উদ্যোক্তা- মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল

বংশগত ঐতিহ্য রক্ষা নাকি সেই ব্যবসা কেবলই পেশা? কতদিনের ব্যবসা তার নির্দিষ্ট কোনো সময় বলা প্রায় অসম্ভব। পাল সম্প্রদায় সাড়ে চারশ বছর রাজত্ব করেছে একসময় তারই অংশ আমরা বললেন বসন্তপুরের মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা বাপ-দাদার শেকড়ের টান আর পূর্বপুরুষের ব্যবসাকে লালন করে চলেছেন তারা।

মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল বলেন, “আমাদের পরিবারের সদস্যরাই আমাদের কর্মী। বিলুপ্তপ্রায় মাটির শখের হাড়িকে ভালোবেসে কাজ করি। নিত্যদিনের জীবিকানির্বাহ হয় না, তবুও দেশীয় ঐতিহ্য ছাড়া বাঁচিনা বলেই শক্ত হয়ে আজও হাল ধরে আছি”। ‘দেখাদেখি চাষ, দেখাদেখি বাস’ বলেই বিশ্বাস করেন মৃত্যুঞ্জয়। তাই জানা নেই ঠিক কতবছর বয়স থেকে বাবার কাজে হাত লাগিয়েছেন তিনি। রং-তুলি ছিল ছেলেবেলার অনুসঙ্গ। প্রশিক্ষন বলতে পেয়েছেন একটিই জিনিস, চোখের দেখায় বাবা-দাদার কাজ।

মাটি নিয়ে আজকাল অনেকেই কাজ করেন। কিন্তু শখের হাড়ি নিয়ে কাজ একমাত্র আমরাই করি। আমাদের কাছে উৎসব, মেলা বা পার্বন মানেই নানান রঙের, নানান সাইজের শখের হাড়ি। মেলা ছাড়া শখের হাড়ির বিক্রি তেমন নেই। বিক্রি তেমন না থাকলেও কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হবার আগ্রহ কখনই জাগে না। প্রয়োজনে নিজেদের জমিতে কৃষিকাজ করে নিজেদের জীবনের চাহিদা মেটান পুরো পরিবার।

নিজেকে কি শিল্পী মনে করেন? উত্তরে মৃত্যুঞ্জয় জানালেন, “শিল্পী অনেক বড় ব্যক্তিত্ব, আমি কেবল রঙ-তুলির কারিগর।” কাজের জন্য সবসময় পাশে পেয়েছেন বিসিক অর্থাৎ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে। বিসিকের বিভিন্ন মেলায় শখের হাড়ি নির্মাতাকে স্টল সরবরাহ করে থাকেন বিনামূল্যেই। এজন্য কৃতজ্ঞ বিসিকের কাছে।

ইদানিং আফসোস কেবল একটিই। মাটির কাজের জন্য যে বিশেষ এঁটেল মাটির প্রয়োজন তা তারা পাচ্ছেন না। নদীর ধারের মাটি কাটতে দেন না এলাকার প্রভাবশালীরা। আবার মাটি কেটে ফসলি জমিতে রূপান্তরের ফলেও মাটি সংকটে আছেন এই কারিগর উদ্যোক্তারা। এই পুরনো ঐতিহ্য যাতে মাটির অভাবে হারিয়ে না যায় সে বিষয়ে সরাসরি সরকারের সহযোগিতা চান মৃত্যুঞ্জয় কুমার পালরা।

 

 

সাদিয়া সূচনা 
ছবি- বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here