বেতনভুক্ত কর্মী নেই, নিজের পরিশ্রমেই এগিয়ে চলছেন ত্রয়ী

0

নিরামিষ হোক বা আমিষ, সঙ্গে একটু আচার না থাকলে মুখে খাবার রোচে না অনেকেরই। আচারের প্রকারভেদও তো কিছু কম নয়। কুলের আচার, আমের আচার, লেবুর আচার থেকে শুরু করে মাছ আর মাংসের আচারও হয়।

আসলে তেল আর মশলা দিয়ে জনপ্রিয় এই সম্পূরক খাবার প্রচলনের ইতিহাস প্রায় চার হাজার পাঁচশ বছরের পুরোনো। ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার সময় থেকে মানুষ আচার খাওয়া শুরু করে।

আচার বানানো কতোটা কষ্ট তা আমরা সবাই জানি। এরপরেও কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই দিনের পর দিন আচার বানিয়ে সবার সামনে উপস্থাপন করছেন ত্রয়ী ইসলাম। খুলনা শহরে জন্ম নেওয়া উদ্যোক্তা ত্রয়ী ইসলাম ৪ বছর বয়সে ঢাকা চলে আসেন৷ বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। খুলনার হলি চাইল্ড স্কুল থেকে পড়ালেখা শুরু এবং সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশলান ইউনিভার্সিটিতে পড়া শেষ করেন। বেড়ে ওঠায় তার শিক্ষকদের ভূমিকা অসামান্য। শিক্ষকরা তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন বলে জানান উদ্যোক্তা ত্রয়ী।

ছোটবেলা থেকে সাংস্কৃতিক বলয়ে বেড়ে উঠেছেন। থিয়েটার, নাচ, গান, উপস্থাপনা, আবৃত্তি এইগুলো নিজের অজান্তে তার সত্ত্বাকে প্রসারিত করেছে।এর মধ্যেই বার বার নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। কখনো ফ্রিল্যান্সিং, কখনো কর্পোরেট৷ উল্লেখযোগ্য টিভি চ্যানেলগুলোতে কাজ করেছেন উপস্থাপিকা হিসাবে। এরপর দীর্ঘদিন ফ্রিল্যান্সিং করেছেন ক্যামেরার পিছনে। চাকরি করেছেন সনামধন্য এজেন্সিতে ক্লায়েন্ট সার্ভিস এক্সিকিউটিভ হিসেবে। সেটা একটা আলাদা চার্ম।

উদ্যোক্তা হওয়ার ভাবনাটা তিনি যখন শেষ চাকরি এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার হিসেবে ছিলেন সেখান থেকে অনুভব করেন। স্বজনপ্রীতির টানে সিকিউর জব ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে জয়েন করেন। তার দুই মাসের মধ্যে লকডাউন পড়ে যায়। এরপর চাকরিচ্যুত হন তিনি।

ত্রয়ী গল্পটি স্বল্প ভাষায় বলেন, শুরুটা ২০১৭ তে, আমার প্রথম সন্তান যখন আসার অপেক্ষায়। তখন আমি পার্শ্ববর্তী দেশের ক্লোথিং নিয়ে কাজ করতাম। মা হওয়ার পর তাতে ভাটা পড়ে। প্যান্ডামিকে শ্বশুরের ইচ্ছায় কিছু খাদ্য পণ্য ঠোঙায় তোলা হয়। সেটাই ছিলো একটা মাইলফলক। আস্তে আস্তে বিভিন্ন পণ্য যুক্ত হতে থাকে মানুষের ভালোবাসায় আর গ্রহণযোগ্যতায়। এরপর আর থামতে পারিনি, ক্লান্ত হয়েছি কিন্তু ভালোবাসার তাড়নায় চালিয়ে গিয়েছি।

ত্রয়ী বলেন, আসলে ভালো পণ্য নিয়ে কাজ করলে কাজ সহজ হয়ে যায়। টাকার জন্য কাজ আটকায় না। ভালো পণ্য নিয়ে তারাই কাজ করে যারা ভালো এবং সৎ মনের মানুষ। আমি বাদে যারা আমাদের সোর্স হিসেবে কাজ করে তারা পরিশ্রমী এবং সৎ। সবার চেষ্টায় এবং সহযোগিতায় আজ ঠোঙা৷ সবাইকে আমার শুভাশীষ এবং সম্মান।

তিনি ২০টি পণ্য তৈরি করেন বলে জানান। মৌসুম অনু্যায়ী পণ্য বদলে যায়। কিছু পণ্য নিয়মিত থাকে। যেমন : হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনিয়া, মশলা, মধু, সরিষার তেলসহ বিভিন্ন ধরণের পিওর চাল, ঘি এবং কিছু সংখ্যক আচার, পান মশলা, পাপড় ইত্যাদি। প্রি অর্ডারে পাওয়া যায় নাড়কেলের নাড়ু। শীতে পাওয়া যায় চালের গুড়া, খেঁজুরের গুড় আর এক্সক্লুসিভ খেঁজুরের রস। এটা তাদের সাড়া জাগানিয়া পণ্য। গরমে কিংবা রোজায় পাচ্ছেন খাটি বেসন, আঁখের গুড়, দেশী চিড়া আর কাঁচা আমের স্পেশাল আচার।

সিগনেচার পণ্য ঝালমুড়ি মশলা হিসেবে রেখেছেন। এসব পণ্যই তিনি বিক্রি করেন সামাজিক যোগাযোগের ‘ঠোঙা’ নামের পেজের মাধ্যমে।

ত্রয়ী বলেন, এখনো কোনো কর্মী নই। বাসাতেই আলাদা জায়গা করে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে সব কাজ গুছানো হয়। পেজে এবং গ্রুপে মডারেটর আছেন, গ্রাফিক্স ডিজাইনার আছেন, ডেলিভারি ম্যান আছেন, এরাও আমার পরিবার বলতে গেলে। তাছাড়া আমার পুরো পরিবারের ৫ জন সদস্য ওতোপ্রোতভাবে ঠোঙার নিবেদিত প্রাণ। তাই আর এখনো অন্য কাউকে লাগে না। কালেকশন, প্যাকেজিং, শপিং, কুকিং সব নিজেদের হাতেই হয়। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে কর্মী নিয়ে নিজেরা হালকা হব এবং আরো কিছু মানুষকে পরিবারের সদস্য বানিয়ে নেব।

নতুনদের উদ্দেশে ত্রয়ী ইসলাম বলেন, যে কোন কর্মে কনফিডেন্স আর রিস্ক নেয়ার মানসিক শক্তি থাকা জরুরি। তা না হলে কোন দিন আগানো যায় না। সবার পথ মন্থর। মন্থর পথ একদিন মসৃণ হয়ে যায়। যদি সৎ থাকা যায় আর ধৈর্য ধরা যায়।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here