দেশের গন্ডি পেরিয়ে সিরাজগঞ্জের হস্তশিল্পের বিশ্বভ্রমণ

0

কিছুদিন আগে তারা ছিলেন শুধুই গৃহিনী। গৃহস্থালীর কাজের বাইরে কিছুই করতেন না। সেই নারীরা এখন ঘর সংসার সামলে বাড়িতে বসে হস্তশিল্পের কাজ করে প্রতিমাসে ভাল টাকা আয় করছেন। যা দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি ছেলে মেয়েকে স্কুলে পড়াচ্ছেন।

নিজেরাও সঞ্চয় করছেন। স্বপ্ন দেখছেন সুন্দর আগামীর। প্রত্যন্ত ঘোর পল্লীর প্রায় ৩ শতাধিক গ্রামীণ নারীর এমন জয়যাত্রা সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায়। এসব নারীদের হাতের তৈরি পণ্য যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

চলনবিল উন্নয়ন কেন্দ্র নামে একটি সংগঠনের প্রশিক্ষণ আর সহায়তায় তাদের এই ঘুরে দাঁড়ানো।

চলনবিন উন্নয়ন কেন্দ্র তিন বছর আগে রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার প্রায় ৩ শতাধিক গ্রামীণ নারীকে নানা হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। এ কাজে তাদের সহায়তা করে কারিতাস বাংলাদেশ ও বেজ ইন্টারন্যাশনাল। এরপর প্রশিক্ষিত নারীদের ৩২ টি গ্রুপে ভাগ করে তাদের দিয়ে তৈরি করানো হচ্ছে কেট বক্স, ডক বক্স, বড় পাতিল, বালতি, হাফ সেলেডার, করাই, ফাইল বক্স, চাকা, কিচেন ডালা সহ হরেক নকশার হস্তশিল্প পণ্য।

এসব তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে হোগলা পাতা, সন, তালপাতা, পুরাতন শাড়ী কাপড়। চলনবিন উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে হস্তশিল্প তৈরির কাঁচামাল ও নকশা নারী গ্রুপের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। নারীরা বাড়িতে তাদের গৃহস্থালীর কাজ সেরে দিনভর হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করেন। পণ্য উৎপাদন হয়ে গেলে সংস্থা থেকে প্রতিটি পণ্যর নগদ পারিশ্রমিক দিয়ে নিয়ে যান। বছরজুড়ে এভাবে নারীরা হস্তশিল্প তৈরি করেছেন।

বাড়ির উঠানে বসে হস্তশিল্পের নানা পণ্য তৈরি করছেন নারী। তারা সবাই নকশা অনুযায়ী যার যার মতো পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত। এ কেন্দ্রের দলনেত্রী জাহানারা খাতুন জানান, তিনি বাড়ির সকল কাজ সেরে এখানে কাজ করেন। একাজে মাসে তিনি ৭/৮ হাজার টাকা আয় করেন।

কিছুদিন আগেও তারা ছিলেন বেকার। এখন এই কাজের মাধ্যমে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করছেন। সঞ্চয় করছেন। এ কাজ তাদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

তাড়াশ পৌর শহরের সোনালী ব্যাংকের পাশেই চলনবিল উন্নয়ন কেন্দ্র। এখানেও নারীরা হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করছেন। তৈরি হরেক রকম পণ্য একটি রুমে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। মাসে দু’বার উৎপাদিত পণ্য খুলনায় কারিতাস বাংলাদেশ ও বেজ ইন্টারন্যাশনাল কাছে পৌছে দেয়া হয়। এরপর তাদের মাধ্যমে এগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।

চলনবিল উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এস এম আব্দুল আজিজ জানান,কারিতাস বাংলাদেশ এবং বেজ ইন্টারন্যাশনাল আমাদের কাছে নকশা ধরে কাজের অর্ডার দেন। এরপর আমরা পণ্য তৈরির জন্য নারীদের কেন্দ্রে কাঁচামাল দিয়ে আসি।

তারা সপ্তাহজুড়ে সেগুলো তৈরি করে। আমরা তাদের নগদ পারিশ্রমিক দিয়ে তা সংগ্রহ করি। এরপর খুলনায় কারিতাস এবং বেজ ইন্টারন্যাশনালের কাছে দেই। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব পণ্য রপ্তানি করেন।

এ পরিচালক দাবি করেন, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই কাজের মাধ্যমে বিপুল পরিমান পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here