মাই ডে তে ছবি দিয়ে ২০ বোতলের প্রথম অর্ডার

0
উদ্যোক্তা ফৌজিয়া আক্তার জিসা

রাজশাহীর জনপ্রিয় একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান সীন ফ্যাশন। উদ্যোক্তা ফৌজিয়া আক্তার জিসা ২০১৪ সালে এর সূচনা করেন। এখানে আছে উদ্যোক্তার নিজস্ব ডিজাইনের ড্রেস এবং হোমমেইড অর্গানিক হেয়ার অয়েল।

উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য জিসা যখন কলেজে ভর্তি হলেন তখন থেকেই নিজস্ব ডিজাইনে ড্রেস তৈরি করাতেন। সেগুলো অনেকের নজর কাড়তো। প্রশংসাও কুড়াতেন।

পরবর্তীতে ভার্সিটি লাইফে একটি প্রতিষ্ঠানে জব নেন জিসা। কিছুদিন না যেতেই তিনি উপলব্ধি করেন নিয়মিত চারদেয়ালের মাঝে এতো সময় অতিবাহিত করা তার জন্য কষ্টকর। তখন তিনি চিন্তা করলেন, ‘আমি যেটা পারি, আমি সেটি নিয়েই কাজ করবো।’ যেই ভাবনা, সেই কাজ। তিনমাস পরই চাকরি থেকে বের হয়ে ১০ হাজার মূলধন নিয়ে অনলাইনে ‘সীন ফ্যাশন’ নামে নিজের প্রতিষ্ঠান চালু করেন ফৌজিয়া আক্তার জিসা। ঈদের কয়েকদিন আগে হওয়ায় প্রথম পোস্টেই বেশ সাড়া পেলেন। দু-তিনদের মধ্যে ১২টি ড্রেস সেল হয়ে গেলো। এতে আত্মবিশ্বাস পেলেন অনেক।

বিভিন্ন ধরনের ড্রেসের পাশাপাশি সীন ফ্যাশনে ২০২১ সালে যুক্ত হয় ‘সীন হোমমেইড অর্গানিক হেয়ার অয়েল’ যা এখন সীন ফ্যাশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সিগনেচার প্রোডাক্ট। নারকেল তেল, কালোজিরা, মেথি, অ্যালোভেরা, গোলাপের পাঁপড়ি, জয়তুন, জবাসহ বিভিন্ন ধরনের হার্বস দিয়ে তৈরি হচ্ছে এই হেয়ার অয়েল।  বেশিরভাগ হার্বস সংগ্রহ করা হয় তাদের নিজস্ব বাগান থেকে। উদ্যোক্তা জিসার এই হেয়ার অয়েলের ক্রেতা রাজশাহী তো বটেই, এর বাইরে নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, পার্বতীপুরসহ দেশের অনেক জেলায় এই হেয়ার অয়েলের নিয়মিত ক্রেতা রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে অসংখ্যবার সীন ফ্যাশনের হেয়ার অয়েল গেছে। সেখানেও বেশ সমাদৃত এটি।

উদ্যোক্তা বার্তাকে ফৌজিয়া আক্তার জিসা বলেন, ” সীন ফ্যাশন ধীরে-ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। রাজশাহীর পাশাপাশি অসংখ্য জেলায় নিয়মিত আমি পণ্য পাঠাচ্ছি। ছোটবেলা থেকেই আমার চুল বেশ বড় এবং ঘন ছিল। ফ্যামিলিগত ভাবেই আমি সুন্দর চুল পেয়েছি। হঠাৎ ২০১৯ এর দিকে আমার চুল উঠে যেতে থাকে। সেসময় বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ি। তারপর বাসার বাগান থেকে জবা, অ্যালোভেরা, মেহেদীপাতা ইত্যাদি উপকরণ সংগ্রহ করে তেল বানিয়ে ব্যবহার করতে থাকি। ধীরে-ধীরে ফলও পেতে শুরু করি। এরপর আমার বোনেরা তেলটি ব্যবহার করে।এভাবে দুই বছর কাটে। আমার চুল আগের থেকে আরো আকর্ষণীয় হওয়ায় ফ্রেন্ডরা জিজ্ঞেস করতে থাকে কী ব্যবহার করছি চুলে। তখন আমি এই তেলের কথা বলতাম। তারা চাইলে তাদের তৈরি করেও দিতাম। ভালো ফলাফল পেয়ে তারা আমাকে বললো, এভাবে আমাদের না দিয়ে তুমি এটাকে তোমার প্রতিষ্ঠানে নতুন পণ্য হিসেবে যুক্ত করো৷ আমি তখন বিষয়টা সিরিয়াসলি নেইনি। পরে একদিন ফেসবুকে আমি ডে দিলাম। ডে দিতেই ২০ বোতল তেলের অর্ডার। এভাবেই রাজশাহী থেকে সারা দেশে আমার হেয়ার অয়েল ছড়িয়ে যাচ্ছে।”

শুরু থেকেই পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছেন। তার বোনেরা সকল কাজে সবসময় তার সাথে আছে, পাশে আছে। তার হাসবেন্ডও সবসময় তাকে সাহস দেন। তিনি আরো বলেন,”আমি যদি আশেপাশের লোকের কথা বলি, অনেকেই দূর্বল করার চেষ্টা করলেও আমার পুরো পরিবার সবসময় আমার পাশে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে আমি স্বাধীনভাবে আমার উদ্যোগ পরিচালনা করতে পারি।”

উদ্যোক্তা ফৌজিয়া আক্তার জিসা রাজশাহীর প্রথম গার্লস গ্রুপ দ্যা টেলস অফ সেনোরিটাজ এর এডমিন হিসেবেও রয়েছেন। জিসার ফ্রেন্ড নাহার সুলতানা সুরভি গ্রুপটি চালু করেছেন। বর্তমানে গ্রুপটিতে ৭ হাজার ৯০০ মেম্বার। তাদের মধ্যে অসংখ্য উদ্যোক্তাও রয়েছে। জিসার উদ্যোক্তা জীবনেও বড় ভূমিকা রাখছে গ্রুপটি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা ফৌজিয়া আক্তার জিসা বলেন: আমার অনেক ক্রেতার ডিমান্ড রাখতেই আমার হেয়ার অয়েল তৈরির কারখানা গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কেননা অর্ডার দিন-দিন বাড়ছে। ক্রেতারা হেয়ার প্যাক, ফেস প্যাকও চাচ্ছেন। খুব শীঘ্রই ফেস প্যাক লঞ্চ করবো। এছাড়াও আমি যেহেতু নিজস্ব ডিজাইনের ড্রেস তৈরির পাশাপাশি কাস্টমাইজ জুয়েলারি তৈরি করি, সেজন্য একটি স্টুডিও বুটিক খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

জিসার সাথে বর্তমানে অস্থায়ী ৩ জন সহযোদ্ধা কাজ করছেন। শিক্ষানগরী রাজশাহীতে যে স্টুডেন্টরা আসে তারা যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি হাত খরচটা চালিয়ে নিতে পারে, সেজস্য সহযোদ্ধা বাছাইয়ে স্টুডেন্টদের নেওয়ার চেষ্টা করেন। আগামীতে আরো অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইচ্ছে রয়েছে এই উদ্যোক্তার।

জিসার শৈশব-কৈশোর পুরোটা সময়ই কেটেছে রাজশাহী নগরীতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে এমবিএ করেছেন এই উদ্যোক্তা।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here