উদ্যোক্তা- কাজী মহসিন মোমিন

বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আয়ের খাতগুলোর যেমন যথাযথ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হবে, তেমনিভাবে আগামীর সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নেও ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পরেই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অন্যতম চামড়া শিল্প।

এম এম এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানের লেদারের ব্যবসাটা শুরুটা হয়েছে ২০০০ সালে। মূল উদ্যোক্তা কাজী মহসিন মোমিন। ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে ১৯৯৯ সালে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে লেদারের উপর ডিপ্লোমা কমপ্লিট করে, হাতিরপুলে ইস্টার্ন প্লাজায় বাবার কিনে রেখে যাওয়া দোকান থেকে ব্যবসা শুরু করেন উদ্যোক্তা মহসিন।

এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মূল লক্ষ্য সম্পর্কে উদ্যোক্তা মহসিন বলেন– “এটা ছিল নিজে কিছু করা এবং কিছু মানুষের কর্মসংস্থান করে দেয়া। সর্বোপরি সমাজও রাষ্ট্রের জন্য কিছু করা। এবং নিজস্ব একটা স্বত্তা তৈরি করা। আমি থাকি বা না থাকি প্রতিষ্ঠানটা থাকবে।

উদ্যোক্তা মহসিন তার বাবার ইস্টার্ন প্লাজায় কেনা দোকান থেকে এম এম এন্টারপ্রাইজ এর যাত্রা শুরু করেন। যা তাকে ব্যবসার প্রাথমিক মূলধন ইনভেস্টমেন্ট এর ক্ষেত্রে করার এই দোকানটি বেশ বড় রকমের ভূমিকা পালন করেছে।এই দোকানটি উদ্যোক্তা মহসিন ব্যবসা শুরু করার আগে ভাড়া দেয়া ছিল। তখন এই দোকানের মালিক উদ্যোক্তা মহসিন কে সব সময় ব্যবসা করার কথা বলতেন ও উৎসাহ দিতেন। পরবর্তীতে উদ্যোক্তা মহসিন ডিপ্লোমা পাশ করার পরে উত্তরার আশকোনাতে একটি ফ্যাক্টরি ভাড়া করে লেদারের ব্যবসা শুরু করেন। সেখানে ১০/১৫ জন শ্রমিক নিয়ে উদ্যোক্তা মহসিন কাজ শুরু করেন। কাজের প্রজেক্ট বুঝে ফ্যাক্টরির শ্রমিক এর সংখ্যা কম বেশি করে নিয়োগ দেয়া হয়।

কাজ শুরুর দিকে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে উদ্যোক্তা মহসিন কে কিছু সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়েছিল, এই প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা বলেন-” আমার মনে হয় একজন উদ্যোক্তা তাঁর কাজের ক্ষেত্রে সমস্যাকে কখনোই সমস্যা মনে করেন না। সমস্যাকে সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই হলো একজন উদ্যোক্তার মূল কাজ। আমার একটি কাজের ক্ষেত্রে একবার আমি ১২ লক্ষ টাকার পণ্য সরবরাহ করে, সেই কাজের বিল ভেঙে, ভেঙে তুলতে আমার বেশ কয়েক বছর লেগে গিয়েছিলো। তখন আমাকে অনেক কষ্ট করে টাকা গুলো ম্যানেজ করতে হয়েছে। যা কিনা ব্যবসার ক্ষেত্রে চালান যোগান ও সরবরাহ রাখা কষ্টকর হয়ে পরে। এরপর আমি যখন দেখলাম যে প্রায় অনেক প্রতিষ্ঠান এরকম করছে তখন কন্ডিশন দিলাম আগে কিছু টাকা আমাকে অ্যাডভান্স করতে হবে এরপরে আমি কাজ শুরু করব, যখন কাজটি সম্পন্ন হবে তখন পণ্যটি সরবরাহ সম্পন্ন হলে আমাকে পুরো টাকাটা দিয়ে দিতে হবে। এভাবেই গ্রাহকের সাথে পণ্য লেনদেনের বিষয়টি সমাধান করা হয়ে থাকে”।

