উদ্যোক্তা- সোহেলী দীনা

সৃজনশীল কাজের প্রতি ছোটবেলা থেকেই প্রবল আগ্রহ ছিলো দীনার। কোনো কিছু তৈরি অথবা জানার ইচ্ছাটা নানীর কাছ থেকেই পেয়েছিলো। সেই থেকেই স্বপ্ন ছিলো নিজে কিছু করার। অল্প-অল্প সব ধরনের কাজই পারতেন তাই কি কাজ দিয়ে সঠিকভাবে শুরু করবে এটা ভাবতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যায় সোহেলী দীনার।

বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন দীনা। বিয়ের পর একজন গৃহিণী হলেন দীনা। সন্তানরা একটু বড় হওয়ার পর সব সময়ই মাকে উৎসাহ দিয়ে বলতো তুমি কিছু একটা করো,আমরা তোমার পাশে আছি।

শুরুর দিন গুলো খুব মসৃণ হয়না, কোনো কাজ শুরু করাটা সবার জন্যই একটু কঠিন আর বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে তা অনেক কঠিন। তবে পথে না নামলে পথের দিশাও পাওয়া যায়না।

দিনা ভালো সেলাইয়ের কাজ জানতো, কাপড় দিয়ে পুতুলও তৈরি করতো। কাছের মানুষদের উপহার ও দিয়েছে অনেক । কিন্তু সেলাই অথবা বুটিক্স আইটেম নিয়ে কাজ করাটা কিছুটা সময়ের এবং বায়বহুল। কিন্তু তখন তার কাছে পর্যাপ্ত সময়, পুঁজি কোনোটাই ছিলনা। একান্নবর্তী পরিবার, বাচ্চাদের পড়াশুনা সামলে নিয়ে সময় হতনা অন্য কিছু করার। মাঝেমধ্যে নিজেদের আত্মিয়-সজন, পরিচিত জনদের বিয়ের কাজ নিজের উৎসাহে করে দিতেন। অনেকেই জানত ডেকোরেশনের কাজ ভালো পারে দিনা, তাই তাকে দায়িত্ব দিত।সবাই প্রশংসা ও করতো কাজ দেখে।


এরপর ২০১৩ তে মেয়ের বিয়ের ডেকোরেশন এবং তত্ত্ব সাজানোর সম্পূর্ণ কাজটা নিজের হাতে অল্প জিনিস দিয়ে অনেক কষ্ট করে করেছেন।
এরপর ২০১৫ তে তার মনে হলো এই কাজটা বেশ ভালই লাগে তাই এই বিয়ের তত্ত সাজানোর কাজটাকে নিয়ে একটা চিন্তা শুরু করলো এবং হাসবেন্ড কে ভাবনার কথাটা জানালে তিনি শুনে উৎসাহিত করেন এবং কাজ শুরু করার পরামর্শ দিলেন। একটু সাহস পেলো দিনা। নিজ উদ্যোগ এবং স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে কাজে নেমে পরলেন তিনি। এ যেন অজানার পথে পা বাড়ানো।
শুরুতে সব কিছু অচেনা অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করেই এগোতে হয়েছে। কাজের জন্য সেভাবে কেউই চিনতেন না। কতটুকূ গ্রহণযোগ্যতা পাবে তাও জানতেন না, তবে দমে যাননি দীনা সাহসটা ছিলো সবসময়।


কাজ এগোতে থাকে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স করিয়ে ফেলে। প্রথম দিকে অর্ডারের কাজ করতে খুব কষ্ট হত কারন, ডেকোরেশন প্রপস গুলো পর্যাপ্ত ছিলনা। আর খুলনায় তেমন ভাল কিছু পাওয়া যায়না। তাই আস্তে আস্তে নিজে হাতে তৈরি করল প্রপস গুলি, স্টক বাড়িয়েছে। ফুল থেকে শুরু করে অনেক কিছুই নিজের হাতে তৈরি করেছে দিনা।

প্রতিষ্ঠানে শুরু থেকে এখন অবদি কোনো কর্মচারি নেই। সব কিছু নিজেই পরিচালনা করে, বাচ্চারা তাকে সাহায্য করে।কাজের অগ্রগতি দেখে পরিবারের সবাই ভালোভাবে উৎসাহ দিত আনন্দের সাথে দেখত।
দিনা বলেন, প্রথম যেদিন আমার ফেসবুক পেইজে আমার ক্লায়েন্টের দেয়া বিয়ের ডালা ডেকোরেশনের রিভিউ দেখলাম, রাত তখন দেড়টা, আমি এত আনন্দিত হয়েছিলাম যে আনন্দ প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। মনে হচ্ছিল খোলা আকাশের নিচে গিয়ে চিৎকার করে বলি “ও আকাশ শোনো আমিও পারি”।

অবশেষে এইটুকু বলতে চাই, আমি হেরে যায়নি নিজের কাছে, নিজের মনের কাছে। ভালবেসেছি এই কাজটাকে তাই, এই কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পাই।

 

 

ডেস্ক রির্পোট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here