উদ্যোক্তা- মজিবর রহমান

প্রায় বছর ত্রিশ আগের কথা! একজন বাবা কৃষি কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন। ছেলে মেয়ে সহ আট সদস্যের সংসার তার। এই পরিবারের ছোট ছেলে ১৯৮৪ সালে  যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তখন তার বাবার উপার্জন করার ক্ষমতা তেমন নেই, ততদিনে বাকী ছেলেরা নিজের মতো করে সংসার গুছিয়ে নিয়েছে।

ছোট ছেলেটি দেখলো খাবার জুটলেও পড়াশোনা খরচ বাবা দিতে পারছেনা ওদিকে ভাইয়েরা ব্যবসা করে ভালোই রোজগার করছে শিশু টির কোমল মনে টাকা রোজগারের বাসনা শুরু হলো এবং সেখান থেকেই সে হকারি করে পুরাতন লোহার জিনিস সংগ্রহ করে। তারপর দোকানে বা যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে বিক্রি করতেন, বিনিময়ে সেই টাকায় তার কলম খাতা সহ প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতেন। ছেলেটির নাম মোঃ মজিবর রহমান।

ছেলেটি যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তখন বরিশাল গিয়ে নাইট স্কুলে পড়াশোনা করে আর দিনের বেলায় ভাইয়েদের সাথে লোহা ও স্টীলের কাজ করে নিজের পড়ার খরচ যোগায়। এসএসসি এর পরে ছেলেটি আর পড়াশোনা না করে ব্যবসায়ে  মনোনিবেশ করেন। আস্তে আস্তে ব্যবসা প্রসারিত হতে থাকে।

১৯৯৮ সালে উদ্যোক্তা বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় নিজ বাসভূমিতে ফিরে আসে এবং সেখানেই রাস্তার পাশে রড সিমেন্টের ব্যবসার জন্য ভাড়া দোকানে নিজের কাজ শুরু করেন। ব্যবসা আরও বাড়তে থাকে। এরপর আর তাকে ফিরে তাকতে হয়নি। আস্তে আস্তে সেখানে তার নিয়োগকৃত আট দশজন কর্মী কাজ করে।

২০০২ সালে উদ্যোক্তা ব্যবসায়ের লভ্যাংশ দিয়ে রাস্তার পাশে জমি কিনে তার প্রতিষ্ঠান টি প্রশস্থ করেন।  মজিবর রহমান তার অতীতের কথা মনে করে, বিভিন্ন হকারদের কাছ থেকে পুরাতন ভাঙ্গা চুরা লোহার জিনিসপত্র সংগ্রহ করে এবং সেটাকে ভালো দামে ঢাকায় বিক্রি করে। লোহা ভাঙা চুরা সংগ্রহ করতে গিয়ে তার মনে হয় যে, যেখানে সেখানে পরে থাকা প্লাস্টিকের ভাঙা বা পরিত্যক্ত  জিনিস সংগ্রহ করে একটা কারখানা তৈরি করে নিজের এলাকার কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

২০১২ সালে একটি কারখারা স্থাপন করেন। প্লাস্টিকের ভাঙা চুরা পণ্য সংগ্রহ করতে তিনি অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখেন। সংগৃহীত প্লাস্টিক মেশিনের সাহায্য কুচি করে সেটাকে ধৌত করে রোদে শুকিয়ে বস্তা ভরে পাঠিয়ে দেন রাজধানী ঢাকায়। এবং ঢাকার কারখানায় এটাকে দানা করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এভাবেই উদ্যোক্তা পরিত্যক্ত জিনিস কে তুলে এনে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করেন। বর্তমানে তার কারখানায় প্রায় ৫৫ জন অসহায় মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

উদ্যোক্তা মজিবর রহমান বলেন- খুব দ্রুত দুটি মেশন ক্রয় করবেন, একটি দিয়ে প্লাস্টিকের দানা করে সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করা এবং পাইপ তৈরি করার কাজে ব্যবহার করবেন। আরেকটি দিয়ে অকেজো টিন লোহার জিনিসপত্র মেশিনে দিয়ে গলিয়ে নতুন পণ্য তৈরি করবেন।

ব্যবসায়ের শুরুর দিকে তার মাসিক আয় ছিল ৪০০০/৫০০০ টাকা আর বর্তমানে তার মাসিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা গড়ে লভ্যাংশ থাকে। উদ্যোক্তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে কারখানার যন্ত্রাংশ বৃদ্ধির সাথে এলাকার অসহায় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ব্যবসায়ে লাভ বা লস যেটাই থাকুক মানুষের ভালোবাসা নিয়ে মানুষের পাশে দাড়াতে চান উদ্যোক্তা মজিবর রহমান।

কে.এম. সুলতান
সিনিয়র এসএমই প্রতিনিধি, গৌরনদী, বরিশাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here