বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছাচ্ছে উদ্যোক্তা স্বর্ণার পণ্য

0

সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় স্বর্ণার মনে হয় নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেই জোগাড় করবেন। বাসার খরচে তিনি আর পড়াশুনা করবেন না। জীবনে কিছু একটা করার তাগিদ সেখান থেকেই শুরু।

মনোয়ারা আক্তার স্বর্ণা এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জুলহাস মিয়া একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং মাতা জরিনা বেগম একজন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের সংসারে স্বর্ণা ছিলেন বড়। বাবার স্বল্প আয়ে পরিবারের খরচ নির্বাহ করে ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ ব্যয় করা ছিল কিছুটা কষ্টকর। স্বর্ণা বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন অল্প বয়সেই।

এসএসসি পাশের পর থেকেই নিজস্ব উদ্যোগে হস্ত ও কুটির শিল্প তৈরিকৃত পণ্য বিক্রি করে পরিবারের সহায়তা করতেন স্বর্ণা। শুরুটা বুটিকের কাজ দিয়ে হলেও নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ওয়েতে। ২০১৬ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর গাজীপুর হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন স্বর্ণা। স্বর্ণার কাজে সার্বক্ষণিক পাশে ছিলেন তার মা।

গাজীপুরের বিভিন্ন মার্কেটে এবং গার্মেন্টসে প্রোডাক্ট বিক্রি করেন স্বর্ণা। প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে 50000 টাকার ঋণ এবং আরও কিছু টাকা সংগ্রহ করে একটি বিউটি পার্লার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এতে করে তার অর্থনৈতিক উন্নতি আরো কিছুটা ত্বরান্বিত হয়। ধীরে ধীরে তার প্রতিষ্ঠান পরিচিতি এবং লাভ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

বিউটি পার্লার হতে অর্জিত লাভ অংশের টাকা দিয়ে তিনি অন্যান্য প্রকল্প গড়ে তোলেন। তার প্রকল্প গুলো হল স্বর্না-ঝর্ণা বিউটি পার্লার, কবুতর-পালন, বুটিক শপ, গরু মোটাতাজাকরণ, জে.এস মৌখামার, হ্যান্ডিক্রাফট, পাটের পণ্য, এবং স্বর্ণা কোম্পানি । বর্তমানে তার মূলধন ৩০ লক্ষ টাকার ওপরে। আর বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে ৩৫০ জন স্থায়ী অস্থায়ী কর্মী আছে। তার অনুপ্রেরণায় ও পরামর্শে স্থানীয় অনেক মানুষ আজ আত্মকর্মী হয়েছেন।

তিনি জানান, তার আজকের এই সফলতা একদিনে আসেনি। রাতদিন করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। এলাকার লোকজনের কাছে শুনতে হয়েছে নানা ধরনের নেগেটিভ কথা। কিন্তু সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন পজিটিভ অ্যাটিটিউড এবং আত্মবিশ্বাস দ্বারা। পরিস্থিতি অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করেছেন তিনি। অনেকের কাছে টাকা দিয়ে সময়মতো ফেরত পাননি তিনি। ধোকা খেয়েছেন বারবার। কিন্তু উদ্যোক্তা কখনোই পেছনে ফিরে তাকাননি! সব সময় সামনে এগিয়ে গেছেন। লক্ষ্য ছিলো সব সময় সামনে এগিয়ে যাবার। মনোবল ছিল অনেক বেশি ষ্ট্রং। শুরুর দিকে এলাকার যেসব লোকজন তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে কথা বলতো একসময় তারা এসেছে উদ্যোক্তার কাছে প্রশিক্ষণ নিতে। পূর্বের কোন কথা মনে রেখে তাদের ফিরিয়ে দেননি বরং তাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত, দিয়েছেন প্রশিক্ষণ, সাহায্য করেছেন তাদের কর্মে।

করোনার মহামারী সময়ে যখন পুরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো তখনও বসে থাকেননি এই পরিশ্রমী উদ্যোক্তা। গ্রাম পর্যায়ে কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে নিজের বাসায় বসে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে চালিয়ে গেছেন তার ব্যবসা নিজের দায়িত্বে ।

আত্মকর্মসংস্থানে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সফল এই আত্মকর্মী উদ্যোক্তা মনোয়ারা আক্তার স্বর্ণাকে 2021 জাতীয় যুব পুরস্কার প্রদান করা হয় ।

মার্জিয়া মৌ,
উদ্যোক্তা বার্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here