নওগাঁর সাপাহারে বিদেশি ফল মালবেরি চাষে সফল উদ্যোক্তা সোহেল। উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরির পেছনে না ঘুরে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। এলাকায় বেশ সাড়াও জাগিয়েছেন তিনি।
মেধা, বুদ্ধিমত্তা আর শ্রম দিয়ে তিনি ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ নামে একটি দৃষ্টিনন্দন কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। সোহেলের কৃষি ফার্মে রয়েছে শতাধিক ধরনের দেশি-বিদেশি ফলের গাছ। সেসব গাছে শোভা পাচ্ছে নানা জাতের চেনা-অচেনা ফল। ইতোমধ্যে সোহেলের ফার্মে উৎপাদিত বানানা ম্যাংগো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। কৃষি উদ্যোক্তা সোহেলের সৃষ্টিশীলতায় এবার যোগ হয়েছে বিদেশি মালবেরি ফল। উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন এই মালবেরি ফলটি এখন থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে উদ্যোক্তা সোহেলের ফার্মে; যা এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন ভিড় করছেন মানুষ।
গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ, লাল এবং কালো লম্বাটে মালবেরি ফল। গাছের পাতা ডিম্বাকার, খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সূচাল। আকারে আঙুর ফলের চেয়ে কিছুটা বড় মালবেরি ফল সারা বছরই পাওয়া যায়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গাছে ফুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিলেই ফল পাকে। ফল প্রথম অবস্থায় সবুজ, পরে লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো রঙ ধারণ করে। মালবেরি ফল দেখতে খুবই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। পাকা ফল রসালো এবং টক-মিষ্টি।
প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। এই গাছের চারা সহজেই হয় বলে বাসা বাড়ির ছাদেও এই ফল চাষ করা সম্ভব। গ্রামাঞ্চলে ফলটির পরিচিতি ও কদর না থাকলেও শহরাঞ্চলে মালবেরি ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। বড় শহরের শপিংমলগুলোতে মালবেরি ফল ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে।
শহরাঞ্চলে মালবেরি ফলের চাহিদা দেখে সোহেল এই ফল চাষে আগ্রহী হন এবং দুই বছর আগে বিভিন্ন দেশের ৮টি জাতের গাছ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে চারা লাগান।
সোহেল বলেন, মালবেরি চাষে রোগবালাই কম হওয়ায় গাছে তেমন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। জৈব সার ব্যবহার করেই সারা বছর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল চাষ করা সম্ভব। ফলের উৎপাদন খরচ কম এবং বাজারে চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মালবেরি চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে তার ফার্মে ১০টি মালবেরি গাছ রয়েছে। এ বছর এক বিঘা জমিতে মালবেরি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে তার। বাণিজ্যিকভাবে মালবেরি ফল চাষের কথা জানিয়ে এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, এরই মধ্যে চারটি জাত পছন্দ করেছি। চারা তৈরি করে এক বিঘা জমিতে মালবেরি চাষ করবো। আমার উৎপাদিত বিদেশি এই ফল দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ দেখতে ও পরামর্শ গ্রহণ করতে আসছেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ইতোমধ্যে মালবেরি বাগান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করতে উৎসাহিত করেছেন। এই ফল চাষের মাধ্যমে দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলেও তিনি মত দেন।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, সোহেল রানা একজন সফল বাগানি। দীর্ঘদিন ধরেই আমসহ বিভিন্ন ফল ও ফুল বাগান করে সফলতা পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ৮ জাতের মালবেরি গাছ পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়েছেন। বর্তমানে গাছ থেকে ফল তোলার উপযোগী হয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৮-১০ কেজির মতো ফল পাওয়া যাবে। এলাকার মাটিও মালবেরি চাষের উপযোগী। নওগাঁতে মালবেরি চাষ প্রসারে চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সোহেলের সৃষ্টিশীলতা আর সাফল্য দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ তার কৃষি ফার্ম পরিদর্শন করছেন। কেউ আসছেন দেখার জন্য, আবার কেউ আসছেন পরামর্শ নিতে।
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা