নকশীকাঁথায় শিরিনের স্বপ্ন বোনা

0
উদ্যোক্তা শিরিন সাবিহা

প্রাচীন আমল থেকে নকশীকাঁথা বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে। বাঙালির প্রাণে প্রাণে মিশে আছে নকশীকাঁথার সৌন্দর্য। বাঙালি নারীর নিখুঁত রুচি আর নিখাঁদ ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে নকশীকাঁথা। এটি বাঙালি নারীর প্রাণের স্পন্দন। এর সঙ্গে রয়েছে বাঙালি নারীর হৃদয়ের নিবিড় সখ্যতা। নকশীকাঁথা আর বাঙালি রমনীর জীবন যেন প্রাণে প্রাণে একাকার।

নকশীকাঁথা দেখে চোখ জুড়ায়, মন ভরে। প্রতিটি নকশীকাঁথার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালিয়ানা। নকশীকাঁথার বাইরের সৌন্দর্য যতটা বিচিত্র, এর ভেতরের গল্প তার চেয়ে হাজার গুণে বেশি আবেগময়, বেদনাবিধুর, চমকপ্রদ ও তাৎপর্যপূর্ণ। নকশীকাঁথার মাঠ হচ্ছে বাঙালি নারীর প্রাণ আর সৌন্দর্য হচ্ছে বৈচিত্র্যময় জীবনের বৈচিত্র্যময় প্রতিচ্ছবি। প্রেম আর প্রকৃতি এখানে অবিচ্ছেদ্য সেতু বন্ধন।

নকশীকাঁথার ফোঁড়ে ফোঁড়ে নিপুণ কারিগরের নৈপুণ্যতা ও দক্ষতা বর্ণিল তরঙ্গে বয়ন ভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছে উদ্যোক্তা শিরিন সাবিহা।

গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায় হলেও শিরিনের জন্ম ও বেড়ে উঠা সবটাই যশোরে। তাই যশোরের ঐতিহ্যবাহী নকশীকাঁথা তাকে খুবই টানে। সাহস করে নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে, নিজের একটা স্বতন্ত্র পরিচয় গড়তে কাজ শুরু করে দিলেন।

মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করে এখন উদ্যোক্তা শিরিন প্রতি মাসে উৎপাদন করছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকার পণ্য।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শিরিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, বর্তমানে আমার পাঁচ জন কর্মী কাজ করছেন। তবে বেশি অর্ডারের চাপ থাকলে তখন অন্য কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেই। ফেসবুকে ‘ওয়াকিয়াহ্ বুটিকস’ নামে একটি পেজ আছে। এখান থেকেই মূলত আমি ব্যবসায় পরিচালনা করি।

দেশের বাইরে পণ্য পাঠাতে না পারলেও, দেশের ভেতর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালী এসব জায়গায় আমার পণ্য যায়।

যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে ভুগোল বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর, চাকরি করাটা সেভাবে হয়ে ওঠেনি শিরিন সাবিহার। তবে একটা বেসরকারি স্কুলে কিছুদিন চাকরি করার পর ছেড়ে দিয়েছিলেন।

তিন ভাইবোনের মধ্যে শিরিন বড়। বাবা-মা উভয়ই ছিলেন সরকারি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। একমাত্র ভাইটিও চাকরি করেন ব্যাংকে। চাকরির আবহের মধ্যে বেড়ে উঠলেও শিরিন সব সময় চেয়েছেন নিজে কিছু করতে।

কেন উদ্যোক্তা হলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে শিরিন জানান, ‘বাচ্চা হওয়ার সময় স্কুলের চাকরিটা ছেড়েছিলাম। তারপর যখন ছেলেটা একটু বড় হল তখন খুব খারাপ লাগতো। সব বন্ধুরা স্কুল-কলেজে চাকরি করে, কেউ অন্য কোথাও। কিন্তু আমার বাচ্চাকে দেখার কেউ নেই, আবার ঘরে বসে সময় কাটতো না খারাপ লাগতো। তারপর চিন্তা করলাম ঘরে থেকে বাচ্চা সামলিয়ে যদি কিছু করা যায়। সেই চিন্তা থেকে ছোট বোন ও স্বামীর উৎসাহে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা।’

কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন জানতে চাইলে উদ্যোক্তা শিরিন জানান, ‘আমি মূলত শাড়ি, টুপিস, ওয়ান পিস ও নকশীকাঁথা নিয়ে কাজ করছি। যেকোনো ধরনের পোশাকে নকশা ও হাতের কাজ এবং বিভিন্ন ধরনের সেলাইয়ের কাজও আমরা করে থাকি। এক একটা হাতের কাজ শেষ করতে আমাদের অনেকটা সময় লেগে যায়। মাসে আমরা ৩০ সেট পণ্য তৈরি করতে পারি।’

একদিন নিজের পণ্য নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্ন লালন করেন উদ্যোক্তা শিরিন। তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দিন-রাত নিবিড়ভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে উদ্যোক্তা শিরিন সাবিহা বলেন, ‘সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে গেলে সৎ থেকে পরিশ্রম করে যেতে হবে। আর লেগে থাকতে হবে ধৈর্য্য ধরে। আর অবশ্যই যেটা দরকার সেটা হল পড়াশোনা। উদ্যোগ নিয়েও অনেক কিছু জানার আছে শেখার আছে আর তার জন্য পড়াশোনা করাটা অনেক জরুরি। তাই উদ্যোগ সম্পর্কে জেনে বুঝে শিখে এগিয়ে যেতে হবে।’

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here