তারপরও ফ্যাশন প্রিয় মানুষের কাছে লেদার প্রোডাক্ট খুব প্রিয় হলেও বর্তমানে এই লেদার প্রোডাক্ট তৈরিতে কাচাঁমালের দাম কম থাকলেও কেমিক্যাল এবং বাইরে থেকে লেদার তৈরির কেমিক্যাল আমদানি করে আনতে হয়। যার কারণে কস্টিং অনেক বেড়ে যায়। এজন্য উদ্যোক্তা যখন পণ্যটি বিক্রি করতে যায় তখন ক্রেতাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়-“বাজারে চামড়ার দাম কম অথচ চামড়ার তৈরি পণ্যের দাম কেন এত বেশি?

এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা বলেন, “একটি পণ্যের ভিতর কেমিক্যাল, একসেসরিজ, ওয়ার্কার, প্রশাসনিক কস্ট থাকে যা সবকিছু মিলিয়ে পণ্যের দামটি বৃদ্ধি পায়, যা একটি সমস্যা।

উদ্যোক্তা মহসিন বলেন -” বর্তমানে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস গুলোতে সাফল্যের সাথে কাজ করছি। আমরা প্রথমে যখন কাজ শুরু করি তখন আমি সাড়ে তিনশো জ্যাকেটের অর্ডার পেয়েছি। যা কিনা বিদেশে রপ্তানি করেছি “এম এম এন্টারপ্রাইজ শুধুমাত্র যে বাংলাদেশের ভিতরে কাজ করছে তা নয় তাঁরা দেশের বাইরেও এক্সপোর্ট করার জন্য কাজ করছে । আভ্যন্তরীণ দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে এম এম এন্টারপ্রাইজ এখন সিঙ্গাপুর,জাপানেও লেদারের পণ্য বিক্রি করেছে। পাশাপাশি ডেনমার্কেও লেদার পণ্য বিক্রির করার পরিকল্পনা করছে”।

বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস ও বিদেশের চাহিদা মিটিয়ে ও উদ্যোক্তা মহসিন তাঁর প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজস্ব শোরুম মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে যার কারণে উদ্যোক্তার ব্যবসায় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।যেখান থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দের প্রোডাক্টগুলো কিনতে পারেন।

আমাদের এই শোরুম থেকে দেশি -বিদেশী গ্রাহকের কাছে থেকে বিভিন্ন সময়ে ছোট -বড় কাজের ভালো মানের অর্ডার পাই, এ ছাড়া মাঝে মাঝে কিছু মেলায় কাজ করলে তখন বিভিন্ন রকমের ভালো ভালো কাজের অর্ডার আসে।

ব্যবসার যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা মহসিন একাই প্রধান কর্ণধার হিসাবে যে সিদ্ধান্তটা নেওয়া উচিত সে ভাবে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করেন।

ভ্যাট, ট্যাক্স এর ব্যাপারে উদ্যোক্তা মহসিন বলেন -“সরকারের যে ভ্যাট, ট্যাক্স আছে বা এগুলো দেয়ার জন্য যে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা আছে আমরা উদ্যোক্তারা কিন্তু ভ্যাট, ট্যাক্স দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। ইনশাআল্লাহ আমরা সেই ভ্যাট, ট্যাক্স দিব। কিন্তু মার্কেটে যারা ছোট,ছোট উদ্যোক্তা আছে তাদের জন্য এমন একটা ব্যবসা বান্ধব সিস্টেম রাখা উচিত যাতে করে উদ্যোক্তারা ব্যবসা পরিচালনায় কোনো রকম সমস্যার মোকাবেলা করতে না হয়।

উদ্যোক্তা মহসিন দেশের চামড়া শিল্পের ভবিষৎ প্রত্যাশা নিয়ে বলেন- “বাংলাদেশের জন্য চামড়া শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত, যা সুষ্ঠ পরিচালনা ও যথার্থ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে বিশ্ব বাজারে চামড়া শিল্পের সহজ ও কার্যকর প্রবেশাধিকার অর্জন এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় টিকে থাকার জন্য জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে”।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here