উদ্যোক্তা প্রীতি ইসলাম পারভীন সম্মাননা গ্রহণ করছেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর হাত থেকে

প্রীতি ইসলাম পারভীন। জন্ম ঢাকায়। বাবা-মা আর চার ভাই-বোনের সংসারে প্রীতি সেজো। বাবা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। মা শিক্ষিকা। শিক্ষকতার পাশাপাশি মা হাতের কাজও করতেন। ছোটবেলায় সেই মায়ের হাতের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ শিখতেন প্রীতিও। মায়ের সাথে সকল ধরনের হাতের কাজে তৈরি পোশাক, সেলাই এর কাজ, শো-পিস, ওয়ালমেট, চটের কারপেট, ফুলের টপ, ইত্যাদি কাজ শেখা হয়েছে ক্লাস ফাইভ এ পড়ার সময়।

ক্লাস সিক্স এ পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় প্রীতির। বিয়ের পর এত ছোট বয়সে সংসার সামলানো, সবার মন যোগানো সাথে নিজের স্বপ্নকে লালন করা এই ব্যপার গুলো প্রীতির জন্য অনেকটায় চ্যালেঞ্জিং ছিলো। দুই বছরের মাঝে প্রথম সন্তানের মা হন প্রীতি। মায়ের কাছ থেকে অনেক কাজ শেখা ছিলো প্রীতির। তাই প্রীতির সাহস ছিলো এই কাজ দিয়ে একদিন সফল হবে। নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি অন্যদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে কাজ করতো প্রীতির।

অন্যের কষ্টকে যেন নিজের কষ্ট মনে হত তাঁর। কি করবে সেটা ভেবে না পেয়ে শ্বশুরের অনুমতিতে একটি সেলাই মেশিন নিলেন প্রীতি। শুরুর দিকে টুকটাক অর্ডার পেলেন সেই সাথে নিজেকে তৈরি করার কাজটা ও গুছিয়ে নিলেন প্রীতি। এভাবে বেশ কয়েকটি বছর কেটে যায়। প্রীতির মনে হয় নিজের একটা পরিচয় দরকার।

২০০৩ সাল। পেপারে একটি বিজ্ঞপ্তি দেখলেন। মডেল ফটোসেশনের জন্য নতুন মডেল দরকার। যোগ্য হলে মডেলিং করার সুযোগ পাবে তারা। অবিশ্বাস্যভাবে প্রীতি সুযোগ পায় এবং মডেলিং শুরু করে। একএক করে ১১ টি বিজ্ঞাপন এর মডেল হন প্রীতি এবং প্রতিটি বিজ্ঞাপনের পোশাক ছিলো প্রীতির নিজের ডিজাইনে তৈরি। কিন্তু মিডিয়া জগতে খুব বেশি দিন কাজ করার সুযোগ হয়নি তাঁর। কারণ স্বামীর চাকরির সুবাদে বিদেশ চলে যেতে হয়। সেখানে অবসর সময়ে পার্লারের বিভিন্ন ট্রেনিং এবং ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে বিউটিফিকেশনের কাজ শুরু করেন প্রীতি। পাশাপাশি তাঁর ডিজাইনে তৈরি পোশাকও সেখানে বিক্রি করতেন।

বেশ কয়েকটি বছর পরিবারসহ বিদেশে কাটানোর পর ২০১৬ সালে ফিরে আসেন দেশে। দেশে ফিরে নিজের জমানো টাকা এবং কিছু গহনা বিক্রি করে বিদেশের সেই ব্যবসাকে দাঁড় করান প্রীতি। প্রীতি বুটিকস এবং প্রীতি বিউটিপার্লার নিয়ে পথ চলা শুরু করলেন উদ্যোক্তা। অনেক প্রতিকূলতা আসলেও প্রীতি সেগুলো উপেক্ষা করে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়েছেন। অর্জন করেছেন বেশ কিছু সম্মাননা।

প্রীতি বলেন, “অভিনয় জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। তবে এইসব কিছুর ভিতরে সবচেয়ে আনন্দ লাগার দিনটা ছিলো সেই দিন, যেদিন আমার ব্যবসায় স্বীকৃতি প্রাপ্তির এওয়ার্ড দেওয়া হয়। এই এওয়ার্ড আমার কাজের দায়িত্ব ও উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দেয়। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, এই সমাজে কেউ কাউকে অধিকার দেয় না, দিতে চায় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়”।

এসএমই ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হয়ে দেশে এবং বিদেশের অনেক মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন উদ্যোক্তা প্রীতি ইসলাম। চায়নাতে প্রথম বার মেলায় দেখেছেন চামড়া পণ্যের ব্যপক চাহিদা। তাই উদ্যোক্তা প্রীতি ৩ মাসের একটি ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন করে চামড়াজাত পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয়বার চায়নাতে মেলায় অংশগ্রহণ করে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন এবং বায়ারদের অনেক অর্ডার পেয়েছেন।

ইতিমধ্যে তাঁর প্রীতি বিউটি পার্লারটি এখন ট্রেনিং ইস্টিটিউট হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত হওয়ায় তা আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটিতে লেভেল ওয়ান ও লেভেল টু পরীক্ষাও হয়। অনেক নারী আছে যারা কাজ জানে না কিন্তু কাজ করতে চায়, তাঁদের ফ্রিতেই ট্রেনিং করানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। পথ-শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কয়েকটি সংস্থার সাথে জড়িত হয়েও কাজ করছেন উদ্যোক্তা প্রীতি ইসলাম।

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here