উদ্যোক্তা- তানিয়া ওয়াহাব

দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য কিছু তৈরি করা। একজন উদ্যোক্তার জন্য কত সম্মানের কল্পনা করা যায়? কর্মপথে কতইনা এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে উদ্যোক্তার আজকের কর্ম। জি আমরা কথা বলছি জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত স্বনামখ্যাত উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাবকে নিয়ে।

২০১৯ সালে আইসিসিবি’তে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার এন্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-ব্লিস ২০১৯’শে উদ্যোক্তা তানিয়া ওহাবের প্রদর্শিত চামড়াজাত পণ্যের সাথে জামদানী মোটিফের কাজ দেখে খুব পছন্দ করেন স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার ফলশ্রুতিতে উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাবের কাছে অর্ডার আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে সকল মন্ত্রী, এমপি, এম্বাসেডরদের বাই নেম পণ্য তৈরী করা।

সফল ভাবে সেগুলো ডেলিভারি দেয়ার পর খুব প্রশংসিত হলে বিভিন্ন এম্বাসেডররা তাদের এম্বাসির সকল সদস্যদের জন্য বিভিন্ন পণ্য অর্ডার করেন। আজ ১৯মার্চ বাহারাইন এম্বাসির অর্ডার ডেলিভারি সম্পন্ন করেন। কথা চলছে জর্ডান ও সৌদি আরবের এম্বাসির সাথে।

চলতি মাসে গুরুত্বপূর্ণ সফর শেষে ৩ তারিখে উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরেন। সেখানে বাংলাদেশি বংশদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান এক ব্যবসায়ীর সাথে উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান “ট্যান” নামেই ডিলারশীপে চুক্তি হয় যেখানে ট্যানের শোরুম থাকবে।

উদ্যোক্তা তানিয়া ওহাব বলেন, “ঐতিহ্যের সাথে পথ চলার প্রত্যয় নিয়ে, দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে, আমরা চামড়াজাত পণ্যের সাথে কিভাবে জামদানি ডিজাইন বা মোটিফ এর মেল বন্ধন ঘটানো যায়, সেটা নিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করেছি, জামদানি পল্লীতে শিল্পীদের সাথে তাদের ডিজাইন নিয়ে কথা বলেছি। নিজেদের কারখানায় অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জামদানি মোটিফে কিছু চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করেছি। যা ইতিমধ্যেই গ্রাহকদের মধ্যে বিপুল ভাবে সমাদৃত হয়েছে। সেই সাথে কর্পোরেট সেক্টর এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের এম্বাসি গুলো ইতিমধ্যেই তাদের শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে এ পণ্য নির্বাচন করেছে”।

এ শিল্পে উদ্যোক্তার পথ চলাটা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। লেদার ইনস্টিটিউট এ পড়ার সময় গুলো থেকেই মনের ভেতরে একটা তাগিদ ছিল নিজস্ব ডিজাইনে আন্তর্জাতিক মানের এমন কিছু পণ্য উদ্ভাবন করা যা কিনা আমাদের আবহমান বাংলার নিজেস্ব ঐতিহ্যকে ধারণ করেই পৌঁছে যাবে দেশী বিদেশী ক্রেতাদের হাতে। সে তাড়না থেকেই উদ্যোক্তা গড়ে তুলেন তার ব্র্যান্ড ‘ট্যান’।

লেদার টেকনোলজিতে লেদার প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এ অনার্স, আর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে ডেভলপমেন্ট স্টাডিস এ মাস্টার্স করা এ উদ্যোক্তা এখন দুটো কোম্পানী,কারিগরের ম্যানেজিং পার্টনার,আর ট্যানের প্রোপাইটর। যিনি মূলত করপোরেট গিফট আইটেম সাপ্লাই দেয় যা লেদার, জুট, টেক্সটাইল এর তৈরী ব্যাগ, ওয়ালেট, ডায়েরী কভার ইত্যাদি। কাজ করেছে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো, গ্রামীন ফোন, বিভিন্ন ব্যাংক সহ বহু করপোরেট অফিসে। পাশাপাশি সাপ্লাই দিচ্ছে আড়ং, বাটা, এপেক্স কে। ইতিমধ্যে এক্সপোর্ট করেছে সুইজারল্যান্ড, ইউকে, জাপান, কানাডা, কাতারসহ আরও দেশে।

অর্জন করেছেন অনেক পুরস্কার। ২০০৮ এ সেরা এসএমই এওয়ার্ড (এসএমই ফাউন্ডেশন) ২০১১ এ সেরা এসএমই এওয়ার্ড (এফবিসিসিআই) সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের হাত থেকে নিয়েছেন। ২০১৩ এ outstanding women in business award by dhl-daily star (one of the most prestigious award in Bangladesh)। ২০১৪ তে কাজী নজরুল ইসলাম স্বর্ণ পদক, ২০১৫ তে সেরা নারী উদ্যোক্তা, বাংলাদেশ নারী পরিষদ।

এছাড়া আমেরিকান গভর্মেন্ট থেকে দুবার ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ফান্ডিং’এ ইউএসএ গিয়েছেন। ২০১১ তে হোয়াইট হাউজ ভিজিট করেছেন এবং ফ্লোরিডার মেয়রের কাছ থেকে অনারারি সিটিজেনশিপ লাভ করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে। অস্ট্রেলিয়ার গভর্মেন্ট থেকেও প্রেস্টিজিয়াস অস্ট্রেলিয়ান এওয়ার্ড ফেলোশিপ পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ব্যবসায়ী হিসেবে ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছে। উদ্যোক্তা হবার পাশাপাশি ট্রেইনার এবং কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন USAID, UNDP, SME Foundation, Ministry of Commerce, World bank etc.

উদ্যোক্তা আরও বলেন, শুধু মাত্র জামদানিই নয় বরং দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী শিল্পের কারুকাজ ও নকশার সাথে চামড়ার মেল বন্ধন ঘটিয়ে, আন্তর্জাতিক মানের চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করার এ প্রয়াস আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা চাই বিদেশী পণ্যের এই আগ্রাসনের সময়ে বাংলাদেশের মানুষ দেশী পণ্য ব্যবহার করুক। যে সকল পণ্য আমাদের ঐতিহ্যের ধারক এবং বাহক হয়েই বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরবে বিশ্ব দরবারে”।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here