দক্ষতা অর্জনে শিক্ষানবিশ কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে এসএমই খাতের উন্নয়ন

0

ইউরোপের দেশ জার্মানিতে প্রতিবছর চার লাখের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ দেয়। এতে করে এসব শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে দ্রুত অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ফলে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে বেকার বসে থাকার হারও কমে যায়। বাংলাদেশেও এ ধরনের সুযোগ তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও নীতিনির্ধারকেরা।

সোমবার (২১ আগষ্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার ভূমিকা বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। এসএমই ফাউন্ডেশন ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক ইবার্ট স্টিফটুং (এফইএস) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে চাকরিতে নিয়োগের অনেক ক্ষেত্রে এখনো পেশাগত দক্ষতার চেয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ কারণে বিভিন্ন কাজে দক্ষ জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় স্বীকৃতি দিয়ে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। দেশে বর্তমানে ৬০ লাখ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় স্নাতক-স্নাতকোত্তর করছেন। তাদের শিক্ষানবিশ কাজের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে দক্ষ করা গেলে জনমিতির প্রকৃত সুবিধা পেতাম আমরা।’

অনেক উন্নত দেশে শিক্ষানবিশ চাকরির অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘উন্নত অর্থনীতির দেশে শিক্ষানবিশ চাকরির মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে সেই দক্ষতার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই প্রবণতা কম। এখানে কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে।’

এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিকের পরেই আগ্রহীদের শিক্ষানবিশ কাজের মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। তিনি বলেন, উন্নত অনেক দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সনদ ছাড়াই বড় বড় কোম্পানি মানুষকে কাজ দেয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শরীয়ত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ১১ হাজারের বেশি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে তিন মাস থেকে চার বছর মেয়াদি বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। তবে বিদেশে যাওয়া (২০২০-২১ বছরে) বাংলাদেশিদের ৭০ শতাংশই ছিলেন সাধারণ শ্রমিক। অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের আমরা প্রবাসে পাঠাতে পারছি না। আবার দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানেরও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।’

শরীয়ত উল্লাহ বলেন, এর একটি ভালো সমাধান হতে পারে শিক্ষানবিশ কাজের সুযোগ সৃষ্টি। এতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সরাসরি কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষানবিশ কাজের একটি নীতিমালা হয়েছে ২০২২ সালে। এটি বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, দেশের কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক, হালকা প্রকৌশল, সিরামিকসসহ বিভিন্ন খাতে সরাসরি শিক্ষানবিশ কর্মী নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও সুযোগ বৃদ্ধি করতে পারবে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, এফইএস বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কোলবিৎজ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here