উদ্যোক্তা সাকির হোসেন

দেখতে দেখতে নয়টি বছর পার হয়ে গেছে আমার সন্তানের। আমার চোখের আড়ালে সে এতো বড়ো হয়েছে, আফসোস লাগে যে তাকে আমি এই ৯ বছরে ত্রিশটি দিনও সময় দিতে পারিনি। খুব বড় একটা ধাক্কা লাগে মনে। চাকরির বদলির সুবাদে সন্তানকে কাছে পাওয়ার পর মন সাড়া দিল না যে চাকরিটা আর করি।

এই কথা গুলো বলতে বলতে খানিকটা গলা ভার হয়ে আসে সাকির হোসেনের। আরও পাঁচজনের মতো তারও ধারণা ছিল পড়াশোনা শেষে ভালো একটা চাকরি করার। ২০০৪ সালের কথা ২৫শো টাকা বেতনে ইবনেসিনা কোম্পানির সিস্টার কনসার্নে তিনি যোগ দিলেন। প্রায় চার বছর চাকরি করলে সেখানে তারপর যখন তিনি উপলব্ধি করলেন যে অনেক কিছুই এখন তার জানান। তাই তিনি ভালো অবস্থানের জন্য  কোম্পানি পরিবর্তন করলেন। এভাবে চার-পাঁচটি কোম্পানি পরিবর্তন করলেন। কেটে গেলো ১৪টি বছর। ২৫শো বেতন বেড়ে কয়েক গুণ, তিনি ভালো একটা কোম্পানির হেড অব সেলস এন্ড মার্কেটিং। কোম্পানি প্ল্যানে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে তার জন্মভূমি রাজশাহী বিভাগে আসেন।

তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। স্ত্রীর সরকারি চাকরির সুবাদে রাজশাহী থাকতেন সন্তানকে নিয়ে। এই দীর্ঘ নয় বছর পর তাদের একসাথে থাকার সুযোগ মিলেছে। কেমন যেন একটা মায়া কাজ করলো তার। সন্তান-স্ত্রীকে ছেড়ে আর অন্য শহরে ফিরে যেতে মন চাইল না। তিনি ভাবলেন চাকরি আর নয় নিজে কিছু শুরু করবেন। ব্যক্তিগত ভাবে কৃষির প্রতি ভালোবাসা থেকেই তার চিন্তা হলো তিনি কৃষিজ পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করবেন।

এ প্রসঙ্গে কৃষি উদ্যোক্তা সাকির হোসেন বলেন, ‘বাবা সরকারি চাকরি করার সুবাদে বিভিন্ন শহরে ঘুরেছি, বিভিন্ন শহরে পড়াশোনা করেছি। সরকারি কোয়াটারে থাকা অবস্থায় বাবা প্রতি সময় কোয়াটারের পতিত জমি গুলোতে নিজ হাতে সবজি করতেন আলু, পিয়াজ, রসুন বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য। আমি নিজে  বাবার সঙ্গে খুব মজা করে সে কাজগুলো করতাম খুব ভাল লাগতো আমার। সেই ভালোলাগাই আমাকে এ বয়সে এসে আবারও অনুপ্রেরণা দিল’।

ত্রিশ বিঘা জমি লিজ নিয়ে রাজশাহীতে শুরু করলেন আম, পেয়ারা, কলা, পেঁপে এবং  তিনটা পুকুরে মাছ চাষ। তার ব্রত তিনি চাষ করবেন সম্পূর্ণ অর্গানিক ওয়েতে। ভালো ফল পেতে শুরু করলেন। অনলাইনে তার অর্গানিক ওয়েতে চাষ করা ফলগুলোর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং ২-৩ বছর পরে তার উৎপাদিত ‘গেরস্থ’র সকল ফলই অনলাইনে সেল হয়ে যেত। ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে তাকে যোগ করতে হয় সরিষার তেল, মধু, আচার, নারিকেল তেলসহ আরও কয়েকটি পণ্য।

তার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পণ্যের প্রচুর চাহিদা দেখে ভাবলেন মানুষদের ভালো খাবার সরবরাহ করার জন্য তিনি একা যথেষ্ট নয়। তাই তার মত অর্গানিক পদ্ধতিতে কৃষিজ পণ্য নিয়ে কাজ করছেন এমন আরও উদ্যোক্তাদের সাথে নিয়ে একটি সংগঠন করেন ‘ফার্মারস ক্লাব অব বাংলাদেশ’  সংগঠনের প্রতিটি উদ্যোক্তার পণ্যই শতভাগ খাঁটি।

‘নির্ভেজাল খাদ্য খান সুস্থ থাকুন চিকিৎসা খরচ কমান’ এই ট্যাগ লাইন নিয়ে উদ্যোক্তা এগিয়ে যাচ্ছেন এবং আরো অনেক উদ্যোক্তাদের একসাথে নিয়ে কাজ করছেন। উৎসাহী তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন সফল এই কৃষি উদ্যোক্তা সাকির হোসেন। তার চাওয়া প্রতিটি মানুষ খাবে নিরাপদ, থাকবে সুস্থ, হাসবে নির্মল।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here