উদ্যোক্তা- ভি. জি. সিদ্ধার্থ

৩৫০ একর কফি জমি। ১৪০ বছর এর পারিবারিক ব্যবসা। অনায়াসে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু ম্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটির ইকোনোমিক্সে মাস্টার্স করে তরুণ সিদ্ধার্থ হতে চেয়েছিল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার।পড়াশোনা শেষ করে  সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই কিছু করবেন। এমন কিছু যা তিনি নিজে ডিজাইন করবেন, যা তার সম্পূর্ণ নিজের। বাবা থেকে ৫ লাখ টাকা নিলেন। বাবা বলেছিলেন সিদ্ধার্থ যদি কিছু করতে না পারে তাহলে যেন বাবার ব্যবসায়ে ফিরে আসে। সিদ্ধার্থ নেমে পড়লেন ব্যবসায়ে। ৩ লাখ টাকা দিয়ে কিনলেন জমি আর বাকী ২ লাখ টাকা রেখে দিলেন ব্যাংকে।

সিদ্ধার্থ মুম্বাই গেলেন। দৈনিক ১২০ টাকা হিসেবে হোটেলে এক  রুম ভাড়া করলেন। কোন রকম এপয়েনমেন্ট ছাড়াই জেএম ফাইন্যান্সিয়ালের অফিসে পৌছে গেলেন। সেখানে তিনি ভারতীয় স্টক মার্কেটে ট্রেডিংয়ের জন্য জেএম ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এ ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে যোগদানের সুযোগ পান।

উদ্যোক্তার আপন ভুবন ‘ক্যাফে কফি ডে’র কর্ণার

দুই বছর জেএম ফাইন্যান্সিয়ালে কাজ করার পর সিদ্ধার্থ অনুভব করেন নিজে কিছু করার জন্য তিনি প্রস্তুত। ব্যাঙ্গালোরে ফিরে আসলেন। অবশিষ্ট ২ লাখ টাকা দিয়ে নিজের আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু করলেন। সেই সময়ে স্টক মার্কেটে ধ্বস নামে। সিদ্ধার্থ নতুন বিনিয়োগ খুজতে লাগলেন যা তাকে ভালো একটা মুনাফা দিতে পারবে। মাত্র ৩০,০০০ টাকা দিয়ে স্টক মার্কেটে একটি কার্ড কিনেন, অত্যন্ত সফলতার সাথে তার উদ্যোগকে সফল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক আর স্টক ব্রোকিং কোম্পানিতে রুপান্তর করেন।

১০ বছর পরের কথা। জার্মানির বিখ্যাত কফি ব্র্যান্ড “চিবো”র মালিক এর সাথে সিদ্ধার্থের দেখা হয়। চিবোর মালিক আসেন তাদের কফি খামার থেকে কফি বীজ কিনতে।  তার সাথে সংক্ষিপ্ত এক আলোচনায় সিদ্ধার্থ জানতে পারেন, কি করে শুণ্য মূলধন নিয়ে জার্মানির হ্যামবার্গে মাত্র ১০ স্কয়ার ফিটের একটা ছোট্ট দোকানে শুরু করা ব্যবসা প্রায় ৪০ বছরে বিশ্বখ্যাত মাল্টি মিলিয়ন ডলার ব্যবসা এবং ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম কফি রোস্টারে পরিণত হয়েছে। গল্পটা ভীষণ অনুপ্রেরণা যোগায়, চোখ খুলে দেয় সিদ্ধার্থের। চমৎকার একটা ধারণা পেয়ে যান কাপে কাপে এক বিলিয়ন ডলার সাম্রাজ্য গড়ার। মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎখাত করে নিজে সরাসরি কফি রপ্তানি শুরু করেন ১৯৯৩ সালে, নাম দেন অ্যামালগ্যামাটেড বিন কফি (ABC)। দুই বছরের মধ্যে ABC হয়ে যায় ভারতের সর্ববৃহৎ কফি রপ্তানিকারক।

ক্যাফে কফি ডে’র পরিবেশনা

সারা বিশ্বে বছরে প্রায় $১২০ মিলিয়ন ব্যাগ কফি বীজ উৎপাদিত হয় যার মূল্য প্রায় $৭ বিলিয়ন। একই সময়ে ঐ একই কফি যখন কাপে করে পানীয় আকারে বিক্রি করা হয় তখন এর মূল্যমান দাঁড়ায় $১০০ বিলিয়ন। সিদ্ধার্থ স্থির করে ফেলেছিলেন নিজের মনকে তিনি $৭ বিলিয়ন না, $১০০ বিলিয়ন এর বাজার ধরবেন।

৯০ এর দশক। ইন্টারনেট এর ব্যাপক বিস্তৃতি হচ্ছিল পশ্চিমাবিশ্বে, কিন্তু ভারতের সর্বত্র এর বিচরণ ছিল না। সিদ্ধার্থ সুযোগকে কাজে লাগান। ইন্টারনেট সার্ফ করার পাশাপাশি তরুণ-তরুণীরা তার ক্যাফেতে বসে যেন কফি, কেক, স্যান্ডউইচ এর স্বাদ নিতে পারে সে পরিকল্পনা করলেন। দিন যেতে লাগলো। ভিজি সিদ্ধার্থের প্রতিষ্ঠান ক্যাফে কফি ডে, ব্যাঙ্গালোরের প্রথম ইন্টারনেট ক্যাফে স্থান করে নিল সকলের মনে।

উদ্যোক্তার কেক, কফির বৈচিত্রতা

আজ ক্যাফে কফি ডে শুধুমাত্র একটা কফি শপ ন টিন এজারদের খুব পছন্দের একটা জায়গা। ক্যাফে কফি ডের প্রথম আউটলেটটি চালু করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১১ জুলাব্যাঙ্গালোরের কর্ণাটকে।২০ বছরের মাথায় এসে সারাদেশজুড়ে এর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ২০০০ এরও বেশ। আজ ভারতের ২৮টি রাষ্ট্রের ১৩৫টি শহরে ক্যাফে কফি ডে চেইন শপের প্রায় ১৬০০টি আউটলেট রয়েছে। ৫০০০ কর্মী সপ্তাহে প্রায় ৫০০০০ এর মত ভোক্তাদের সার্ভিস দিচ্ছে। ১২০০০ একর জমিতে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ কফি উৎপাদনকারী এবং বছরে প্রায় ৩৫হাজার টন কফি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তার এবিসি কোম্পানি।

গল্পটা ফোর্বসের নেক্সটজেন উদ্যোক্তার যিনি পারিবারিক ব্যবসাকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। ভারতীয় ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে পৌছে দিতে সমর্থ হয়েছেন এক অন্যরকম জীবনধারা।

 

 

(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)

সুরাইয়া আলম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here