ফেলে দেয়া হাড়কে শৈল্পিক রূপ দেন ক্রাফটসম্যান ইবনে হাসান

0
উদ্যোক্তা ইবনে হাসান

পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির আগ্রহ থেকেই ২০১১ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করেন ইবনে হাসান। ক্রাফটসের প্রতি ভালবাসা থেকেই নিত্য নতুন পণ্য তৈরি করছেন তিনি।

ইবনে হাসান মূলত ফেলে দেয়া হাড় কিংবা শিং দিয়ে হস্তশিল্পের কাজ করেন। তাঁর সিগনেচার পণ্য গরু মহিষের শিং, হাড়, দাঁত, চামড়া এছাড়াও তিনি জুট, কাঠ, বাঁশ, বেত দিয়েও কাজ করেন।

তিনি ফেলে দেয়া হাড় বা শিং কে ব্যবহার উপযোগী করে কর্পোরেট লেভেলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তার পণ্য৷ যেমন; শিং থেকে ভিজিটিং কার্ড হোল্ডার, পেন হোল্ডার, চাবির রিং, ডিজিটাল প্রিন্টের চাবির রিং, লেজার প্রিন্টের চাবির রিং, এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গহনা তৈরি হচ্ছে। হাড়ের ফুলদানি, গরুর হাড়ের ল্যাম্পশেড, ওয়াল শো পিস, জুটের কার্ড হোল্ডার, জুটের ডাইভারসিভাইড ব্যাগ,
শো-পিসসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করছেন।

ইতিমধ্যে তিনি মহিষের শিং এর টি টেবিল এবং ফার্নিচার নিয়েও কাজ করছেন।

মহিষের শিং এর স্থায়ীত্ব অনেক বেশি। এটি শত বছরেও কিছু হয়না৷ তাই তিনি মহিষের শিং কে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরির চেষ্টা করছেন, সেই সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে তা ছড়িয়ে দেবার ইচ্ছে পোষণ করেন।

ইবনে হাসান বলেন, আমার প্রথম সেল ছিল আমার বন্ধুর মাধ্যমে মহিষের শিংহের কলমদানি এবং মহিষের শিংহের কার্ড হোল্ডার। তারপর আমার সেই বন্ধুর মাধ্যমেই আরো অনেক গরুর হাড়ের চাবির রিং সেল করি।

অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, আমেরিকায় ইতিমধ্যে তার পণ্য গিয়েছে। এছাড়াও ঢাকাসহ খুলনা, গাজীপুর, টঙ্গীতে তার পণ্য সেল হয়েছে৷

এছাড়াও ন্যাচারাল ডাই এর সকল উপাদান তার কাছে পাওয়া যায়। যেমন, পিয়াজের খোসা, কাঁঠাল কাঠের গুড়ি, হরতকির গুড়া, ইন্ডিগো, ইউক্লেকটাসের পাতা, কাঁচা গাবসহ ন্যাচারাল ডাই এর এসকল পণ্য বেস্ট সেলিং পণ্য তার।

কর্পোরেট গ্রাহকদের টার্গেট করে পণ্য তৈরিতে মনোযোগ দিতে চান। ইতিমধ্যে লেন্স গ্রুপ, এ্যাপেক্স, পাওয়ারগ্রুপ, রিজেন্ট গ্রুপ, কিলোক্রাপস, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসে তার পণ্য যাচ্ছে।

ইবনে হাসান জানান, আমি সম্পুর্ন প্লাস্টিকের বিপরীতে কাজ করছি, কিন্তু আমার যে পরিমাণ সেল হওয়ার কথা কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে যেভাবে রপ্তানি হওয়ার কথা ঐরকম সাপোর্ট, লজিস্টিকস, মেশিনারিজ আমাদের দেশে নাই। এটা আমাদের জন্য প্রকোট সমস্যা। একারণে আমাদের দেশে ইকো ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্টগুলো সকলের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকছে না।

দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও বিদেশি পণ্যের দাপটে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে এই সম্ভাবনাময় শিল্প এমনটাই মনে করছেন উদ্যোক্তা ইবনে হাসান।

বাবা সোহরাব হোসেন এর নয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম তিনি।
জন্ম আজিমপুরে হলেও আশির দশক থেকে ইসলামপুরের লালবাগে থাকছেন। পুরান ঢাকার নিজের বাসায় হস্তশিল্প তৈরির কাজ করেন তিনি। প্রায় ১৫ /১৬ বছর যাবত তিনি এই কাজ করছেন।

সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন এবং ফাইন আর্টসের উপর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে।

হাসান চাকরিতে বিশ্বাসী ছিলেন না, তাই পড়াশোনা শেষ করে কোনো চাকরিতে জয়েন করেননি তিনি৷ তবে স্কুলে পড়াকালিন সময়ে তিনি পারিবারিক ব্যবসায়ে যুক্ত হোন। তখন থেকেই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তিনি।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here