প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক প্রদান

0

বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক-২০২১ এ ভূষিত হয়েছেন।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বরে শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পদক তুলে দেয়া হয়। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন ১৪ বছরে পদার্পণ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক প্রদান উপলক্ষে অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য পরিবেশবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এম.পি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী।

স্বাগত বক্তব্যে ইমপ্রেস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘আমাদের চারপাশ থেকে যদি স্বীকৃতি না আসে তাহলে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজটিকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি তখন থাকে না। কাজেই এপ্রিসিয়েশনের দরকার। আজকে মনিরুল ইসলামকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এই আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন নিজেদেরকে এই ধরনের কাজে সংযুক্ত করতে পারে এবং আশেপাশে যারা আছে তারা যেন এই ধরনের কাজকে উৎসাহের সাথে গ্রহণ করে৷’

পদকে ভূষিত ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান
বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষক ও গবেষক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ১৯৯৪ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৯৫ সালের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০০ সালে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পেয়ে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণা শুরু করেন এবং সুন্দরবনে বাঘের বাস্তবিদ্যা ও সংরক্ষণ বিষয়ে গবেষণার জন্য ২০০৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে তিনি একই বিভাগের অধ্যাপক এবং সভাপতি হিসেবে কর্মরত আছেন।

ড. খান বাংলাদেশের মেরুদণ্ডী বন্যপ্রাণী অর্থাৎ স্তন্যপায়ী, পাখি, উভচর ও সরীসৃপ প্রাণী নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় যুক্ত আছেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলপত্রের প্রধান লেখক তিনি। তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থও রয়েছে যার মধ্যে ‘ফটোগ্রাফিক গাইড টু দ্য ওয়াইল্ডলাইফ অব বাংলাদেশ’ বইটি উল্লেখযোগ্য।

ড. খানের হাতে পদক তুলে দেন এবং বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান মানুষের কর্মস্পৃহাকে আরও উজ্জীবিত করে। বস্তুতপক্ষে জীবনের জন্যই প্রকৃতি, বেঁচে থাকার জন্য মানুষ কিংবা যে কোনো প্রাণীর জন্য আমাদের প্রকৃতিটাকে সুন্দর রাখতে হবে এবং বাসযোগ্য করে রাখতে হবে। তবেই আমরা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবো।

তিনি সুন্দরবনকে রক্ষার বিষয়ে সবাইকে কাজ করার তাগিদ দেন। বনের বাঘ গণনাসহ যে কোনো কাজে সহযোগিতায় বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বক্তব্য রাখেন ইমপ্রেস গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মজুমদার এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্ম চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন।

পদক প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, ‘আমি যে বিষয় নিয়ে কাজ করি তা হলো বণ্য প্রাণী এবং তাদের যে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং একই বিষয়ে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং চ্যানেল আই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তারই একটি অংশ হিসেবে এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তি। এটি শুধু আমার কাজের স্বীকৃতি নয়, এটি আমার কাজের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে৷’

তিনি আরও বলেন: বন বিভাগের সহযোগিতায় আমি কাজ করে থাকি৷ আমি মনে করি আমরা একসাথে কাজ করলেই আমরা পরিবর্তন আনতে পারবো৷ অনেক দূর্বলতা আছে, অনেক আলোচনা-সমালোচনা আছে। সব কথার শেষ কথা হচ্ছে আমরা যদি একসাথে কাজ করতে পারি তাহলে আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছি তা অর্জন করতে পারবো।

অনুষ্ঠানে ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকার সম্মাননা চেক তুলে দেয়া হয়। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাকে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের সনদপত্র তুলে দেন ইমরান আল চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খানের ওপর দুটো প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের ১৪ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে অতিথিদের নিয়ে কেক কাটা হয় অনুষ্ঠানে।

প্রকৃতি সংরক্ষণে ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালের ১ আগস্ট চ্যানেল আইয়ে শুরু হয় নতুন মাত্রার গবেষণা, তথ্যবহুল, সচেতনতা ও শিক্ষামূলক ধারাবাহিক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’। প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক প্রদান শুরু হয় ২০১১ সালে।

গবেষণা, জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে বহুবিধ কাজ করে যাচ্ছে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। প্রকৃতিবিষয়ক অনুষ্ঠান, ত্রৈমাসিক প্রকৃতিবার্তা প্রকাশ, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব গঠন, প্রকৃতিমেলা উদযাপন, জলবায়ু নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম, গান, টেলিফিল্ম, বই, পোস্টার, লিফলেট প্রকাশ ইত্যাদি এ প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য কাজ।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here