এক’শ টাকার উদ্যোগে মাসেই লাখ টাকা আয় করছেন সিমা।

0
উদ্যোক্তা রুবাইয়া সিমা

আমাদের সমাজে শুধুমাত্র ছেলেরা বাইরে কাজ করবে এমন একটা ধারণা প্রচলিত রয়েছে। মফস্বলে সে ধারণা আরও প্রকট। সেই ধারণা থেকে বাইরে এসে আজ নিজেকে একটা উদাহরণ হিসাবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন উদ্যোক্তা রুবাইয়া সিমা। যে মানুষগুলার কাছে কিছু দিনের জন্য অপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন আজ তাদের কাছেই তিনি প্রিয় হয়ে উঠেছেন।মেয়েরাও অনেক কিছু করতে পারে সেটা আজ তিনিও প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে ২,২০,০০০(দুই লক্ষ বিশ হাজার) টাকার পণ্য উৎপাদন করছেন এবং ৩,৩০,০০০(তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার) টাকার পণ্য বিক্রয় করছেন। রুবাইয়া সিমা আজ একজন সফল উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা জীবনের শুরুটা কারও জন্যই সহজ হয় না।বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। তার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একদমই সহজ ছিলো না। সমাজে এমন একটা রীতি প্রচলিত আছে যে মেয়েরা পড়াশুনা শিখলে চাকরি করতে হবে। মেয়েরা কোনোভাবে বাইরে কাজ করতে পারবে না। প্রথমে বাধা আসে পরিবার থেকে। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই তাকে ছোট করতে শুরু করে। একটা সময় সবকিছু থেকে দূরে গিয়ে শুধুমাত্র কাজে মনযোগ দেন। কেনো জানি অনেক বেশি মনের জোর কাজ করেছিল তার। চেয়েছিলেন সবাইকে দেখিয়ে দিতে। তবে প্রতিটা পদে পদে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

যশোরের ঝিকরগাছার মেয়ে রুবাইয়া সিমা। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট সিমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঝিকরগাছার কপোতাক্ষ অববাহিকায়। অসম্ভব মেধাবী সিমা শিক্ষা-জীবন দারুণ সফলতার সাথেই পার করেছেন। এসএসসিতে জিপিএ ৪.৮৮, এইচএসসিতে জিপিএ ৫, এবং যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে সিজিপিএ ৩.৩৮ পেয়ে বিবিএ এবং ৩.৫০ পেয়ে এমবিএ পাস করেন। পড়াশোনা শেষ করে কোথাও চাকরি করেননি।কারণ তিনি সব সময় চেয়েছিলেন উদ্যোক্তা হতে।

পড়াশোনা শেষ হবার আগে থেকেই উদ্যোক্তা হবার ভাবনা মাথায় এসেছিল। তবে নানা কারণে তখন সম্ভব হয়নি। সব সময় চেয়েছেন নিজের পরিচয় তৈরি করতে। চেয়েছেন তাকে সবাই চিনুক। সেই চিন্তা থেকেই মূলত তার উদ্যোক্তা হওয়ার ভাবনা মাথায় আসে।

পড়াশোনা শেষ হবার পর যখন কীভাবে কী করবেন এটা নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলেন। তখনই তার হাত ধরতে এগিয়ে এলো ‘ঝিকরগাছা নারী উদ্যোক্তা সংগঠন’। এটা একটা অনলাইন সংগঠন। সেখানে দেখলেন সংগঠনের এডমিন ইশরাত জাহান ইনা আপু মেয়েদেরকে সাবলম্বি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার অনুপ্রেরণাতে উদ্যোক্তা সিমা তার উদ্যোগ শুরু করেন। মায়ের হাতে তৈরি কুশি পণ্য ও মাত্র ১০০ টাকা পুঁজি নিয়েই তার উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়।

তিনি অনেক ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। সেগুলোর মধ্যে কুশি পণ্য, হাতের কাজের পণ্য, থ্রি পিস, বেড সিট, স্টেশনারি, খাবার, বাচ্চাদের বিভিন্ন আইটেম রয়েছে। এই ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করার কিছু কারণ আছে। তিনি মনে করেন এই পণ্যগুলো সম্পর্কে তার যথেষ্ট ধারণা আছে এবং দক্ষতা আছে। তিনি শতভাগ কোয়ালিটি সম্পন্ন পণ্য মানুষকে দেয়ার চেষ্টা করেন। ‘Seema fashion house & varities store’ নামে তার একটা প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে এখন ৭-৮ জন কর্মী কাজ করছেন। তার একটা অনলাইন পেইজ আছে। শো-রুমের নাম অনুসারে পেইজের নাম দিয়েছেন ‘seema fashion house’। তার পণ্য তিন বার পাঠিয়েছেন আমেরিকাতে। দেশের ভিতরে সব জেলাতে তার পণ্য যায়। তিনি চান দেশ ও দেশের বাইরে সব জায়গায় তার পণ্য নিয়ে কাজ করতে। ভবিষ্যতে সবাই তার পণ্য সম্পর্কে জানবে এবং তার পাশে দাঁড়াবে। নিজের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে উদ্যোক্তা সিমা, সিমার মাঝে অসীম হয়ে উঠতে চান।

নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা রুবাইয়া সিমা উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, ‘একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে আজ আমি গৌরব বোধ করি। আমি জানি এখনো আমার শেখার অনেক কিছু বাকি। প্রচণ্ড পরিশ্রম করে আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি। চলার পথ কখনো সহজ হয় না। আজ নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। সামনে আরও উজ্জ্বল দিন দেখার অপেক্ষাতে আছি। হাজার নারীর অনুপ্রেরণা হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন’।

সম্পাদকীয় রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here