উদ্যোক্তা আফরোজা আজিজ তাঁর কর্মীকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন

‘রঙ রেজিনী’ একটি নারীর স্বপ্নের নাম। ‘রঙ রেজিনী’র পথ চলা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে মাত্র ১০০ টাকা ও ৪ জন কর্মী নিয়ে। ছোটবেলা থেকেই ক্রিয়েটিভ কিছু করার চিন্তা ছিলো মাথায়। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত পোশাক শিল্পের সাথে জড়িয়ে পড়বেন উদ্যোক্তা আফরোজা আজিজ তা কখনো ভাবেননি।

পোশাকের মাপজোখ দেখছেন উদ্যোক্তা- আফরোজা আজিজ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অর্নাস ২য় বর্ষে পড়ুয়া ছাত্রীটি তখনো ঠিক জানতেন না বুটিক শিল্প নিয়ে কাজ করে অর্থ উর্পাজন করা বা মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই খুব সুক্ষভাবে জামায়  সেলাইয়ের কাজ করতেন পাশাপাশি বাসার অন্যান্য আসবাবপত্রের কাপড়েও ফুল আঁকতেন সুনিপুণভাবে।

বান্ধবীর উৎসাহ ও মাধ্যমে সর্বপ্রথম ১০টি পাঞ্জাবীর অর্ডার পেলেন। এভাবেই শুরু মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে সুতা ও ফ্রেমের কাজ।

উদ্যোক্তার শোরুম

তারপর ভাবলেন ৪/৫ জন প্রতিবেশী দুস্থ নারীকে যদি কাজ শিখিয়ে ওদের কোনো উপকারে আসা যায় তাহলে মন্দ হয় না। কিন্তু তাদের আগ্রহও তো থাকা চাই।
তাদের সাথে কথা বলে কাজ শুরু করলেন।

শুরুর দিকে অর্ডার নিয়ে কাজ করতেন। কারণ তখনো পড়াশোনা চলছিলো পাশাপাশি আর্থের যোগানও খুব সীমিত ছিলো। এক পর্যায়ে ব্যাংকের দ্বারস্থ হলেন আফরোজা আজিজ। কিন্তু ব্যাংক থেকে বিশেষ কোন সাহায্য এলো না।

ইচ্ছাশক্তি ও সফলতা দেখে তার বাবা তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সহযোগিতা করলেন। ধীরেধীরে ‘রঙ রেজিনী’কে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেন উদ্যোক্তা।

পোশাক সেলাই এর কাজে কর্মীকে সাহায্য করছেন উদ্যোক্তা

এর মাঝে ২০০১ সালে মাস্টার্স পাশ করেই নাচোল মহিলা ডিগ্রী কলেজে বাংলার প্রভাষক হিসেবে যোগ দিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ‘রঙ রেজিনী’কেও এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেন। ২০০৬ সালে এসে ট্রেড লাইসেন্স করলেন এবং ‘রঙ রেজিনী’কে আত্মপ্রকাশ করালেন বাইরের জগতে।

২০০৮ সালে রাজশাহীর উপশহরে নতুন আঙ্গিকে নতুন জায়গায় যাত্রা শুরু করলেন। নিজের প্রতি বিশ্বাস দিন দিন বাড়তে থাকলো, সাথে বাড়লো কর্মী সংখ্যাও। রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় ১৪ জন গ্রুপ লিডারকে দিয়ে কাজ উঠিয়ে নেন উদ্যোক্তা আফরোজা আজিজ।

উদ্যোক্তার পণ্যের সমাহার

বিয়ের পর স্বামী তাকে তার কাজে ভীষণভাবে উৎসাহিত করলো। বর্তমানে ‘রঙ রেজিনী’তে শাড়ী, থ্রি পিছ, পাঞ্জাবী, ফতুয়া ইত্যাদি তৈরি করে যাচ্ছেন আফরোজা আজিজ। তিনি ভারতের শান্তি নিকেতন থেকে ১ বছরের ফরেন ক্যাজুয়াল (টেক্সটাইল) প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন।

উদ্যোক্তা বার্তাকে আফরোজা আজিজ জানান,“অনেক শিক্ষিত নারী ঘরের বাইরে কাজ করার সুযোগ ও সাহস পায় না। সেক্ষেত্রে নারীদের জন্য ব্যাবসা একটি কঠিন কাজ। পরিশ্রম, শিক্ষা এবং সুযোগ থাকা উচিত। আমি মনে করি যেকোনো সুযোগ থাকলে তা কাজে লাগানো উচিত। তবে কাজে এবং  চিন্তায় অবশ্যই দেশপ্রেম ও সততা থাকতে হবে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমি কাজ করে চলেছি”।

২১ বছরের পথ চলায় ‘রঙ রেজিনী’তে বর্তমানে স্থায়ীভাবে ১৫ জন এবং মাঠ পর্যায়ে এক হাজার কর্মী নিয়ে সফলভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা আফরোজা আজিজ।

রাজশাহী থেকে রাইদুল ইসলাম শুভ
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here