দেশে প্রথম বাণিজ্যিক আনার চাষে সফল চুয়াডাঙ্গার মোকাররম

0
উদ্যোক্তা মোকাররম হোসেন

বাণিজ্যিকভাবে আনার চাষে শতভাগ সফলতা পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মোকাররম হোসেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তার আনার বাগানে বিপুল পরিমাণ ফল এসেছে। তার এই সফলতা দেখে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক আগ্রহী হয়েছেন আনার চাষ করতে।

বেশ কয়েকবার এ ফলের চাষ করে ব্যর্থ হন অনেক চাষি। তবে ২০১৮ সালে বিদেশি এ ফল চাষ করে সফল হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার কৃষি উদ্যোক্তা মোকাররম হোসেন। চারা রোপণের দুই বছর পর ফল উৎপাদন এবং তার বাজারজাত শুরু হয়েছে। বিদেশি এ ফলের চাহিদা অনেকটাই মেটাতে প্রস্তুত দেশের এই বৃহৎ আনার বাগান।

চীন, ভারত, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে শত শত টন ভিটামিন সমৃদ্ধ আনার বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি করা হয়। তবে এবার মোকাররম হোসেন ইতোমধ্যে ফলে ভরিয়ে তুলেছেন তার পাঁচ বিঘা জমির আনার বাগান।

প্রথমে তিনি ইউটিউবে আনার চাষ দেখে ফলটি চাষ করতে আগ্রহী হন। চাষের জন্য তিনি ভারতের একটি কৃষি খামারের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদের পরামর্শ নিয়েই ফলের বাগান শুরু করেন তিনি। চার বছর আগে পাঁচ বিঘা জমিতে এসসিটি ভাগুয়া জাতের ৮০০টি গাছ রোপণ করেন মোকাররম।

চারা রোপণের এক মাস আগে তিনি ওই জমিতে ৮ ফুট করে দূরত্বে এবং প্রতি লাইনের মাঝে ১২ ফুট জায়গা ফাঁকা রেখে একটি করে গর্ত করেন। এক ফুট গভীরতার গর্তের ভেতর ৩০ কেজি করে গোবর সার (জৈব সার), ৫শ’গ্রাম চুন এবং ২ কেজি করে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জমি উপযুক্ত করে তোলেন।

এতে তার প্রথম বছরে চারা কেনা, জমি তৈরি ও পরিচর্যাসহ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। চারা রোপণের দুই বছর পরই গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল থেকে ফল পরিপূর্ণ হতে সময় লাগে চারমাস।

বছরে ২-৩ বার ফল সংগ্রহ করা যাবে আনার গাছ থেকে। প্রতিটি গাছ থেকে দুই বারে ৫০ কেজি ফল পাওয়া যাবে। এরইমধ্যে চলতি বছরে বাগানে ৮০০ আনার গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল এসেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আনার ২শ’টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোকাররম হোসেনের এই আনার বাগানে চার বছরে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো এবং আয় করেছেন প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এমনকি এই বাগান থেকে চারা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আরো ৭০টি আনার বাগান।

কৃষি উদ্যোক্তা মোকাররম হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক বিদেশি ফল আমদানি করা হয়। এতে আমাদের মতো কৃষি উদ্যোক্তারা ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই সরকার যদি আমদানির উপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয় তাহলে ফল আমদানির ক্ষেত্রে অনেকে নিরুৎসাহিত হবে। এতে আমাদের মতো উদ্যোক্তারা ভালো দামে ফল বিক্রির সুযোগ পাবেন এবং অনেকেই বিদেশি ফল চাষে এগিয়ে আসবেন।’

ভারতের কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সয়েল চার্জার টেকনোলজির সাথে যৌথভাবে এ চাষ করছেন মোকাররম হোসেনের গ্রীনভিসতা সয়েলটেক অ্যান্ড এগ্রো ফার্ম। এ কারণে সয়েল চার্জার টেকনোলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট কৃষিবিদ হারসাল মুখেকার সার্বক্ষণিক আনার বাগানের দেখভাল করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া আনার চাষের জন্য বেশ কঠিন ছিল। সেই কঠিন কাজটি সহজ করতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে হয়েছে।

অত্যন্ত সুস্বাদু ও ওষুধি গুণসম্পন্ন এ ফল এতোদিন বিদেশি ফল হিসেবেই পরিচিত ছিল। দেশের মাটিতে প্রথম এ ফলের সফল চাষ হয়েছে উদ্যোগী তরুণ মোকাররম হোসেনের হাত ধরেই।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী হাসান বলেন, ‘বাগানটির শুরু থেকে নানা সময় পরামর্শ দিয়ে কৃষি বিভাগ তার পাশে ছিল। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়া আনার বাগানটির উদ্যোক্তা শতভাগ সফল হলে দেশে ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। একই সঙ্গে ক্রয়মূল্যও ভোক্তার হাতের নাগালে থাকবে।’

বাজারে আনার ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি আনার ফলের বাইরের ও ভেতরের রঙ টকটকে লাল। খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। মোকাররম হোসেনের দাবি, এর চাষ দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং প্রতি কেজি আনার ১শ’টাকার ভেতরে কিনতে পারবেন ভোক্তারা।

তার বাগানের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন সাইজের আনার। বাগানে থোকায় থোকায় ডালে ঝুলছে। সবুজ পাতার আড়ালে আবার পাতা ঝরা ডালেও ঝুলে আছে মনকাড়া আনারের থোকা। চারদিকে যেন মনোরম বিশাল সংগ্রহশালা। দেশের প্রথম এ আনার বাগান দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতশত মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here