উদ্যোক্তা হিসেবে তিন বোনের যাত্রা

0
উদ্যোক্তা

উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করছেন তারা তিন বোন।উদ্যোক্তা লতিফা বেগম,ছোট বোন উম্মে নাহার বেগম আর তাদের খালাতো বোন সালমা ফেরদৌসী।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরে লতিফা পেশা হিসাবে চাকরিকেই বেছে নিয়েছিলেন।
২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন তৎকালীন একটেল ও পরবর্তীতে যা রবি আজিয়াটা লিমিটেড কোম্পানিতে স্পেশালিস্ট কাস্টমার সার্ভিস হিসাবে।
উদ্যোক্তা হবার ভাবনায় তিনি জানান ” ৯০ এর দশকের কিশোর-কিশোরী ও তরুণ প্রজন্মের সবার মাঝেই কম বেশি ছিল। তখন আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি কোয়ালিটি টাইম কাটানো এই হিসাবে নিজের হাতে বানানো জামা কাপড়ে কাজ করাকে বুঝতাম, গুরুত্ব দিতাম এবং বোনদের নিয়ে এই কাজ করাতে গর্ব বোধ করতাম।” কাপড়ে সুচিকর্ম করা ছাড়াও ব্লক, বাটিক, টাইডাই করে নিজেদের পোশাক বানানোর পাশাপাশি ঘরের জন্য বেড সীট, বালিশের কাভার, টেবিল ক্লথ, ওয়াল ম্যাট বানাতেন। সেই সাথে এ সকল সামগ্রী বানিয়ে আত্নীয়দের গিফট দিতেও ভালবাসতেন তারা। আর তাদের এই সকল কাজে তাদের বাবার নীরব সন্মতির পাশাপাশি মায়ের কাছ থেকে উৎসাহ ও সকল সহযোগিতা পেয়ে এসেছেন সব সময়। ছোট থেকে দেখে এসেছেন উদ্যোক্তার মা নিজ হাতে বানানো কাজের জিনিস দিয়ে ঘর সাজাতে ভালবাসতেন।

তারা সেই সময়ই তাদের কাজের মাধ্যমে পাড়া প্রতিবেশিদের মাঝে নিজস্ব আইডেন্টিটি গড়ে তুলতে স্বক্ষম হয়েছিলেন।

সেই সময় তাদের মাঝে তাদের হাতের কাজের পণ্যগুলি বিক্রি বাট্টার চিন্তা ছিলোনা। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের মনের খুশির যোগান দেওয়া ঘর সাজানো আর উপহার দেবার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল।

তবে ২০১৫ সালের দিকে উদ্যোগের শুরুতেই আগে খোঁজ খবর নিয়েছেন তারা যে ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করতে চাইছেন সেটার বাজার চাহিদা দেশে এবং বিদেশে কেমন। পণ্যের মেটেরিয়ালস গুলোর সোর্স কি হতে পারে। আদৌও তারা যে ধরনের মেটেরিয়ালস গুলো ব্যবহার করতে চাইছেন তাদের দেশে তার সোর্স আছে কিনা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো উদ্যোক্তা এই পণ্য নিয়ে মার্কেটে আছেন কিনা থাকলে তাদের অবস্থান কি এধরনের বিষয়গুলো নিয়ে মোটামুটি ছোট খাটো একটা সার্ভে করে খালাতো বোন সালমাকে সাথে নিয়ে উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ শুরু করেব উদ্যোক্তা লতিফা। ২০২১ সালের জানুয়ারী মাস থেকে অনলাইনে যার পদচারণা।
১৫ হাজার টাকা পুজি নিয়ে হাতে তৈরি গহনা বানানো দিয়ে তাদের উদ্যোক্তা জীবনের শুরু ।

হাতের তৈরি গহনা দিয়ে অফলাইনে তাদের উদ্যোগের শুরু হলেও বর্তমানে তারা অনলাইনে কাজ করছেন নিজেদের হাতে বানানো নকশি শিকা বা ইনডোর প্লান্ট হ্যাঙ্গার নিয়ে। যা তাদের সিগনেচার পণ্য। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হাতে বানানো গহনা, নকশি প্লান্ট হ্যাংগার, ওয়াল হ্যাংঙ্গিং, মোবাইল ব্যাগ, পর্দা, বর্তমানে এই ৫ টি জিনিষ নিয়ে তারা কাজ করছেন।

তাদের উদ্যোগ এখনো অনেক ছোট। কোনো কারখানা বা ফ্যাক্টরি এখনও গড়ে উঠেনি। তাই তারা ৩ বোনই উদ্যোগের সকল কাজ কর্ম করে থাকেন।

