চারদিকে যখন বাতিল টায়ারের সচেতনতা প্রচার চলছে, তখন সেই গাড়ির টায়ারকে কাজে লাগিয়ে তাক লাগিয়েছেন উদ্যোক্তা। বাড়ির পাশে গ্যারেজে পড়ে থাকা গাড়ির টায়ারগুলোকে কেটে নানা রকমের ফুল ও পাতাবাহার গাছ লাগিয়ে নিজের আকর্ষণীয় বাগান তৈরি করেছেন উদ্যোক্তা কাজী সুমান্না আক্তার।
ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলার একজন সরকারি কর্মকর্তার বাংলোতে এখন ঢুকলেই দেখা যায় চোখ ধাঁধানো ফুলের বাগান। প্রথমে প্রায় ১০ থেকে ১২ টি বাতিল টায়ারে লাগিয়েছেন বাহারি ফুল ও পাতাবাহার গাছ। তারপর একটি ভাঙ্গা দোলনা টায়ার দিয়ে সাজিয়েছেন। নিজের সন্তান ও অন্যান্য ছোট শিশুরা বাড়িতে বেড়াতে আসলে যেন বসে দোল খেতে পারে। তার ঠিক একটু দূরত্ব রেখেই বানিয়েছেন একটি গোল্ডফিশের একুরিয়াম। একুরিয়ামের ঠিক মাথার উপরে দু’পাশে দুটি টায়ার দিয়ে মিকি মাউসের একটি চিহ্ন দেয়া হয়েছে। নিজের সন্তান এবং বেড়াতে আসা শিশুরা যেন আকর্ষিত হয়। সঙ্গে মাছগুলো কৃত্রিম বাতাস পায় সে সুবিধা করে দিয়েছেন তিনি। উপরের দিকে জায়গায় জায়গায় ছোট ছোট টায়ারগুলো ঝুলিয়ে সাজিয়েছেন এমনভাবে যেন প্রতিটি টায়ারকে ঘিরে ঝুলছে পাতাবাহারের পাতাগুলো।
তারপর উদ্যোক্তা সুমান্না আক্তার জানান, দোলনা এবং এক্যুরিয়াম নিজের সন্তানের জন্য সাজিয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু একটি সরকারি বাড়ি তাই অনেক শিশু ঘুরতে এসে পছন্দ করেছে বলে এরপর আরো আগ্রহ বেড়ে যায় উদ্যোক্তার। এরপর থেকে আশপাশের সিএনজি টায়ার, রিক্সার টায়ার, বিভিন্ন ছোট ও বড় টায়ার একত্রিত করতে আরম্ভ করেন বাগানটি। প্রতিটি টায়ারে এমনভাবে রং তুলি দিয়ে এঁকে দেন যাতে দেখতে আরো আকর্ষণীয় লাগে। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফুল এনে সাজাতে শুরু করেন। যেমন বড় টায়ারগুলোতে সূর্যমুখি ফুল, আশপাশের ছোট-বড় টায়ারগুলোতে বাগানবিলাস, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, তিন রকমের জুঁই ফুল, ধূপপাতা এবং বিভিন্ন রংয়ের পাতাবাহার। শুধু তাই নয় বাগানে সিএনজির টায়ার দিয়ে তার ভেতরে ঘাস দিয়ে টায়ারকে রাঙিয়ে শুরু করেছেন উদ্যোক্তা সুমান্না আক্তারের বাগানটি। যা দেখে অনেকেই আধুনিকভাবে সাজিয়ে রাখা টায়ারের সৃজনশীলতার বাগানের জন্য বাহবা দিয়েছেন।
উদ্যোক্তা কাজী সুমান্না আক্তার বলেন, ফুল সবাই ভালোবাসে। তাই সমাজে একটা বার্তা দেওয়ার জন্য এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। যেহেতু আমার স্বামী একজন সরকারি কর্মকর্তা, অনেক মানুষ সরকারি কর্মকর্তার বাড়িতে আসেন। তাঁদের কাছে অন্তত এই বার্তা যাক যে, পুরানো টায়ারগুলো যেখানে-সেখানে ফেলে না দিয়ে, এভাবে কাজে লাগিয়ে ব্যবহার করে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা যায়। জায়গা ছোট হলেও ক্ষতি নেই। কাজের ফাঁকে গত ৮ থেকে ৯ মাস ধরে ফেলে দেওয়া বাতিল টায়ারগুলোর উপর বিভিন্ন নকশা করেন দোলনা, ফুলের টব, সোফাসেট, ডাইনিং, বিভিন্ন ওয়াল শোপিস ইত্যাদি লাগিয়ে তার পরিচর্যা করেছেন। তৈরি করেছেন একটি সুদৃশ্য বাগান।
তিনি বলেন , ‘আমার সৃষ্টিশীল কাজ করতে ভালো লাগা থেকে উদ্যোগটি নেওয়া। আমার সহকর্মীরা সাহায্য না করলে, এই বাগান করতে পারতাম না। তাছাড়া স্বল্প পুঁজি দিয়ে টায়ারগুলোর উপর বিভিন্ন শৈল্পিক কাজ করতে পারি। ব্যবসায়ীক মনোভাব নিয়ে কাজ করে থাকি। এতো পুরাতন টায়ারগুলোকে ছুরি আর রং দিয়ে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে বিভিন্ন কারুকাজের ধারণ দিতে পারি। এগুলো যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। যেমন ডেঙ্গুর উপদ্রব থেকে বাঁচতে পারি তেমনি এ পরিবেশবান্ধব হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি’।
উদ্যোক্তা বিভিন্ন সাইজের টায়ারগুলোতে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ভিন্ন রকমের ফুল প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। আবার পাশের দেয়ালগুলোতে টায়ার দিয়ে ওয়ালমেটের মত সাজিয়েছেন। দেয়ালের পাশেই বসার সিট তৈরি করেছেন। বাড়ির আশপাশে অনেক লতাপাতার গাছ রয়েছে। যেগুলোতে সুন্দর ফুলও হয়। সেগুলোকে তুলে টায়ারের টবের মধ্যে লাগালে হবে এক অন্যরকম একটি ফুলের বাগান। ফুল দিয়ে রাঙ্গানো পুরো বাড়িটি যেন সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশকেও দূষণ মুক্ত করতে সাহায্য করছে।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা