আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। যার আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। প্রতি বছর ৮ মার্চ তারিখে পালিত হয় এই দিনটি। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।
এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। চলুন আজ তেমন এক সংগ্রামী নারীর সঙ্গে পরিচিত হই।
১৯৯৯ সালে মাস্টার্সে পড়াকালীন সময়ে হস্ত শিল্প ঘর’এ কিছু কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন শাহিদা পারভীন। ‘আট’ আনা দিয়ে নেটের ব্যাগ তৈরি থেকে শুরু করে সালোয়ার কামিজসহ বিভিন্ন ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু। এই ফাঁকে কিছু দিন চাকুরী করলেন কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে তা ছেড়ে দিলেন।
মাস্টার্স পাশ করে পার্লার দিলেন। কিছু দিন পর সামাজিক বাধা পারভীনকে ব্যথিত করলো। নিজে পণ করলেন, “এমন কিছু করে দেখাবো যাতে সমাজ আমাকে একদিন সম্মান দেখাতে বাধ্য হয়। ব্যাংকে জমা ছিল মাত্র ৪০ হাজার টাকা। সঞ্চিত সেই আমানত ভেঙ্গে যাত্রা শুরু করলেন শাহিদা পারভীন। ভাবলেন,ডাইভারসিফাইড জুট প্রোডাক্ট নিয়ে সারা বাংলাদেশ এবং বিশ্বকে উপহার দিবেন নতুন এক ব্যবসায়িক ভুবন।
মাত্র ২ জন কর্মী নিয়ে বাসা সাজানো বা অফিস সাজানো, ডেকোর, শো-পিস, কর্পোরেট গিফট আইটেম, ৮টি আইটেমের কাজ শুরু করলেন, সাড়াও মিললো ব্যাপক। লুবনান, ইনফিনিটি, কম দাম এবং ভীষণ রুচিশীল পণ্য, হাউজ, অফিস ডেকোর, শো পিস, প্রথম বছরেই ব্যবসায় বাজিমাত। ২০১১ সালে ৫ লক্ষ টাকার একটি অর্ডার পেলেন, এই অর্ডার উদ্যোক্তাকে জানান দিলো স্বপ্নের পথে হেটে যাবার কথা এবং সফলতার সিঁড়ি ছোঁয়ার কথা।
২০১২-২০১৩ সালে বড়বড় কিছু অর্ডার উদ্যোক্তাকে পৌঁছে দেয় অফিসিয়াল লেজারে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার সেলস রেকর্ড বুকে। সে বছরেই মিললো বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি গ্রামীণফোন প্রোগ্রেসিভ অ্যাওয়ার্ড ২০১৪। সেরা নারী অ্যাওয়ার্ড উদ্যোক্তাকে এনে দিলো দারুণ অনুপ্রেরণা।
ব্যবসা বাড়তে থাকলো। ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী ফুলটাইম কাজ করতে শুরু করলেন উদ্যোক্তার সাথে। বাসার একটি রুমেই কাজ করে উদ্যোক্তার যাত্রার শুরু। তারপর ৫০০ স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে বিসমিল্লাহ ট্রিম সলিউশনস নামের প্রথম অফিস। তারপর সেটিকে ১২০০ স্কয়ার ফিটে উত্তীর্ণ করলেন । ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়ায় ২৫০০ স্কয়ার ফিটে। স্বামী মোঃ মামুন খান উৎসাহ দিয়েছিলেন সেই শুরু থেকেই।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে অংশগ্রহণ উদ্যোক্তার পথ চলাকে করে আরো বিস্তৃত, সমৃদ্ধ।। ২০১৭ সালে হংকং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার, কোলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার সহ সবগুলোতে অংশ নিলেন উদ্যোক্তা। সাত-আট ক্যাটাগরির পণ্য শো পিস ডেকোর, হোম ডেকোর, অফিস স্টেশনারি, ব্যাগ, পোশাক, লাইফ স্টাইল, প্রোডাক্ট, সব মিলিয়ে প্রায় সাত ক্যাটাগরির পণ্য। আজ তিনি নারী দিবসের এক অনন্য উপমা এবং অনুপ্রেরণা।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা