা থেকে বিভিন্ন দেয়াল চিত্র, অলংকার, দৈনন্দিন ব্যবহার সামগ্রী, ফেলে দেয়া আবর্জনা থেকে সো-পিচ সহ শতাধিক পণ্য নিয়ে কাজ করছেন শান্তি রঞ্জন পরিবার। এখনও কোন আউটলেট নেই তবে খুব শীঘ্রই হবে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। তবে পুরোদমে অনলাইনে ব্যবসার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করে দারুণ সাড়া পেয়েছেন।

 

 

 

 

 

 

 

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here