উদ্যোক্তা- জিনাত আবেদীন

নিজের স্বপ্ন পূরণ কেন নয়! অন্যের ইন্ডাস্ট্রিতে জব করে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শুধু পরিশ্রম করে। তাই নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে কাজের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন আজকের উদ্যোক্তা।

জিনাত আবেদীন। ফিন্যান্স নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন দেশের নাম করা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কিন্তু চাকরি করার ইচ্ছে ছিলো না তার। চাকরি করার চেয়ে নিজে কিছু করতে চেয়েছেন জিনাত।

এদিকে পড়াশোনা ছাড়া কখনো তেমন কোনো কাজ কখনও করা হয়নি। অন্য সবার মতো তেমন কোনো কাজ করার সুযোগও মেলেনি। নিজের কিছু করার ইচ্ছে থেকে জিনাত ভাবতে থাকেন কি করা যায়! হঠাৎ মাথায় এলো ছোটবেলা মা ও নানুর পাশে দাঁড়িয়ে থেকে রান্না শেখার কথা। জিনাত চিন্তা করলেন রান্না নিয়েই কিছু একটা করবো। পরে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ এবং খাবার নিয়েই উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন জিনাত আবেদীন। ২০১৯ সালের ২ মার্চ শুরু হলো স্বপ্নের পথ চলা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খুলে ফেললেন ‘ফুড সার্ভিং বাই জিনাত’ নামের একটি পেইজ।

পেইজের মাধ্যমে জিনাত বিক্রি শুরু করলেন সাদা ভাত, নানা ধরনের ভাজি, শুটকিসহ নানান ধরনের ভর্তা। সেই সাথে ইলিশ ভাজা, মুরগির ঝাল ফ্রাই, গিলা-কলিজা দিয়ে বুটের ডালসহ নানা পদের দেশীয় খাবার। বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনে খাবার সরবরাহ করা শুরু করলেন তরুণ এই উদ্যোক্তা অর্ডার ভিত্তিতে। দিনে দিনে বড় হতে থাকে তার ‘ফুড সার্ভিং’। অনলাইনে সুস্বাদু খাবারের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেন জিনাত।

নিজ উদ্যোগে বাঙ্গালী খাবারের সৃজনশীলতা, বহুমাত্রিকতা এবং ভিন্ন মাত্রায় এর উপস্থাপন, সঠিক সময়ে ডেলিভারি এবং সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সাথে সার্ভিং ম্যানেজমেন্টের পারদর্শিতা প্রমাণই মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে এই তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, “অটল বিশ্বাস নিয়ে এই ব্যবসায় নেমেছিলাম”। খাবার নিয়ে কাজ শুরু করার দ্বিতীয় মাসেই মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বৈশাখী আয়োজনের খাবার সরবরাহ করার জন্য কোটেশন জমা দেন জিনাত। অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে খাবার সরবরাহের কাজটিও পেয়ে যান এই ফুড সার্ভিং উদ্যোক্তা।

প্রথম মূলধন ছিলো বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা। বন্ধুরা ১ লাখ চার হাজার ৪৫০ টাকা দিয়ে আস্থা রেখেছিলো জিনাতের উপর। জিনাত সেই আস্থার সম্মান রেখেছেন। নিজের মেথা ও পরিশ্রম দিয়ে সফল হয়েছেন চলার পথের বাঁকে বাঁকে। বন্ধুদের টাকা তো সম্মানের সাথে ফিরিয়ে দিয়ে নিজ উদ্যোগে সফলতা এনে এগিয়ে গিয়েছেন প্রসংশা কুড়িয়ে।

একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে ফুড সার্ভিং এ একটি বড় কর্পোরেট অর্ডার সফলতার সঙ্গে শেষ করেছেন, যা তাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করেছে। এ বিষয়ে জিনাত বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে জিতে নেওয়া অর্ডারটি কোনো ধরনের ভুল ছাড়াই শেষ করেছে। এমন কি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা দারুণ প্রসংশা করেছেন। পুরো প্রোগ্রামটা করেছিলাম ৮১ হাজার টাকায়। কর্ম দক্ষতা ও সুস্বাদু খাবারের কারণে কর্তৃপক্ষ অনেক খুশি হয়েছিলো। তারা জানিয়েছেন, এযাবৎকালে তাদের কোনো অনুষ্ঠানের সবচেয়ে ভালো খাবার সরবরাহ করতে পেরেছি আমরা।

খাবারের গুণগত মানে এবং সার্ভিং ম্যানেজমেন্টে খুশি হয়ে ব্যাংকের জনৈক কর্মকর্তা বলেছেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের গত কয়েক বছরের প্রোগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ও প্ল্যানড ফুড ক্যাটারিং ইভেন্ট দিতে পেরেছি আমি। এই কথাটি শুনে নিজের প্রতি বিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছে। মনে অনেক সাহস পাচ্ছি কাজ করার। মাত্র পাঁচ টাকার ব্যবধানে অন্যদের সঙ্গে কোটেশনে জিতে কাজটি পেয়েছিলাম এবং আমি আমার বেস্টটা দিয়েছি তাই পরিশ্রম সার্থক মনে হচ্ছে।

“আমার ক্যাটারিং জীবনের সবচেয়ে বেশী মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করতে পেরেছি আজ”। দুই দিন আগের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমনটাই লিখেছেন জিনাত।

“আলহামদুলিল্লাহ্, ঢাকাস্থ মিনার মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসার ১৭৫ জন শিক্ষার্থী, শিক্ষক-স্টাফ মেম্বার ও খাবার বিতরণে সহায়তাকারী কিছু সংখ্যক ভলান্টিয়ার সহ মোট ২১৫ জনের দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে আজ শুক্রবার বাদ জুম্মা!”

ব্যবসায়িক লভ্যাংশের একটি অংশ দিয়ে অন্যান্যদের আর্থিক সহায়তায় কাজ করবার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানান তরুণ এই উদ্যোক্তা।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে জিনাত বললেন, “ধৈর্যের ফল অনেক মিষ্টি হয়”। ব্যবসা হলো এমন একটি কাজের ক্ষেত্র যা ধৈর্যসহকারে করলে অবশ্যই সফলতার পথ খুঁজে পাবেন।

নিজের মনের কথাই শুনেছেন জিনাত, হয়েছেন একজন উদ্যোক্তা। অনলাইনে যাত্রা শুরু করে আজ যেকোনো আয়োজনে ১ হাজার মানুষের জন্য খাবার সরবরাহ করবার মতো যোগ্যতা অর্জন করেছে উদ্যোক্তার উদ্যোগ ফুড সার্ভিং বাই জিনাত।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here