উৎসব প্রিয় বাঙালীর ঘরে ঘরে সারা বছর ধরে চলে নানান পরিকল্পনা। উদ্দেশ্য ঈদ-পূজা, বসন্ত-বৈশাখের সাজ পোশাক, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপাতি, মৃৎশিল্প, কারুশিল্প, অন্দরসজ্জায় নিজের পছন্দের সব কিছুতে রাঙিয়ে তোলা। দেশের প্রায় অর্ধ-শতাংশেরও বেশি উদ্যোক্তাও তাই উৎসব-পার্বন ও ঋতু কেন্দ্রিক প্রয়োজনীয় ও নিত্য ব্যবহার্য জিনিসগুলোকে উৎপাদন করেন বছর ধরে। সেই উৎপাদনকৃত সকল পণ্য এখন ধুলোর আস্তরণে পড়ে আছে কারখানায়।
বলা যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে শ্রমিকদের কাজ। বন্ধ হয়েছে উৎপাদনকৃত পণ্যের বাজার ও বিক্রি। অনলাইনেও নেই কেনা-বেচার ধুম। যেখানে বৈশাখ এলে ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহে হিমশিম খান উদ্যোক্তা ও তাঁর কর্মীবাহিনী সেখানে আজ নেই একটি টাকারও বিক্রি। শুনতে অবাক লাগলেও এটিই বর্তমান পরিস্থিতি। মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা তো লসে আছেই সাথে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।
অনেকেই এখনো পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকের মজুরি। কিন্তু তা ঠিক কতদিন পর্যন্ত দিতে পারবেন জানেন না তাঁরা। কেননা, হাতে যা টাকা ছিল তা দিয়ে চলতি মাসের হিসেন চুকিয়েছেন। কিন্তু আগামীতে নিজের পরিবার ও সংসার চালিয়ে নিতেও কিছুটা অর্থ নিজের কাছে রেখেই শ্রমিকদের কথা ভাবতে হচ্ছে। সেখানে সকল শ্রমিককে বিনা কাজে, বিনা বেচাকেনায় আগামী মাসে বেতন বা মজুরি দিতে পারবেন কিনা এটা একটা বিশাল চিন্তার বিষয় সকল উদ্যোক্তার কাছেই।
অনেক সময় বিক্রিতে সামান্য লস বা লাভ ছাড়াই পণ্য বিক্রি করতে হয়। সেখানে উঠে আসে মূলধনের অর্থ। যাকে কাজে লাগিয়ে বা লগ্নি করে আবারো নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা যায়। কিন্তু যখন মূলধনের টাকাই উঠছে না তখন বিপাকে দেশের লক্ষ লক্ষ উদ্যোক্তা। সরকারি প্রনোদনা ইতোমধ্যেই ঘোষনা হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নিয়মাবলি মেনে সেই অনুদান সকল উদ্যোক্তা ও চেইন সিস্টেমে তাদের কর্মীদের কাছে পৌঁছানো এখন একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। এতকিছুর পরেও উদ্যোক্তারা চেয়ে আছেন বাংলাদেশের বড় একটি উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিকে। বৈশাখের ক্ষতিকে ছাপিয়ে পরিস্থিতিকে সামলে নিতে হয়তো এই উৎসবের বাজার কিছুটা হলেও সামাল দিতে পারবেন তাঁরা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে দেশের হাজারো উদ্যোক্তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা, ভেঙে পড়ার সম্ভাবনাও থাকবে অনেক উদ্যোক্তার উদ্যোগ।
সাদিয়া সূচনা