ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের পাথর, নুড়ি-পাথর, শিলা, কাঠ, বাঁশ, পাট ইত্যাদি দিয়ে দৃশ্যকল্প বা পাথর দিয়ে লাইফ স্টোরি করা যা এক কথায় অভিনব এবং সুন্দর।
বাংলাদেশের প্রথম নুড়ি শিল্পের উদ্যোক্তা সালাউদ্দিন পলাশ নুড়ি পাথর দিয়ে তৈরি করছেন এমন অভিনব শিল্পকর্ম।
রাজধানীর অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করা সালাউদ্দিন পলাশ জীবনে কখনো চাকরির কথা মাথায় আনেননি। সব সময়ই চেয়েছেন একজন উদ্যোক্তা হতে। নাটোরে জন্ম নেওয়া পলাশ শিক্ষা জীবন শেষ করেছেন রাজশাহী ও ঢাকায়। আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০১৭ সালে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন তিনি।
কেন উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন জানতে চাইলে সালাউদ্দিন পলাশ উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘‘২০১৫ সালের কথা, ছোট চাচা প্রায় দুই যুগ ধরে নিউয়র্ক এ বসবাস করছিলেন। ভেবেছিলাম স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা গিয়ে দু-তিন বছর থেকে কিছু টাকা পয়সা উপার্জন করে দেশে ফিরে নিজ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করবো। আইএলটিএস করলাম, আবেদন করলাম, কিন্তু ভিসা হলো না। তখনি পাকাপোক্ত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই ব্যবসাটা এই মুহূর্ত থেকেই ভালোভাবে শুরু করবো।’’
বর্তমানে কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? জানতে চাইলে উদ্যোক্তা জানান, ‘‘আমি মূলত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ নতুন একটি আইটেম নিয়ে কাজ করছি যা বাইরের কিছু দেশে বেশ জনপ্রিয়। আইডিয়াগুলো বাইরে থেকেই নেয়া। যার নাম নুড়ি শিল্প। সুন্দর এবং ছোট পাথর দিয়ে স্টোরি মেকিং দৃশ্যকল্প বা পাথর দিয়ে লাইফ স্টোরি করি। যেগুলো সত্যিই সুন্দর এবং নতুনও বটে। এছাড়াও পাটপণ্য, বাঁশের পণ্য, কাঠের পণ্য এবং নকশিকাঁথা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সব প্রোডাক্টগুলো নিজস্ব। নিজেদের কারখানাতে তৈরি। এগুলো ঘর সাজানোর সরঞ্জাম বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সাথে যায়। সরবরাহ করি প্রমোশনাল গিফট হিসাবেও। ১০ থেকে ১২ ধরণের ১৫০টির অধিক পণ্য নিয়ে বর্তমানে কাজ করছি।’’
উদ্যোক্তা পলাশের প্রতিষ্ঠানটির নাম কারুশিল্প। এর একটি স্থায়ী ও একটি অস্থায়ী ফ্যাক্টরি আছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে ১৬-১৭ জন সহযোদ্ধা। তার কারখানায় প্রতি মাসে তিন’শ থেকে পাঁচ’শ প্রোডাক্ট তৈরি হয় এবং করপোরেট কোম্পানির বাল্ক অর্ডার থাকলে ১৫০০-২০০০ ইউনিট উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে। বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় খুব শীঘ্রই বিদেশে পণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু করবে কারুশিল্প।
নুড়িশিল্পে আপনি কী কী উপাদান ব্যবহার করেন জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমি নুড়ি শিল্পের প্রধান উপাদান নুড়ি বা ছোট পাথর। এছাড়াও সাথে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন গাছের ডাল-পাতা, কাঠ, শুকনো ঘাস, বাঁশ, পাটের দড়ি, পাটের ফেব্রিক্স, সুতা এবং উন্নত মানের আঠা।
এই উপাদানগুলো আমি পরিবেশ থেকেই সংগ্রহ করি। নুড়ি সাধারণত বিভিন্ন ধরণের হয় প্রধানত ন্যাচারাল অ্যান্ড পলিশড, ন্যাচারাল গুলো দেশ এর ভেতর থেকে সংগ্রহ করলেও পলিশড নুড়ি গুলো ভারত এবং চীন থেকে সংগ্রহ করি।
বাংলাদেশে নুড়ি শিল্পের ভবিষ্যৎ কী উদ্যোক্তা পলাশ জানালেন, নিঃস্বন্দেহে এ শিল্পের ভবিষ্যৎ খুব ভালো। কারণ এটি একটি অসাধারণ এবং ইউনিক কাজ। নতুন কিছু সবাই পছন্দ করে, তার সাথে পণ্য টা ইউনিক হলে তো সেখানে কোন কথাই থাকে না। এ পণ্যকে আমি করপোরেট এরিয়ার কিছু জায়গায় হট প্রমোশনাল গিফট আইটেম হিসাবে উপস্থাপন করেছি এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলও হয়েছি। নুড়ি শিল্পের বাজার দেশে এবং বিদেশে উভয় জায়গায় সমান। এই আইটেম গুলোর ধারণা আমি বাইরের দেশ থেকেই নিয়েছি।
অভিনব এ শিল্পে অন্যান্যরা আগ্রহী হলে তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্যরা এ শিল্প নিয়ে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই সব সময় তাদের স্বাগতম। তবে কাজ গুলো আপাত দৃষ্টিতে মোটামুটি করা যাবে বা সহজ এরকম মনে হলেও মোটেও তা সহজ নয়। ভালোভাবে সময় নিয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ গুলোকে নিজের আয়ত্তে আনতে হবে। যদিও বাংলাদেশে আমার জানা মতে এ শিল্পে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো কেউ নেই। আমি মালয়েশিয়ায় গিয়ে এবং বাইরের কিছু দেশের বিভিন্ন অনলাইন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে প্রায় দুই বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ গুলো শিখেছি। সুতরাং নুড়ি শিল্পের ওপর কাজ শুরু করতে হলে তাকে সঠিক প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করতে হবে। যে কেউ চাইলেই কাজ টি করতে পারবে শুধু করার মানসিকতা থাকতে হবে।’
নুড়ি শিল্প নিয়ে ভবিষ্যতে অন্যদের শেখার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন পলাশ বলেন, ‘‘ইতোমধ্যেই আমি অনেকের কাছ থেকে কাজ শেখানোর প্রস্তাব পেয়েছি। আমার ইচ্ছা আছে, নিজেকেও সবসময় কাজে ব্যস্ত রাখি। ভবিষ্যতে এই শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব।’’
সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা
আমি ওনার দোকান বা ফেসবুক পেজ খুজে পাচ্ছি না। ওনার কোনো contact number পাওয়া যাবে?