২০১৭ সাল থেকে আচার বানানো বন্ধু সার্কেল এবং স্বামীর কলিগদের খাওয়ানোর আনন্দ নিয়েই কাজ শুরু করেন আজকের সফল নারী তাসলিমা আহমেদ।
ঘটনা শুরু কিন্তু ভিন্ন জায়গাতে। ২০১৬ সালে একটি গাড়ী কিনেন তাসলিমা, আমরা সকলে জানি একটি ব্যাপার তা হল গাড়ী শুধু কিনলেই হয়না গাড়ী চালাতে প্রয়োজন হয় একজন দক্ষ ড্রাইভারেরও, ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হলো তাসলিমার, এক বছরে ৮ জন ড্রাইভার চেঞ্জ হলো। তিনটি বিষয় তাসলিমাকে নাড়া দেয় তা হলো এই পেশার ম্যানার খামখেয়ালী এন্ড সিকিওরিটি।
নিজের এই সমস্যা থেকে একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করলেন তাসলিমা এবং সেই সাথে একটি ব্যবসার কথা মাথায় এলো। স্বামী জাহিদ খানের সাথে কথা বললেন যে নিজের বিয়ের কাবিনের ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি লজিস্টিক ফার্ম গড়ে তুলবেন তাসলিমা যেখান থেকে সুদক্ষ চালক চৌকষ স্মার্ট এবং অথেনটিক পরিচয়ের কাগজপত্রে আপডেটেড ড্রাইভার নিয়োগ দেয়া হবে ।
নাম দেয়া হলো রেন্ট এন্ড হায়ার বিডি।
কেল্লাফতে, প্রথম মাসে ৩ জন ড্রাইভার নিয়োগ দিলেন ইন্ডিভিজুয়াল আস্কিং এর ক্লায়েন্টদের, ২য় মাস থেকেই দেশের স্বনামখ্যাত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন হলো। এক মাসে ৪০ জন ড্রাইভার এর সফল নিয়োগ দিলেন নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা আহমেদ তার রেন্ট এন্ড হায়ার বিডি থেকে।
৩য় মাস থেকে এসিআই সাউদার্ণ অটোমোবাইল লিমিটেড জেনিস সুজ জাপান গার্ডেন সিটির মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে গেলো উদ্যোক্তা তাসলিমা আহমেদ এর প্রতিষ্ঠানের ক্লায়েন্ট।
৪৫০ জন ড্রাইভার এনলিস্টেড। এটি হলো তাসলিমা জাহান এর নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার মুল ব্যবসা। ভীষণ দক্ষতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন এই গুণী নারী উদ্যোক্তা।
আবার ফিরে আসি আচার বানানোর চুলায়, ইতিমধ্যেই নিজের তৈরী আচারের স্বাদ ও গুণ বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন ব্যবসায়িক পরিমন্ডলের সকলেই বুঝে গেছেন। বাল্ক অর্ডারের কারণে চুলার সংখ্যা বেড়ে গেছে, সেই সাথে বেড়ে গেলো তাসলিমার উদ্যোগে দেয়া কর্মঘন্টা। সারাদিন অফিস করে রাতে এসে আপন আনন্দে আচারের অর্ডারের আসা কাজগুলো সারতে থাকেন তাসলিমা।
২০২০ সাল। সারা পৃথিবী প্যান্ডেমিক এর আঘাতে জর্জরিত। স্বামী জাহিদ খান চাকরি ছেড়ে দিলেন, স্বামীর একটি পরামর্শ ভীষণ কাজে দিলো তাসলিমা জাহান এর উদ্যোক্তা জীবনে। জনাব জাহিদ সাজেস্ট করলেন স্ত্রীকে “আমরা নিজেরাই একটি আচারের ব্র্যান্ডনেম তৈরী করতে পারি। সেকেন্ড সোর্সিং না হয়ে নিজেদের ব্র্যান্ড নেম এ উৎপাদন করলেই আমাদের ব্যবসা আরও ভালো হবে।“
স্বামী জাহিদ খান দ্বায়িত্ব নিলেন তাসলিমা জাহান এর সাথে রেন্ট এন্ড হায়ার বিডির লজিস্টিক ফার্ম এর এবং পূর্ণ একটি হোমমেড ফুড ব্র্যান্ডে আত্মপ্রকাশ করলো উদ্যোক্তা তাসলিমা জাহান এর ঐশ’স রসনা।
বিএসটিআই অনুমোদিত আচার ১৪ টি, ফার্মেন্টেড ফুড এবং ইমিউনিটি গ্রো করে এমন ফুড এর ওপর বিস্তর পড়াশোনা চললো এবং কর্ম শুরু করলেন তাসলিমা।
ভার্জিন সরিষার তেল এবং অর্গানিক ভার্জিন কোকোনাট অয়েল উৎপাদন শুরু হলো পূর্ণমাত্রায়। নতুন আইটেমের পিকল, রেডি টু ইট, অয়েল এবং ফার্মেন্টেড ফুড ৪ ক্যাটাগরিতে পণ্যের সংখ্যা ২৬ টি।
স্বামী স্ত্রী মিলে আনন্দের কমিট্মেন্ট দিয়ে ইনভেস্ট করা ৫ লক্ষ টাকা মাত্র ৩ বছরে কাবিনের টাকার ১০ গুণ ব্যবসার ভলিউমে পৌঁছে গেলেন সফল নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা জাহান।
চলেন আবারও ফিরে যাই অনেক বছর আগে- ক্লাস টু তে পড়া অবস্থাতেই দারুণ জীবন সংগ্রামের মুখে তাসলিমা জাহান ছোটবেলাতেই শিখে ফেলেছিলেন একটি কথা আর তা হলো “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে চবে একলা চলোরে“।
স্বীয় ব্যবসায় একা সংগ্রাম করে উদ্যোক্তা আজ আমানা বিগ বাজার, দারুচিনি ট্রাস্ট ফ্যামিলি নিডস, আলমাস সুপার শপ, ওয়ারী বিগ বাজার, লাজ ফার্মার মতো জায়ান্ট সব সুপার শপ গুলোতে অর্জন করেছেন নিজের পণ্যের র্যাক পজিশন এবং অবস্থান নিশ্চিত করেছেন পণ্য প্রাপ্তির এই গুণী উদ্যোক্তা।
যেহেতু স্বাদটা ইউনিক এবং কোয়ালিটির ক্ষেত্রে আপোষহীন তাই সেই স্বাদ নিয়েই বিশ্ববাজার দখল করতে প্রস্তুত আজ তাসলিমার পণ্য। নিজস্ব ৬ টি ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল এবং শত ক্লায়েন্ট আজ উদ্যোক্তার ক্লায়েন্ট লিস্টে।
আজ দেশের সকল স্বনামখ্যাত অনলাইন মার্কেটে অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যবসা করা আত্মপ্রত্যয়ী উদ্যোক্তা তাসলিমা বলেন “আমি বাংলাদেশ এবং বিদেশ জয় করবোই“।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা