উদ্যোক্তা- সাদিয়া তাজমিন দোলা

“Ellen” গ্রীক শব্দ, যার অর্থ “সুন্দর”। সেই বিউটিফুল নামেই পার্লার এন্ড বিউটিফিকেশন সেক্টরের উদ্যোক্তা সাদিয়া তাজমিন দোলা নাম রাখেন তার বিউটি সেলনের।

টিন এজ থেকেই সৌন্দর্য চর্চায় ছিলো ভীষণ আগ্রহ। পার্লারে মায়ের সাথে চুল কাটাতে যেতেন দোলা। পার্লারের কাজ খুব টানতো তাকে। পার্লারের সার্ভিস নেওয়ার থেকে কাজ শিখতে যাওয়ার আগ্রহ ছিলো বেশী। সেই বয়সেই ত্বকের যত্ন নিতে খুব ভালো লাগতো। তাই ঘরে বসেই নানান এক্সিপেরিমেন্ট চালাতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হলেন দোলা। অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই চিন্তা করলেন পার্লার এবং বিউটিফিকেশন সেক্টরে কিছু একটা করবেন। সে বছরই বিয়ে হয়ে যায় দোলার।


বিয়ের পর এই সেক্টরে কাজ করবার যে সুপ্ত ইচ্ছার কথা জানালেন স্বামীর কাছে। সেই সাথে বাবা মাকেও জানালেন। দোলার পরিবারে এর আগে কেউ ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো না, বাবা মা দুজনেই চাকুরিজীবী। তাই ব্যবসায় সেক্টরে পা রাখতে কেউ স্বায় দিলো না। সব বাবা মায়ের মত দোলার বাবা মাও চাইতেন মেয়ে একটা সিকিউর্ড চাকুরি করুক। কিন্তু দোলা তার সিদ্ধান্তে অনড়। দোলার ভীষণ আগ্রহ দেখে ছোট্ট করে কাজ শুরু করার অনুমতি দিলেন তারা।


উইমেনস ওয়ার্ল্ড থেকে বিউটিফিকেশনের উপর ৩ মাসের একটি কোর্স করলেন। কোর্স শেষে মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ শুরু করলেন দোলা। বাসার বারান্দায় একটি বিউটি চেয়ার, একটি ফেসিয়াল বেড, একটি ফ্রিজ ও বিউটিফিকেশনের বেশ কিছু পণ্য নিয়ে ছোট্ট করে কাজ শুরু করে দিলেন দোলা। বাসায় ছোট পরিসরে এই কাজের পাশাপাশি মাস্টার্সেও ভর্তি হয়ে গেলেন তিনি। এই সময় অনেক ফ্রি সার্ভিস দিয়েছেন তিনি কারণ অর্থ উপার্জন নয় বরং দক্ষতা অর্জন করাই ছিলো দোলার মূল লক্ষ্য। মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে গেলে দোকান খুঁজতে লাগলেন মনে মনে। এবার আর ঘরে থেকে নয়, বাইরে একটা শপ ওপেন করে পার্লারের সার্ভিস দিবেন তিনি। কিন্তু এবারেও বাসা থেকে কেউ উৎসাহ দিলো না। একজন নারীর জন্য বাইরে শপ ওপেন করে ব্যবসা করাটা ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। সকলের শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে জিগাতলায় ৫শ স্কয়ারফিটের জায়গা ভাড়া নিলেন।


মা এবং স্বামীর সহায়তায় ২জন কর্মী নিয়ে শুরু করে দিলেন নিজের স্বপ্নের উদ্যোগ। নাম দিলেন “এলেন বিউটি সেলন”। একজন-দুজন করে কাস্টমার আসতে শুরু করলো দোলার পার্লারে। পার্লারের সার্ভিস বেশ ভালো তাই কাস্টমারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দুই মাসের মধ্যে আরেকজন কর্মী নিয়োগ দিতে হলো। উদ্যোক্তা সাদিয়া তাজমিন দোলা বলেন, “অনেকেই বলেন ব্যবসা শুরু করলে প্রফিট করতে সময় লাগে। কিন্তু আমি প্রথম মাসেই লভ্যাংশের মুখ দেখেছি এবং আমার কর্মীদের বেতনসহ যাবতীয় খরচ এই প্রফিট থেকে চালিয়ে নিয়েছি”।

