জাতীয় পাট দিবস ২০২৩ উদযাপন

0

জাতীয় পাট দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি বলেছেন, পাটখাত বিকাশে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে প্রতিবছর জাতীয় পাট দিবস উদযাপিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় গবেষণা ও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় পাটখাতের যুগোপযোগীকরণ, সৃজনশীল প্রয়োগ এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য সরকার নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।

সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট সচিব মোঃ আব্দুর রউফ।

পাট দিবস উদযাপন ও পাটখাতে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

‘পাট শিল্পের অবদান, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পাট দিবস পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও পাটপণ্যের প্রর্দশনীর আয়োজন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে অবদানের জন্য এ বছর ১১ ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, চাষি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে পাট সংশ্লিষ্ট ৯ সংগঠনকেও সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী বলেন: আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে বহুদূর এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের পাটপণ্য যাতে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয় সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিত গবেষণা ও উদ্ভাবন। পাটের উন্নত চাষাবাদ ও বহুমুখী ব্যবহারের জন্য আমাদের গবেষকরা কাজ করছেন। ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক পরিসরে উন্নত গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে। মেধা ও মননের সমন্বয়ে আমরা নিশ্চয়ই নিত্য নতুন বিশ্বমানের বহুমাত্রিক সামগ্রী তৈরি করতে সক্ষম হবো।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে পাটের জন্যে আমাদের বাজার অনেক বড়। পরিবেশ আন্দোলন আমাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশ আন্দোলন যেভাবে সহায়তা দিচ্ছে, সেখানে পাটকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আপনাদের (রপ্তানিকারকদের) যেতে হবে। পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, নির্দেশনা ও পরামর্শে আমরা পাটখাতের প্রবৃদ্ধির ধারাকে বেগবান করতে পেরেছি। পরিবেশবান্ধব পাট জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন: বর্তমান টেকসই উন্নয়নের যুগে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটপণ্যের চাহিদাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। পাটের মতো পরিবেশবান্ধব পণ্য আর নেই। আমাদের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন করার ফলে পাট বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নের পথ সুগম হয়েছে। আমার চাই এখন গবেষণার মাধ্যমে পাটের আরো মূল্য সংযোজিত স্মার্ট পণ্য উৎপাদনের পথ সুগম হোক। এজন্য আমাদের পাটের গবেষকদের আরও আন্তরিক গবেষণা প্রত্যাশা করি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাটপণ্যকে ‘বর্ষপণ্য ২০২৩’ এবং পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পাটচাষী, পাটপণ্যের উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তা, পাটজাত পণ্যের ব্যবহারকারী, ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি আশা করি, পাটখাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা এ খাতের সমৃদ্ধিকে আরও বেগবান করতে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।

পাটমন্ত্রী বলেন, আমরা পাটের উৎপাদনের দিকে যেমন গুরুত্ব দিচ্ছি, পাটপণ্য উৎপাদনেও জোর দিচ্ছি। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে কাজ করছে। পাটপণ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ব্যবহারকারী এবং বিদেশিদের সাথে অধিক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে অনেকেই দৃষ্টিনন্দন, আধুনিক ও স্মার্ট বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করছেন যার অধিকাংশই বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পাটখাতে সরকার অংশীজনদের নীতি সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। পাটখাতের আরেকটি সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচন করেছে চারকোল। চারকোলের সম্ভাবনা বিপুল। আমরা পাঠকাঠি দিয়ে চারকোল বানিয়ে তা রপ্তানি করে ডলার আয় করছি। পাটপণ্যের রপ্তানি বড়াতে নানা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাটের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাটমন্ত্রী বলেন, সবার বক্তব্য শুনে মনে হলো আমি মন্ত্রী না হয়ে পাটচাষী হলে আরও ভালো হতো। প্রধানমন্ত্রী গত মাসে পাটপণ্যকে বর্ষপণ্য হিসাবে ঘোষণা করেছেন এবং পাটকে কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, দেশে পাটবীজের ঘাটতি রয়েছে। এজন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে সেটিও অপ্রতুল। পাটবীজের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে কাজ করছি।

যে কোনো প্রয়োজনে রপ্তানিকারকদের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দরোজা খোলা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রপ্তানিকারকদের জন্য আমরা বসে আছি, আপনাদের সমস্যা দূর করার জন্য। আমরা ১০০ ভাগ চেষ্টা করবো আপনাদের সমস্যা দূর করতে। তিনি আরও বলেন, পাটের ব্যাগের ব্যবহার ঠিকমতো হচ্ছে না। পাটের ব্যাগ ব্যবহারে অভিযান জোরদার করতে আমরা পাট অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছি।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাটকে কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। আমি দাবি করতে চাই পাটকে বহুমুখী কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা করা হোক।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here