নিজের সঞ্চয়ের টাকায় উদ্যোক্তা হুমায়রা

0
উদ্যোক্তা হুমায়রা সুলতানা

স্বাবলম্বী ও নিজের পায়ে দাঁড়াবার সংকল্প ও দেশী পণ্যের প্রতি ভালোবাসায় উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে অনেক নারী। এমনই একজন নারী উদ্যোক্তা হুমায়রা সুলতানা।

উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন: ২০২০ সালে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে শুরু হয় শখের শাড়ি নিয়ে ‘শখের ডিব্বা’।‘শখের ডিব্বা’র ছাতার নিচেই আছে ‘গ্ল্যাম আপ উইথ হুমায়রা’।

হুমায়রা মা-বাবার প্রথম সন্তান। মা গৃহিণী, একসময় তিনিও কর্মজীবী নারী ছিলেন। বাবা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ শহরে। তবে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স এ মাস্টার্স শেষ করেছেন হুমায়রা। পাশাপাশি প্রফেশনাল প্রফিশিয়েন্সির জন্য মাস্টার্স ইন কমিউনিকেশনও করেছেন তিনি।

২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন বেসরকারি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা যেমন- এডুকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এডুকো), প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন বাংলাদেশ এ ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন্স এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করেছেন হুমায়রা। বর্তমানে কাজ করছেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশে।

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে হুমায়রা সুলতানা উদ্যোক্তা বার্তায় জানান, ‘২০২০ সালে সদ্য ম্যাটারনিটি লিভ শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি। ঠিক তার পরপরই করোনা আমাদের জীবন থমকে দিলো। চারদিকে লকডাউন, বাসায় সাহায্যের জন্য কোনো মানুষ নেই। একদিকে অফিস, অন্যদিকে আমার তিন সন্তান, যার মধ্যে কনিষ্ঠজন কেবল ৭ মাসে পড়েছে। সব কিছু মিলিয়ে যখন নাভিশ্বাস, তখন মনে হলো, এই যে এতো যুদ্ধ করছি, চাকরি করছি, সব আমার সন্তানদের জন্য। অথচ তাদের সময় দিতে পারছি না, ঠিকমতো যত্ন নিতেও পারছি না। ভাবলাম একা হাতে সব সামলানো যাবে না। বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দিলাম। একেবারে অনিশ্চিত সবকিছু জেনেও। চাকরিজীবনে গ্যাপ মানেই অনেক অনেক পিছিয়ে পড়া। চাকরিটাও যে ভীষণ দরকার! না, বিলাসিতার জন্য নয়, প্রয়োজনে। এতোদিন চাকরি করা মানুষটা অগত্যা চাকরি ছাড়লাম ঠিকই, কিন্তু কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচাও সম্ভব নয়। তখন ভাবতে থাকলাম, হাতে যা আছে তা নিয়েই কিছু একটা শুরু করব। হাল ছাড়ব না। নিজের শক্তি, দুর্বলতা বিচার করে খুঁজতে থাকলাম কী ভালো বুঝি অথবা কী করলে জীবনে থেমে যেতে হবে না। সেই নিজের বোঝাপড়ার ভেতর দিয়েই শুরু হলো শখের ডিব্বা।’

তিনি বলেন, হাতে যা টাকা ছিলো তা দিয়ে বড় জোর ৫ মাস চলতে পারতেন। তবে, উদ্যোক্তা হওয়ার প্রচেষ্টায় বেশি ঝুঁকি নিয়ে সব হারাবার রিস্কে যাওয়ার মতন অবস্থা বা ইচ্ছা ছিল না তার। আশি হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।

ব্যবসা শুরু করেন দেশি শাড়ি নিয়ে, তাঁতের সুতি শাড়ি। সেই সুতি শাড়ি থেকে শুরু করে এখন রয়েছে জামদানি, মনিপুরি, কাতান থেকে শুরু করে নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি শাড়ি, কুর্তি, গয়না, সেই সাথে বিভিন্ন লাইফস্টাইল প্রোডাক্ট।

‘শখের ডিব্বা’ অনলাইন বা এফ-কমার্স প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে। প্ল্যাটফর্মটির খেয়াল রাখার জন্য টিম মেম্বার হিসেবে রয়েছেন চারজন। তাদের কাজের ধরন আলাদা আলাদা করে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় অন্যান্য ফ্রিল্যান্সার ফ্যাশন ডিজাইনারের সাথেও কাজ করে ‘শখের ডিব্বা’। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের ডিজাইন নিয়ে কাজ করা হয়।

বিদেশে পণ্য রপ্তানি নিয়ে তিনি জানান: প্রাথমিকভাবে আমেরিকায় পণ্য পাঠিয়েছি। তবে, পণ্য পাঠানোর এই প্রসেসটি ক্লায়েন্টের জন্য আরো সুবিধাজনক ও দ্রুত করতে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া সারা বাংলাদেশে ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেমে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি ক্লায়েন্টের দরোজায়।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি বলেন, ‘যেটা ভালো বুঝি সেটা নিয়েই কাজ করা উচিত। এফ কমার্সের দুনিয়ায় অনেক শাড়ির পেজ রয়েছে। একে অন্যকে দেখে নিজেও একটা পেজ ওপেন করে ফেলার প্রবণতা আছে অনেকের মধ্যে। তবে পরামর্শ দেবো একটাই- নিজে যা ভালো বুঝবেন, সেটাই করবেন, অন্যকে ফলো করে কোন কিছু করা যাবে না। ক্রেতাদের জন্য রুচিসম্মত পণ্য নিয়ে কাজ করলে সফল হওয়া খুব একটা কষ্টের বিষয় নয়।’

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here