যারা বইয়ের পাতায় স্বস্তি খুঁজে পান, তাদের নির্ভরযোগ্য ঠিকানা বাতিঘর। সে পরিতৃপ্তির লোভে প্রতিদিন মানুষের ভিড় লেগে থাকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জামাল খান রোডের প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলায় বাতিঘরে।
এটি এখন চট্টগ্রামের একটি দর্শনীয় স্থানও, দেশ-বিদেশের পর্যকটরা অন্তত একবার হলেও ঢুঁ মারেন বাতিঘরে, নইলে তাদের ভ্রমণ যেন অপূর্ণ রয়ে যায়।

বাতিঘরে এখন রয়েছে শতাধিক বিষয়, ৮০০০ লেখক ও ২৫০০ প্রকাশনা সংস্থার প্রায় ৯০ হাজার বইয়ের সংগ্রহ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। কী নেই এখানে। প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস, অন্য ভাষার সাহিত্য, জীবনী ও আত্মজীবনী, ধর্মীয় বই, আত্মউন্নয়নমূলক বই, আইন, রান্নার বই, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, মনোবিজ্ঞান, দর্শন, গণিত ও বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, ভূতের বই, প্রকৃতি, চারুকলা, স্থাপত্যশিল্প, নাট্যতত্ত্ব, চলচ্চিত্র, ইতিহাস, রাজনীতি, সাংবাদিকতা ছাড়াও রয়েছে ইংরেজি বইয়ের বিশাল সম্ভার। এছাড়া আছে নির্বাচিত লেখক, প্রকাশক কর্নার, শিশু-কিশোর কর্নার, লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্য সাময়িকী কর্নার এবং ক্যাফে কর্নার।

গ্রন্থপ্রেমীদের জন্য বাতিঘর যেন এক টুকরো স্বর্গ। বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ হয়তো বইয়ের লেখককেই পেয়ে যাবেন এখানে। বাতিঘর আয়োজিত বিভিন্ন আয়োজনে এসে এখানকার লেখক-পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ, মোহাম্মদ রফিক, মামুনুর রশীদ, হেলাল হাফিজ, সেলিনা হোসেন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, শাহাদুজ্জামান, আসাদুজ্জামান নূর, বিপ্রদাশ বড়–য়া, নাসরীন জাহানসহ আরো অনেকে। পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান লেখকদের মধ্যে ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র, কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, কবি রণজিৎ দাস, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার এসেছিলেন বাতিঘরের আমন্ত্রণে। এসের্ছিলেন ইংরেজি ভাষার খ্যাতিমান লেখক বিক্রম শেঠ ও জিয়া হায়দার রহমান। বাতিঘর দেখতে এসে তারাও জানিয়েছেন মুগ্ধতার কথা।

এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে স্বপ্নবান এক যুবকের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে। সেই আলোকিত মানুষের নাম দীপংকর দাস। এক দশক আগে তিনি বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রে চাকরি করতেন, না ছিল তার পুঁজি না ছিল তার রুজি। কিন্তু বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অফুরান, আর ছিল বড় কিছু করার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ তাকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়।

আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কথা আছে- ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’। বইপ্রেমী দীপংকর দাশ খুব অল্প বয়সেই বইয়ের দুনিয়ায় গুরু হিসেবে পেয়েছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে। গুরুর সেই সঞ্জীবনী মন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করে ‘স্বপ্নের সমান বড়’ হওয়ার অভিযাত্রায় তরী বেয়ে যাচ্ছেন দীপংকর দাস। তারই ফল চট্টগ্রামের গ্রন্থবিপণি ‘বাতিঘর’।

দীপঙ্কর দাস উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে ১০০ স্কয়ার ফিটের জায়গায় মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বাতিঘরের স্বপ্ন শুরু হয়।তখন ২০০৫ সাল তিন হাজার বই নিয়ে স্বপ্ন বুনা শুরু। শুরুতে চাহিদা বুঝে অর্ডার অনুযায়ী বিদেশী বই প্রথমে ঢাকা থেকে আমদানীকারকদের কাছ থেকে নিতেন। বাংলা বই, ইংরেজী বই। ২০০৭ সালে নিজেরাই এলসি খুলে বিদেশ থেকে বই আনা শুরু করি। নার্সারী ক্লাসে পড়ছে যে শিশুটি, স্কুল পড়ুয়া ৭-৮ বছরের বয়সের শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছর বয়সের ক্রেতা আসেন বাতিঘরে।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী, লেখক, পাঠক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক সমাজের সকল শ্রেণীর সকল পাঠক বই পড়ুয়া জ্ঞান অন্বেষণ করতে যারা বের হন তারা আসেন পড়তে, বই কিনতে, জানতে, খুঁজতে, শুনতে বাতিঘরে।

তিনি বলেন, পাঠকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাতিঘর সবসময় সচেষ্ট। বাতিঘরের পাঠক-শুভকাঙ্ক্ষীরা বৃহত্তর বাতিঘর পরিবারেরই অংশ।

বাতিঘরের এক পাঠক জানালেন ‘বাতিঘর হলো একটা স্বস্তির জায়গা, শান্তির জায়গা। দিন শেষে অনেক কিছু যখন মাথার উপর চেপে বসে, অনেক ঝামেলা, অনেক রকমের চাহিদা, অনেক দায়িত্ববোধ এই সব কিছু থেকে পরিত্রানের জায়গা আমার কাছে বাতিঘর।’

২০১২ সালে বাতিঘর বড় পরিসরে আসে। চট্টগ্রামের জামালখান প্রেস ক্লাব ভবনের নিচতলায় ২৫০০ স্কয়ার ফিটের জায়গায় শিল্পী শাহিনুর রহমানের অনবদ্য ইন্টেরিয়র ডিজাইনে গ্রন্থবিপণি বাতিঘর আজ বইয়ের জগতে বাংলাদেশের এক বাতিঘর হয়ে উঠেছে।বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সাথে বাতিঘর যৌথ উদ্যোগে ৫ হাজার স্কয়ার ফিটে সাজাচ্ছেন তাদের নতুন এক ভুবন।
মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ১০০ স্কয়ার ফিটে যাত্রা শুরু হয় দুই জন কর্মীর সাথে। বইয়ের সংখ্যা ছিলো ৩ হাজার। আজ ২৫০০ স্কয়ার ফিটে প্রায় ৯০ হাজারের মত বই সাজানো, কর্মী সংখ্যা ১৫ জন। সফলতার সাথে তরুণ উদ্যোক্তা দীপঙ্কর দাস পরিচালনা করছেন তার ব্যবসা হয়ে উঠেছেন এক সফল তরুণ উদ্যোক্তা।

 

 

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here