তাদের অনলাইন পেইজের নাম সিস্টার’স টুইস্ট ক্রাফটস। তাদের প্রতিষ্ঠানও এ নামেই বড় করে তোলার ইচ্ছা।

তাদের পণ্য গুলো বেশিরভাগ ঢাকার ভেতরেই ডেলিভারি হচ্ছে। ঢাকার বাহিরে দিনাজপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও লাকসামে তাদের ডেলিভারি হয়।

যেহেতু এটি একটি সৌখিন ঘর সাজাবার পণ্য, তাই যারা নিজেদের ঘর গৃহস্থালিকে প্রাকৃতিক বা আর্টিফিশিয়াল ফুল, লতা গুল্ম ক্যাকটাস, সাকুল্যান্ট, সিডাম, দিয়ে সাজাতে চান তারাই কিনে থাকেন বেশি। আর সেজন্য তাদের কাস্টমাইজ কাজ করা হয় বেশি। তাদের এই উদ্যোগের বয়স মাত্র এক বছর। বিদেশে এর প্রচার, প্রসার, চাহিদা বেশি থাকলেও আমাদের দেশে তেমন ভাবে এখনো চালু হয়নি। যার কারণে অনেকেই এ পণ্য সম্পর্কে জানেন না। তাই এখনো রেগুলারলি কোন ফিক্সড এমাউন্ট বা কোয়ান্টিটির পণ্য সেল না হলেও সব মাসেই তাদের কোন না কোন পণ্য স্পেশালি কাস্টমাইজ পণ্য সেল হচ্ছে।

ছাত্রজীবন থেকেই আমরা নানা প্রকার হাতের কাজে উৎসাহী ছিলেন। অবসর সময় আমরা কোন না কোন কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখতেন। যদিও পরে সংসার ও কর্মস্থলের ব্যস্ততায় করে উঠা হয়নি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে খুব তাগিদ অনুভব করতেন কিছু একটা করার জন্য। সেই কিছু একটা করার তাগিদেই তাদের উদ্যোক্তা হয়ে উঠা।

সব সময় দেশ ও দেশীয় ঐতিহ্যের সৃজনশীল কাজগুলি পছন্দ করে এসেছেন উদ্যোক্তা এই তিন বোন। তাদের দেশীয় ঐতিহ্যের তেমনি এক লোকশিল্প হলো শিকা। এই শিল্প বর্তমানে প্রায় নেই বলা চলে। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই শিকা কি তা জানে না। অথচ এটি আমাদের লোকশিল্প আমাদের পল্লী গাঁয়ের ঐতিহ্য ছিল একসময়। সেই শিল্প যাতে একেবারে হারিয়ে না যায় আমাদের দেশ থেকে সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এই উদ্যোক্তা তিন বোনের মিলিত প্রচেষ্টা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে আধুনিক ডিজাইনে নতুনভাবে ঘর সাজানোর কাজে প্লান্ট হ্যাঙ্গার হিসেবে নিয়ে আসেন।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় তিনি জানান “আমাদের এই উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের অনেক পরিকল্পনা আছে, তার মধ্যে নিজেদের পণ্য নিয়ে একটা ব্র্যান্ড তৈরি করা।

দেশে এবং বিদেশে সর্বত্র আমাদের পণ্যের সম্প্রসারণ ঘটানো। এছাড়া নিজেদের উদ্যোগে দেশীয় উপকরণ ও বুননের গুনগত মানের কিছু নতুন পণ্য সংযোজন করার পরিকল্পনা।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্যোক্তা বলেন “ছোট হোক বড় হোক কোনো কাজকেই যেন তারা তুচ্ছ মনে না করে, অসম্মান না করে। আমাদের দেশের প্রতিটা কাজ এবং সেই কাজের সাথে নিয়োজিত প্রতিটা মানুষকেই যেনো সম্মান করে।আর আমাদের দেশে কিন্তু কাজের অভাব নেই। অভাব শুধু কাজ করার মন মানসিকতার।এর থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদের বেড়িয়ে আসতে হবে।”

দেশীয় ঐতিহ্যের নানা ধরনের পণ্য সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। চাইলেই সেই সব পণ্য দিয়ে উদ্যোগ শুরু করা যায়। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রম করার চেষ্টা থাকতে হবে। সেই সাথে ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকতে হবে। বেকার থাকার চেয়ে সততার সাথে নিজের দেশের পণ্য নিয়ে কাজ করার জন্য উদ্যোক্তা সকলকে আহ্বান জানান।

মাসুমা শারমিন সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here