“কেক বানিয়ে লাখপতি উদ্যোক্তা মুমু”

0
ফৌজিয়া ফারিহা মুমু

পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে ফৌজিয়া ফারিহা মুমু। বাবা দিদারুল আলম, গাজী প্রকাশনী এবং জি-ফ্যাশন এর স্বত্বাধিকারী। মা গৃহিনী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি মেঝ। বড় ভাই ‘ডুডল ও স্কিল অন একাডেমি’ নামক উদ্যোগ-এর স্বত্বাধিকারী। ছোট বোন স্টুডেন্ট, পাশাপাশি ‘দি পেইন্টব্রাশ’ নামক উদ্যোগ-এর স্বত্বাধিকারী। মুমুর জন্ম পটিয়ার দক্ষিণ হুলাইনগ্রামে। বেড়ে ওঠাও সেখানেই।

চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট একাডেমি থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান-এ বিবিএ কম্পলিট করে এখন একই বিষয়ে এমবিএ কছেন উদ্যোক্তা মুমু।

ছোটবেলা থেকেই বেকিং ও কুকিং-এর প্রতি আগ্রহ ছিলো। প্রায় সময়ই টুকটাক কিছু না কিছু বানানো হতো বাসায়। কলেজে থাকাকালীন মা ও খালাদের থেকে বেকিং এর উপর হাতে খড়ি; এরপর নিজ আগ্রহেই ইউটিউব থেকে দেখে দেখেই বেকিং এর বিভিন্ন কলা-কৌশল আয়ত্ত করেন। আস্তে আস্তে প্র‍্যাক্টিস-এর মাধ্যমে নিজেকে এবং নিজের কাজকে আরো ভালো করার চেষ্টা চালিয়ে যান। যখন মনে কনফিডেন্স পান যে, ‘হ্যাঁ এখন আমি পারবো’; তখন-ই ২০১৭ সালে অফিশিয়ালি নিজের উদ্যোগ ‘Crafty Cakeoholic’-এর যাত্রা শুরু করেন। যেহেতু ব্যবসায়ী পরিবারেই বেড়ে ওঠা, তাই ব্যবসার প্রতি তার আলাদা একটা আগ্রহ ছিলো বরাবরই। ‘কারো কাছে হাত পাতবেন না, নিজের খরচ নিজেই চালাবেন, নিজেই নিজেকে সবার কাছে পরিচিত করে তুলবেন নিজের কাজ দিয়ে’ – এই চিন্তা থেকেই তার উদ্যোক্তা হওয়া।

প্রথম প্রথম বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে নিজের বানানো কেক গুলো বিক্রয় করতেন মুমু। ধীরে ধীরে তাদের ভালো ফিডব্যাক পেতে শুরু করলেন। তখন ভালোভাবে মার্কেট রিসার্চ করে, ব্যবসার সব প্ল্যানিং করে; ‘Crafty Cakeoholic’ নামক ফেইসবুক পেইজ খুলে পুরোদস্তুর ব্যবসা শুরু করে দিলেন।

শুরুতে মাত্র ৩০০০ টাকা ছিলো তার পুঁজি। বেকিং-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ওভেন এবং বিটার বাসাতেই ছিলো আগে থেকেই, তাই এসব এ আলাদা খরচের দরকার পড়েনি।

প্রথমে দিকে শুধুমাত্র বেকারি স্টাইল ক্রিম কেক দিয়েই শুরু করলেও ক্রমেই ক্লায়েন্ট দের চাহিদা কে মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারন্যাশনাল মানের কাস্টমাইজড থিম কেক, হোমমেইড চকলেট, ডেজার্ট আইটেম, পিৎজা, বার্গার এসবও যুক্ত করেন পর্যায়ক্রমে।

তার কোন কর্মী নেই। ফেসইবুকে অনলাইন বেইসড ব্যবসা। বেকিং থেকে শুরু করে পেইজ চালনা, প্রচারণা, ডেলিভারি সব ই উদ্যোক্তা নিজ হাতেই করেন ।

কেক এবং বেকারি আইটেম শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই ডেলিভারি দেয়া সম্ভব। হোমমেইড চকলেট সারা দেশেই ডেলিভারি দেন।

মাসে গড়ে ৩০-এর অধিক কেক, চকলেট ও অন্যান্য আইটেম রেডি করেন। প্রতি মাসেই ৫০০০০-৬০০০০ টাকার বিক্রয় হয়।

২০১৭ সালে উদ্যোগটি শুরু করলেও, খুব একটা নিয়মিত হতে পারেননি পড়ালেখার চাপ থাকার কারণে। ২০২০ সাল থেকে পুরোপুরি এক্টিভ হন। করোনাকালে পড়ালেখা একটু স্থবিরতায় পড়ার কারণে পুরোপুরি ব্যবসাতেই মনোযোগী হয়ে পড়েন এবং আল্লাহর রহমতে কয়েক মাসের মধ্যেই লাখ টাকা প্রফিট করতে শুরু করেন।

নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা বলেন, ‘নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোলার অভিপ্রায়েই উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। আর ব্যবসায়ী পরিবারে যেহেতু আমার জন্ম, এই বিষয়টা বলা যায় জেনেটিক্যালি ই আমার মধ্যে ছিলো। আবার ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্রীও আমি। সব মিলিয়ে মনে হয়েছে এই ব্যবসার জন্যই উপযুক্ত আমি। তাই এই লাইনেই আসা। আর বেকিং যেহেতু আমার প্যাশন ছিলো এবং এটাতে নিজেকে পারদর্শী করে তুলতে পেরেছি তাই; এটা নিয়েই কাজ শুরু করি।’

ভবিষ্যতে তিনি ‘Crafty Cakeoholic’-কে অফলাইনে নিয়ে যেতে চান। বড় একটা শো-রুম দেয়ার ইচ্ছা আছে তার। পাশাপাশি একটা ট্রেইনিং সেন্টার করার ইচ্ছা আছে তার। যেখানে তার মতো মেয়েদেরকে হাতের কাজের উপর দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে এবং নিজের পাশাপাশি আরও তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি তার পরামর্শ, ‘কোনক্রমেই তাড়াহুড়ো বা হুজুগে গা ভাসিয়ে না দিয়ে – নিজের শক্তিটা কি, কোন বিষয়ে সে পারদর্শী; সেটা আগে নির্ধারণ করে নিতে হবে। ভালোভাবে ব্যবসা সম্পর্কে সবকিছু জেনে, শিখে ও নিজেকে প্রস্তুত করে তারপরেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে তারা নিজেদের পাশাপাশি দেশ এবং দশের ও উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।’

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here