অনিলা জ্যোথী রেড্ডি

স্বপ্ন দেখাটা খুব সহজ তবে সেটা পুরণের জন্য পরিশ্রম এবং দৃঢ় সংকল্প রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা কষ্টের। এই কষ্টের জন্যই অনেকেই তাদের স্বপ্ন পুরণের আশা ছেড়ে দেয়। তবে এমন কিছু মানুষ থেকে যায় যারা প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে হলেও সফলতা অর্জন করে। আসুন জেনে নেই সেই সফলতা অর্জন করা নারীর কথা:

অনিলা জ্যোথী রেড্ডি নামটি তাদের তালিকায় একটি। দারিদ্র্য জর্জরিত হয়ে জ্যোতির বাবা তাকে এতিমখানায় রেখেছিলেন যে তিনি এতিম, তার মা নেই এই কথা বলে। তিনি তার পুরো শৈশব ওই এতিমখানায় কাটিয়েছেন। তবে সেই ছোট্ট চোখ এবং নিষ্পাপ মনে একটি বড় স্বপ্ন ছিল। জ্যোথী জানত না যে তার পথে কী আসতে চলেছে। তবে তিনি এটাও জানতেন যে যাই আসুক তিনি হাল ছাড়বেন না। যখন জ্যোথির বয়স ১৬ বছর তখন তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিয়ের প্রথম কয়েক বছর তাকে মাঠে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে এবং তিনি প্রতিদিন মাত্র পাঁচ টাকা উপার্জনের বিনিময়ে সারাদিন কাজ করতেন। তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সেই মা হয়েছিলেন এবং ঠিক পরের বছরই আবার তাঁর দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেছিল।

জ্যোথী বাড়ির সমস্ত কাজ করতেন, তাঁর দুই মেয়েকে দেখভাল করতেন আবার মাঠের কাজেও সহায়তা করতেন। একটি কৃষক পরিবার হওয়ার জন্য তার পরিবারটির আর্থিক অবস্থা কখনও স্থিতিশীল ছিল না। এমনকি তার বাচ্চাদের জন্য ওষুধ বা খেলনা কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থও ছিল না। তিনি এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন।

তিনি মাঠে কঠোর পরিশ্রম করতেন। কেননা তিনি চান না যে তার সন্তানরা নিরক্ষর হোক এবং তিনি চেয়েছিলেন তাদের সর্বোত্তম শিক্ষা দিতে। যেহেতু তার  ভাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না তাই তিনি তার বাচ্চাদের তেলুগু মিডিয়াম স্কুলে পাঠাতেন। সেখানে প্রতি মাসে তার কষ্টার্জিত টাকার ২৫ টাকা বেতন দিতে হতো।

ধীরে ধীরে জ্যোথী সমস্ত বাধা নিষেধ কাটিয়ে উঠতে শুরু করে এবং নিকটবর্তী খামারগুলোর লোকদের পড়ানো শুরু করেন। এছাড়াও তিনি সরকারী চাকরীও পেয়েছিলেন, সেখানে ওয়ারালালের নিকটবর্তী গ্রামগুলোর মহিলাদের জন্য সেলাইয়ের ক্লাস পরিচালনা করতে তাকে যেতে হতো। জ্যোথী তার এই নতুন কাজ থেকে মাসিক ১২০ টাকা আয় করতেন।

একদিন জ্যোথী তার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করেন, যিনি তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলো এবং বলেছিলেন যে তিনি জীবনে অনেক বড় কিছু করতে পারবেন। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন আমেরিকা যাওয়ার এবং কোনো সময় নষ্ট না করে জ্যোথী কম্পিউটার সফটওয়্যার ক্লাসে ভর্তি হন। তিনি তার বাচ্চাদের আরও ভাল জীবনযাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

অবশেষে, জ্যোথী তার চাচাতো ভাইয়ের সহায়তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পায় এবং সেখানের নিউ জার্সিতে থাকা শুরু করে। নতুন দেশে নিজেকে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ করতে তিনি অনেক ছোট ছোট চাকরি করতেন। যেমন তিনি অন্যর বাসা পরিষ্কার করে দিতেন, গ্যাস স্টেশনের দায়িত্বে ছিলেন এবং সফটওয়্যার আড়কাটির কাজ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে দেননি।

বর্তমানে জ্যোথীর ফিনিক্স, অ্যারিজোনায় অবস্থিত ১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের আইটি সংস্থার সিইও হিসেবে নিযুক্ত আছেন । বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার ৬ টি আর ভারতে ২ টি বাড়ি রয়েছে।

যদিও জ্যোথী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই স্থায়ী হয়ে যান তবে তিনি কখনও ২৯ আগস্ট ভারতে আসতে ভূলে যান না কেননা সেই দিনটি তার জন্মদিন। অতীতের কথা স্মরণ করতে তিনি এতিমখানাগুলিতে যান এবং বাচ্চাদেরকে উপহার দেন।

সবকিছুর বাইরেও জ্যোতি এমন একজন মানুষ যিনি সকল প্রতিকূলতার পরেও তার স্বপ্নগুলিকে পুরণ করেছিলেন। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার পরে, তিনি প্রমাণ করেছেন যে, কিছু করার আবেগ এবং চেষ্টা থাকলে তা করা সম্ভব। তিনি প্রকৃতপক্ষে তরুণ প্রজন্মের কাছে আলোকরশ্মি।

 

হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here