উদ্যোক্তা মোবাশ্বেরা রহমত উল্লাহ

পাটের সুতোয় সুই গেঁথে মনের মাধুরি দিয়ে বুনেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি। ব্যাপক সাড়া মিলল, ফলে পেছনে ফিরে তাকাতে হলো না উদ্যোক্তা মোবাশ্বেরা রহমত উল্লাহকে।

দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের ছবি পাটের সুতো দিয়ে গেঁথে নান্দনিকতার কাজের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন উদ্যোক্তা মোবাশ্বেরা। তার আশা ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো পরিবারের ছবি পাটের সুতোয় বুনবেন।

উদ্যোক্তা মোবাশ্বেরা রহমতউল্লাহ ২০১৪ সালে নরসিংদীতে গোল্ডেন রোপ নাম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সাদা-কালো বিভন্ন রকমের ছবি নিয়ে কাজ করছেন মোবাশ্বেরা। পাট দিয়ে শিকা,ম্যাট,ফ্লোর ম্যাট,কার্পেট,সবই হাতে তৈরী।

সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরা উদ্যোক্তার সহযোদ্ধা, তাদের পুঁথিগত বিদ্যা না থাকলেও কাজে খুব অদম্য তাই আগ্রহটা বেশি। উদ্যোক্তার ফ্যাক্টরিতে ৪৪ জন নারী কর্মরত আছেন তারা খুব ভালো কাজ করছেন।এছাড়া শত শত নারী ট্রেনিং দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।মোবাশ্বেরা এসএমই ফাউন্ডেশনের ট্রেনার হিসেবে ও কাজ করেন এবং বিভিন্ন জেলায় ট্রেনার হিসেবে ট্রেনিং করিয়ে থাকেন।

পাট নিয়ে উদ্যোক্তার হাজার রকমের স্বপ্ন আছে। দিনে দিনে স্বপ্নগুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস ব্যক্ত করে তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন: পাট দিয়ে আমরা হরেক রকমের পণ্য তৈরী করছি, দেশে এখন পাট পণ্যের ব্যাপক চাহিদা, শুনেছি বিদেশে পাট দিয়ে দামীদামী গাড়িতে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা হচ্ছে, আমাদের দেশেও করা সম্ভব, পাট এমন এক বস্তু যা সহজে ব্যবহারের পরে মাটির সাথে পঁচে মিশে যায়, এটা পরিবেশের জন্যও ভালো এবং মাটির উরর্বতা বৃদ্ধি পায়।

পাটকে আরো গুরুত্ব দেওয়া দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, পাটের পণ্যতে দেশের অর্থনীতি ভালো হয়েছে, দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। পাটের জন্য সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্হান হয়েছে। আগে নারীরা মাঠে ঘাটে কাজ করতো, এখন নারীরা ঘরে বসে প্রতি মাসে নয়, দশ, হাজার টাকা রোজগার করে। নারীরা এগিয়ে গেলে দেশও যাবে।

উদ্যোক্তা বলেন, আমি যখন পাট দিয়ে একটি পণ্যতৈরী করি আমার বুকটা ভরে উঠে। সত্যিই বলতে কি পাট নিয়ে কাজ করার মধ্যে অলাদা মজা আছে, এই কাজের সাথে জড়িত না হলে বুঝতে পারবে না। আমরা যত বেশি পাট পণ্য নিয়ে কাজ করবো, পাটের সোনালী অতীত ফিরে আসবে। দেশে সব পাটকল যদি চালু থাকতো তাহলে কাঁচা-মাল আরো কম দামে আমরা ক্রয় করতে পারতাম, এই জন্য পাট নিয়ে সরকারকে আরো আন্তরিক হতে হবে।

ব্যবসার শুরুটা জানতে চাইলে উদ্যোক্তা জানালেন, শুরুটা ছিল কষ্টকর, স্বামীর অনেক বাঁধার মুখে পড়েছি, কিন্তু দমে যাই নি। স্বামীকে না জানিয়ে বিসিকে ট্রেনিং নিয়েছি, ট্রেনিং করার পর জানতে পারলাম জেডিপিসি নামক একটি প্রতিষ্ঠান আছে, সেখান থেকে পাটজাত পণ্যের উপর ফুল-কোর্স ও ট্রেনিং সম্পূর্ণ করলাম।

টুকটাকভাবে কাজ এগিয়ে নিলাম, ২০১৬ সালে প্রথম জাতীয় পাট দিবসে অংশগ্রহণ করলাম এবং সম্মাননা পেলাম। স্বামী তখনও চাইতেন না আমি সামনে এগিয়ে যায়। আমার দৃঢ়তা ব্যবসা থেকে আমাকে পিছু হটায় নি। আস্তে আস্তে ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকলে স্বামী বুঝতে পারে সফলতা আসবেই এবং তিনিও নিয়মিত ব্যবসায় আমাকে সহায়তা করতে শুরু করে।

২০১৮ সালের মার্চে ৬ টা প্রোডাক্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করেন উদ্যোক্তা। প্রথমে বিভিন্ন ধরণের বুননের কাজ শুরু করেন। উদ্যোক্তা পাট এবং উল বেন্ট করে যে সুতাটা হয় সেই সুতাটা পাটের চটের যে কোন মানুষের ছবি ফুটিয়ে তুলেন। এছাড়াও ওয়াইনের কাঁচের বোতল দিয়ে শোপিস তৈরী করেন যাতে পাটের ছোঁয়া থাকে, বোতলের উপর বুনন দিয়ে শৈল্পিক রূপ দেন।

উদ্যোক্তা বলেন, বছরে পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয় প্রায় ১২ লাখ টাকা আর লোকাল বাজার তো আছেই।

ভবিষ্যতে ব্যবসা বড় করার আরো পরিকল্পনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশের বাজারে হ্যান্ডিক্রাফটের চাহিদা বেশি, তাই দেশের বাজারের সাথে বিদেশের বাজারটাও ধরতে হবে।

 

 

কোরবান আষাঢ়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here