২০১৩ সালে দিল্লির জাভেদ হাবিবের একাডেমি থেকে হেয়ার কেমিক্যাল সাইন্স এবং হেয়ার কাটিং এন্ড ব্লো ড্রাইং সিস্টেম এই দুইটি কোর্সের উপর দুই মাসের ডিপ্লোমা করলেন। ২০১৪ সালে দিল্লির শেহনাজ হুসেইন ইন্টারন্যাশনাল বিউটি একাডেমিতে কেরালা মাসাজ এন্ড ধারা, হেয়ার থেরাপি এবং দ্যা সাইন্স অব আয়ুর্বেদা এই ৩ বিষয়ের উপর ১ মাসের কোর্স করেন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় শাখা খুলতে হলো এলেনে’র। ২৪শ স্কয়ারফিটের বিরাট পরিসরের দ্বিতীয় ব্রাঞ্চ ওপেন হলো বাড্ডায়। নতুন ৬জন কর্মীর কর্মসংস্থান করলেন উদ্যোক্তা দোলা। এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিউটিফিকেশন ট্রেনিং ইন্সটিটিউট খুললেন। নাম দিলেন “একাডেমি অব এলেন”। যেখানে তিনিসহ মোট ৪জন ট্রেইনার ট্রেনিং দিয়ে বিউটিফিকেশন সেকশনে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এপর্যন্ত প্রায় একহাজার জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেন এবং তাদের মধ্য থেকে সারা দেশব্যাপী প্রায় ৪শ জন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।


উদ্যোক্তার সার্ভিসে, ব্যবহারে, সুনাম বেড়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৭ সালে ৫শ স্কয়ারফিট থেকে ২হাজার স্কয়ারফিটের ব্রাঞ্চে রুপান্তরিত হয় “এলেন বিউটি সেলন”। সে বছরই ব্যাংকক থেকে হেয়ার কেমিক্যাল সাইন্স এর উপর কোর্স করেন এবং ভারতের অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সাইন্স থেকে ইয়োগা বেসড কমপ্রিহেনসিভ লাইফ স্টাইল নামে ১মাসের একটি কোর্স করেন। দেশে ফিরে উদ্যোক্তা দোলা তার বিউটি সেলনের একাংশে চালু করেন এলেন ইয়োগা। কাস্টমারদের বিপুল সাড়া পেয়ে উদ্যোক্তা সাদিয়া তাজমিন দোলা ২০১৮ সালে ধানমন্ডিতে তার এলেন বিউটি সেলনের তৃতীয় শাখা ওপেন করেন। সেখানে নতুন করে ৮জন কর্মীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেন উদ্যোক্তা দোলা।

শিখতে ভীষণ ভালোবাসেন উদ্যোক্তা দোলা। তিনি মনে করেন শেখার কোন শেষ নেই। সেই আগ্রহ থেকেই ২০২০ সালের শুরুতে উদ্যোক্তা দোলা কেরালার স্কুল অব আয়ুর্বেদা এন্ড পঞ্চকর্মা থেকে আয়ুর্বেদিক বিউটি থেরাপি বিষয়ের উপর ১ মাসের কোর্স করেন।

হুহু করে বাড়তে থাকে কাস্টমার। বর্তমানে তিনটি ব্রাঞ্চ মিলে উদ্যোক্তার এনলিস্টেড কাস্টমার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। “এলেন বিউটি সেলন” এর সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে ব্রাইডাল সাজ, মেকওভার, হেয়ারকাট, ফেসিয়াল স্কিনকেয়ার, হেয়ার কালার,স্পা, মেহেদিসহ নানান ধরণের বিউটি সার্ভিস।


গত ৭ই আগস্ট ছিলো এলেনের একযুগ পূর্তি। এই উপলক্ষে উদ্যোক্তা সাদিয়া তাজমিন দোলা তার কাস্টমারদের জন্য রাখেন বিভিন্ন ধরণের অফার। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা সাদিয়া তাজমিন দোলা উদ্যোক্তা বার্তা কে জানান, “শিখতে ভালোবাসি, শেখাতে ভালোবাসি, জানতে ভালোবাসি, জানাতে ভালোবাসি। জানবো, শিখবো আমাদের দেশের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিকে আরো এনরিচ করব”।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here