সাবিহা সুলতানা, বাবা রিটায়ার্ড ক্যাপ্টেন সবুর। বাবার চাকুরীর সুবাদে শৈশব কেটেছে কাপ্তাইয়ের মনোরম পরিবেশে। তবে কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট থেকে বিবিএ এমবিএ সম্পন্ন করেন।
বিবিএ শেষ করার আগেই ইন্টার্ণশীপ করার সুযোগ পান CEPZ এর অত্যন্ত স্বনামধন্য দেশি কোম্পানী “প্যাসিফিক জিন্স”-এ। ৩ মাস মেয়াদী ইন্টার্ণশীপের ১মাস পরেই জবের সুযোগ পান তিনি এবং সেখানে বেশ কয়েক বছর চাকরি করেন।
বিবিএ কমপ্লিট করার পরে ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে জয়েন করলেও মন পরে থাকতো ডিজাইনের ভেতর। বিভিন্ন বুটিকস থেকে ড্রেস কিনে সেটাতেই নিজস্ব কিছু ফিউশন করতেন সাবিহা। বাসায় বোন, মা, বাবা, ভাই, বন্ধুদের এমনকি কলিগদের ড্রেস ও ডিজাইন করে দিতেন।
সাবিহা তার বড় চাচীকে দেখে উদ্যোক্তা হবার সুপ্ত ইচ্ছে টা জাগে। কারণ তার চাচীর রাজশাহীতে একটা বুটিক শপ আছে।
সেই অনুপ্রেরণা থেকেই সাবিহা অনলাইনে কাজ শুরু করেন। তবে চট্টগ্রামে থাকায় দেশিয় পণ্যের সোর্সিং এ বেশ বেগ পেতে হয় তাকে। তারপর তিনি জামদানির একটি উৎস খুঁজে পান, যেখানে নিজস্ব কারিগর দ্বারা নিজস্ব ডিজাইনে জামদানি শাড়ি বানিয়ে দিবে।
বাবাকে আগ্রহের সাথে বিষয়টি জানান সাবিহা। বেশ কিছুদিন পর একদিন সকালে বাবা অফিসে যাবার আগে হঠাৎ একটা খাম হাতে দিলেন, সেখানে ছিলো ১০ হাজার টাকা। মুচকি হেসে বললেন শুরু করো। সেই পুঁজি দিয়েই সাবিহার স্বপ্ন পুরণের পথে হাঁটা শুরু।
সাবিহা তার উদ্যোগের ৯০ ভাগই দেশিপণ্য। এখন তিনি মসলিন,রাজশাহী সিল্ক, ভেজিটেবল ডাই, বাটিক,তন্তুজ, খেশ, হাফসিল্ক, কোটা, এন্ডি কটন, তাঁত নিয়ে কাজ করছেন। নতুন ভাবে যোগ হয়েছে শতভাগ কটন নিট ফেব্রিক্স যা দিয়ে আমরা তৈরী করছি পোলো এবং টি-শার্ট।এগুলি খুবই মানসম্মত এবং স্কীনের জন্য এলার্জিমুক্ত।
সাবিহা জানান, আমাদের মূল লক্ষ্য রিজেনেবল মূল্যে সবচেয়ে বেস্ট পণ্য সবার হাতে তুলে দেয়া এছাড়া নিজস্ব কারিগর দিয়ে আমরা তৈরী করছি লুঙ্গী এবং পাঞ্জাবি।
সাভার এবং মিরপুরে আমাদের ফ্যাক্টরি আছে। এছাড়া উত্তরায় আমরা অতি শীঘ্রই আরেকটা কারখানা চালু করতে যাচ্ছি।
ডাইং,স্টিচিং, ম্যানুফ্যাকচারিং,ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং এবং আইটি সেক্টর মিলিয়ে এখন মোট ৪৫ জন কর্মী আছে তার। কমান্ড-কন্ট্রোল টিমে ৩ জন রয়েছে।
সাবিহার উদ্যোগের নাম ইনোভেশন (innoVation)। দেশিয় আমেজ ধরে রেখে দেশিপণ্যকে নতুন ভাবে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে ইনোভেটিভ ওয়েতে কাজ করছেন
তিনি।
২০১৩ সালে অনলাইন পেইজের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হলেও অফলাইন কার্যক্রম শুরু হয় ১৮ নভেম্বর ২০২৩ সালে।
অনলাইন পেইজের সুবাদে কিছু প্রবাসী কাস্টমার হয়েছে, যারা একসাথে বেশ কিছু পোশাক অর্ডার করেন, এভাবেই তার পণ্য USA,UK, মালয়েশিয়া, জার্মানি গিয়েছে এবং বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এছাড়াও দেশের ভেতর টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সব জেলাতেই সাবিহার পণ্য যাচ্ছে।
বর্তমানে প্রতিমাসে ১০-১২ লক্ষ টাকার পণ্য উৎপাদিত হয় এবং সেল হয় ৮-১০ লক্ষ টাকার মতো।
সাবিহা বলেন, আমার স্বপ্ন শুধু যে পোশাক তৈরি করবো, সেল করবো, আয় করবো সেটাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইনি। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আয়কৃত অর্থের কিছু অংশ আমরা বিভিন্ন ভালো কাজে ব্যয় করতে চাই।উদাহরণ স্বরুপ বলতে চাই,করোনাকালীন সময়ে কিছু পরিবারকে আমরা পেয়েছিলাম যারা আক্ষরিক অর্থেই অসহায়। ১বছরের ও বেশি সময় আমরা সেই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম যার পুরো টাই ছিলো ইনোভেশন থেকে পাওয়া।
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সময় এবং সুযোগ প্রোপারলি কাজে লাগাও। নিজের লক্ষ্য ঠিক করো, কি নিয়ে কাজ করছো সেটার ব্যাপারে বিস্তর জানার চেষ্টা করো এবং সততাকে সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও।
মেয়ের স্বপ্নপূরণের সহযাত্রী হচ্ছেন তার বাবা, তিনি দীর্ঘ দিন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ইনোভেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা