উদ্যোক্তা মোহাম্মদ গাজী তৌহিদুর রহমান

বিস্কুট। বাংলাদেশের অতি পরিচিত একটি খাবার। অতিপরিচিত এই খাবারটির বাজারজাত করণের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে উদ্যোক্তা তৌহিদুর রহমানের হাত ধরে। তার নিজ হাতে গড়ে তোলা এফ এম প্লাস্টিক ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেড বিস্কুট ট্রে বানিয়ে সারা ফেলে দিয়েছে। মান সম্মত প্লাস্টিক পণ্য তৈরির পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে অবদান রাখছেন দেশের অর্থনৈতির অগ্রযাত্রায়। এই উদ্যোক্তার একমাত্র লক্ষ তার প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য দেশের অন্যতম সেরা ব্র্যান্ডে পরিনত করা।

এফ এম প্লাস্টিকের এমন পথ চলার বিষয়ে উদ্যোক্তা মোহাম্মদ গাজী তৌহিদুর রহমান বলেন, এফএম প্লাস্টিকের উৎপাদিত পণ্যে গুণগতমান, দাম, প্রতিষ্ঠানের সেবা দিয়ে সর্বদা সন্তুষ্ট করতে বধ্যপরিকর। এফ এম পরিবারের তৈরী পণ্যের মধ্যে আছে অনটাইম প্লেট, কাপ, ফুড ট্রেবক্স, বিস্কিট ট্রে, লাঞ্চ বক্স ইত্যাদি। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন ধরনের ব্লিস্টার প্যাকেজিং নিয়ে কাজ করে থাকি।

করোনার সময়ে এফএম প্রাস্টিক দেশের মানুষের জন্য অন্যতম প্রয়োজনিয় মেডিকেল সামগ্রী সার্জিক্যাল মাস্ক তৈরি করেছে। তাদের উৎপাদিত আধুনিক সার্জিক্যাল মাস্ক দেশ ও বিদেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, আমরা যে মাস্ক উৎপাদন করেছি তা দিয়ে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করেছি। আমাদের উৎপাদিত মাস্ক ডিজিডিএ ও সিই স্বীকৃত। বর্তমানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

উদ্যোক্তা তৌহিদুর রহমানের উৎপাদিত বিস্কুট ট্রে বেশ সারা ফেলেছে। তার এমন অভিনব উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ফুড প্যাকেজিং নিয়ে কাজ করি। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিস্কুটের ট্রে এর বিশাল একটি অংশ আমরা সরবরাহ করে থাকি।বর্তমানে আমরা এ অবস্থান ধরে রাখার জন্য পণ্যের মান উন্নয়নের কাজ করছি।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সফট কেকের প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রেও ব্যপক পরিমান প্লাস্টিক ট্রে ব্যবহারের শুরু হয়েছে। বর্তমানে সনাতন পদ্ধতিতে এসব ট্রে তৈরির ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ হাতের ছোঁয়া লাগছে। ফলে ট্রের গায়ে যুক্ত হচ্ছে ধুলাবালু।করোনাকালে হাতের ছোঁয়ার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমরা এই ঝুঁকি মুক্ত পণ্য তৈরির জন্য এফএম কালের মধ্যেও সম্পুর্ন অটোমেটিক মেশিনে নিয়ে এসেছে।যার সাহায্যে কোনো ধরনের হাতের ছোঁয়া ছাড়াই পণ্য উৎপাদন করতে পারছে। এফ এম পরিবার স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে কোন রকম কম্প্রোমাইজ করবে না। আর তাই তো গুণমান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে টিকে তাকার জন্য সময়ের চাহিদা অনুযায়ী নতুন পণ্য বাজারজাত করে আসছে।এর এভাবেই নিজেকে বাজারে প্রতিষ্ঠিত করেছে এফএম প্লাস্টিক। আমাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য অলিম্পিক, প্রাণ, রোমানিয়া, ডেনিশ, হক, এসিআইসহ দেশের নাম করা প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করে আসচে।

শত শ্রমিকের এই স্বপ্ন দ্রষ্টা পণ্যের মান বজায় রাখতে যেমন নজর রাখেন তেমনি তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ভাগ্য উন্নয়নের দিকেও নজর রাখছেন। করোনা মহামারির মধ্যে যেখানে বহু প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের ছাটাই করেছে সেখানে তার কর্মীদের বসিয়ে রেখেও বেতন ভাতা চালু রেখেছেন। এছাড়া শ্রমিকদের কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদানের জন্য ফ্যামিলি ডে আয়োজন করেছেন। যেখানে শ্রমিকরা নিজের মতো করে একটি দিন আনন্দে কাটিয়েছেন।

সেদিন তার প্রতিষ্ঠানের কারখানায় একটা ঈদের আমেজ তৈরী হয়ে ছিল। বালিশ খেলা, বল নিক্ষেপ সহ নানান রকম খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এঅ খেলায় অংশনেন প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দিয়ে উঠে আসে অনেক সুরেলা কণ্ঠের গায়ক, কবি, লেখক, যা সকলকে রীতিমতো চমকে দেয়।

এই পর্বের আয়োজনে সারা বছরের কার্জক্রমের মুল্যায়ন করে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে প্রায় ৫৪ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়াও বর্ষসেরা কর্মী হিসেবে তিনজনের নাম ঘোষনা করা হয়। তাদেরকে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এর পাশাপাশি একটি করে বীমা করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় যাতে নির্দিস্ট সময় পর তাদের হাতে বড় পরিমানে টাকা আসে।

পরবর্তীতে শুরু হয় উম্মুক্ত আলোচনা পর্ব, যা ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মো: গাজী তৌহীদুর রহমান নিজে পরিচালনা করেন। তিনি সহযোদ্ধাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। পাশাপাশি উঠে আসে সুখ দু:খের বিভিন্ন রকম স্মৃতিচারণ। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাতক্ষনিক বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করার নির্দেশনা দেন। তাছাড়াও কর্মীদের ভবিষ্যত নিশ্চিন্তকরনে প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করার আশ্বাসপ্রদান করেন। প্রতিবছর দুই জনের জন্য শিক্ষা বৃত্তির ঘোষণা দেন। এছাড়া ক্যান্টিন, মেয়েদের জন্য রেস্টরুম ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

দিনটি ছিল এফ এম পরিবারের সদস্যদের জন্য অনুপ্রেরণার অন্যতম একটি দিন। দিন শেহে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে একে অপরের পাশে থেকে এক পরিবার, এক টিম হয়ে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেন।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here