বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানসহ জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ

0

৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গভীর শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধায় রাজশাহীতে শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানসহ জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার নগরীতে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআন খতম, শোক র‌্যালি, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, মানবভোজসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর কাদিরগঞ্জে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিতে পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শহীদ কামারুজ্জামানপুত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন, পুত্রবধূ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী, দৌহিত্র আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক মো. রিজভী আহমেদ ভূঁইয়া।

জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বরে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিশাল শোক র‌্যালি, কাদিরগঞ্জে শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সহসভাপতি শাহীন আকতার রেনী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের  পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনীল কুমার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা।

জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে সকালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে নগর ভবন চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। সেসময় কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নগর ভবন থেকে বিশাল শোক র‌্যালি বের হয়ে কাদিরগঞ্জে শহীদ কামারুজ্জামানের সমাধিস্থলে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শহীদ কামারুজ্জামানের প্রতি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাসিকের কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। রাসিকের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল কালো ব্যাজ ধারণ, কোরআন খতম, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ খাবার বিতরণ, সকল মসজিদে দোয়া ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা, প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন, শোক সম্বলিত ব্যানার প্রদর্শন, কালো পতাকা উত্তোলন, প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের ভাষণ প্রচার।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের ঢাকায় বসবাসরত সকল সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা। একটিই কারণ সেটি হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়া এবং দেশকে আবার পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়া। এরই ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে আমরা দেখি, যখন খুনিচক্র বুঝতে পারে তাদের উদ্দেশ্য ওই মুহুর্তে বাস্তবায়িত হবে না তখন তারা দেশ ত্যাগ করার চিন্তাভাবনা করে। সেসময় ৩ নভেম্বর জেলখানায় বন্দি জাতীয় চারনেতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে সমাজের সকল রীতি-নীতি ভঙ্গ করে রাত্রিবেলায় জেলখানায় খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে অন্যদের পাঠানো হয় এবং তারা সেই জঘন্য হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। চার জাতীয় নেতা জীবনে ও মরণে বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন। এই বেদনাবিধুর দুটি ঘটনা বাংলাদেশকে হয়তোবা একেবারে শেষ করে দিতে পারতো, যদি না আমাদের মাঝে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের হাল না ধরতেন, ক্ষমতায় না আসতেন, তাহলে দেশ আজকের এই জায়গায় থাকতো না।

মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডগুলোর রায় পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। মানবাধিকারের কথা বলে কানাডা, আমেরিকা ইত্যাদি উন্নত দেশ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফেরত দিচ্ছে না, জাতীয় চার নেতার খুনিরাও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পলাতক আছে। তাদেরকেও ফেরত আনা যাচ্ছে না। ইত্যাদি নানা ঘটনায় এই বিচারের পথটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি সহসায় কাটবে বলে আমি আশা করি।

তিনি বলেন: ৩ নভেম্বরকে যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার যে আহ্বানটি এসেছে, আমি মনে করে দলের হাইকমান্ড এটি সুবিচেনায় নেবেন এবং এ বিষয়ে দ্রুতই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।

জেল হত্যা দিবসে সকাল থেকে রাজশাহীতে শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ঢল নামে।

ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here