উদ্যোক্তা- সাদিয়া ইসলাম

২০১০ সাল। এমআই এসটি থেকে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি সম্পন্ন করলেন এক তরুণী। ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করা অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় সাদিয়া ইসলামের। বাবা জনাব আমিনুল ইসলাম, পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বাবা মা দুজনেই চাইতেন সাদিয়া এবং নাজিয়া দুই বোন ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ার হোক।

ছোট মেয়ে সাদিয়া ইসলাম ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেশ কিছুদিন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করলেন। ঘরে থেকে সংসার সামলে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সার হিসেবেই কাজ চালিয়ে গেলেন সাদিয়া ইসলাম। একই ধরনের কাজ একই সেক্টরে নিজের কর্ম ও কর্ম সংক্রান্ত আগ্রহবোধ করছিলেন না সাদিয়া। চিন্তা করতে থাকলেন এমন কিছু করবেন যা কিনা তাকে দেবে নতুন কোন একটা ভূবন আবিষ্কার করবার কাজ। অনন্য কোনো উদ্যোগ হবে সেটি। নিজেই হবেন অভিনব উদ্যোগের উদ্যোক্তা।

স্বামী জনাব কামরুল হাসান। পেশায় প্রকৌশলী এবং ডিজাইনার। ভীষণ উৎসাহ প্রদান করলেন স্ত্রীর এমন চিন্তায়, উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ এবং সাপোর্ট নিয়ে এগিয়ে এলেন, দাড়ালেন পাশে। সাদিয়া ইসলাম ভাবলেন, তথ্য প্রযুক্তির যুগ। ডিজিটাল সকল সুবিধা মানুষের জীবন এগিয়ে চলেছে। কত কাজইতো আজ অনলাইনে সারা দেন মানুষ। অনলাইনেরই তো জয় জয়কার।

আচ্ছা অনলাইনে “টেইলরিং সার্ভিস” হলে কেমন হয়?
আজকালকার যুগে কর্মব্যস্ত কর্মজীবি নারীরা, কর্পোরেট নারীরা অফিস সেরে দর্জির কাছে গিয়ে কিংবা কোনো মার্কেটে ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে অনেক দূর থেকে যাওয়া আসা করে। নিজের পোশাক নিজের মাপে বানাতে, ডিজাইন বোঝাতে এবং সর্বোপরি সঠিক সময়ে পোশাক ডেলিভারি পেতে হিমশিম খেতে হয়।
সাদিয়া চিন্তা করলেন অনলাইনে এই সার্ভিস দিলে কেমন হয়?

যেমন ভাবা তেমন কাজ। একটা ফেসবুক পেজ তৈরি করলেন সাদিয়া। নিজের স্বপ্নের উদ্যোগের নাম দিলেন “স্টাইল ক্যানভাস”। শুরুতেই নিজের ডিজাইন করা ছোট বাচ্চাদের পোশাক বিক্রয় করবার উদ্যোগ নিলেন উদ্যোক্তা সাদিয়া ইসলাম। এফ-কমার্সে নিজের উদ্যোগের কথা ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে জানালেন। জানালেন নিজের অভিনব চিন্তার কথা। বললেন ফেসবুক পেজের কথা। অর্ডার আসতে শুরু করলো। একটি মেশিন এবং ৩জন কর্মী নিয়ে উদ্যোগ হলো শুরু। একজন টেইলর মাস্টার, একজন সুইংম্যান এবং একজন ডেলিভারি ম্যান, তরুণ উদ্যোক্তা সাদিয়া ইসলাম এগিয়ে যেতে থাকেন স্বপ্ন হরণের উদ্যোগে, বাস্তব কর্ম জগতে।

অর্ডার বাড়তেই থাকে অনলাইনে। ফোনে আসতে থাকে ক্রেতার অর্ডার। ডোর টু ডোর সুইং সার্ভিস এবং ফ্রি হোম ডেলিভারি। শুধুমাত্র নারীদের জন্য।

খুব ব্যস্ত আপনি? দর্জির কাছে যেতে ট্রাফিক জ্যামের কারনে বসে থাকতে চাননা, গাড়ির পার্কিং নেই বলে ঝামেলা পোহাতে চাচ্ছেন না? এমন যারা আছেন স্পেশালইজড সব ক্রেতাদের টেইলর সার্ভিস টি বাড়িতে দেবার সমস্ত আয়োজন এবং উৎকর্ষতা সাধনে তৎপর হলেন উদ্যোক্তা সাদিয়া ইসলাম।

টেইলরিং, অলটারেশন, এমব্রয়ডারি, রেডিমেড ড্রেস মাপ নেওয়া, তৈরি করা এবং বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দেয়া শুরু হলো হরদম। বুক এ শিডিউল/ওয়ার্ক ইন প্রসেস ক্যান অল ডেলিভারি। সকল অনলাইন সেবা টেইলরিং এ সাদিয়া সাজালেন তার গ্রাহকদের জন্য। অর্ডার আসতে থাকে হুহু করে। পরের বছরই বাড়াতে হলো লোকবল। যুক্ত হয় আরো তিন জন কর্মী সুদক্ষ কর্মী বাহিনী সাজে সেবার অনন্য মনোভাব নিয়ে এবং অতি প্রাচীন একটি ট্রেন্ড কে অনলাইন প্লাটফরম এ আবিষ্কার করে।

প্রথম প্রথম উদ্যোক্তার কর্মের অঞ্চল ছিলো নিজ এলাকা এবং অনলাইনে। নিজ গ্রুপে ও ফেসবুক রেফারেন্স ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তা ধীরে ধীরে প্রায় পুরো ঢাকা জুড়ে। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, গুলশান, বনানী আজ আর বাদ নেই কোনো এলাকায়। কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী চলে অর্ডার নেয়া। সপ্তাহের দুটি দিন শুক্র ও শনিবার কর্মজীবি, কর্পোরেট নারীরা কিংবা ব্যস্ত গৃহিণীর। যখন একটু অবসর পান তখন তাদের দেয়া সময় অনুযায়ী সাদিয়া ইসলামের স্টাইল ক্যানভাস থেকে টেইলর মাস্টার চলে যান মাপ নিতে। তারপর শুরু হয় মেকিং এর পালা। ড্রেস তৈরি করার পর কাস্টমার এর কনভেনিয়েন্ট টাইমে ডেলিভারিম্যান তৈরিকৃত পণ্য বা পোশাক পৌঁছে দেন ক্রেতার বাসায়। উদ্যোক্তা সাদিয়া উদ্যোগ স্বার্থকতার রূপ পায়। মাসে প্রায় লক্ষ টাকার অর্ডার আসে উদ্যোক্তা সাদিয়ার স্টাইল ক্যানভাসে।

১লা বৈশাক, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ, ১লা ফাল্গুন, ১৬ ডিসেম্বর, ঈদ, পূজা সব উৎসবে ও বিশেষ দিনে নিজস্ব ডিজাইনে পণ্য তৈরি করেন সাদিয়া ইসলাম এবং তার সেল টিও হয় স্টাইল ক্যানভাসে। উদ্যোক্তা সাদিয়া ইসলাম আজ অনলাইনে সৃষ্টি করেছেন নিজ উদ্যোগে গ্রাহক। গ্রাহক সংখ্যা আজ রেজিস্টার্ড ২৫০ জন উৎসবে তা বেড়ে দাড়ায় প্রায় দ্বিগুণ।

সুদক্ষ কর্মী বাহিনী নিয়ে টেইলর মাস্টার, সুইংম্যান, ডেলিভারি ম্যান এমন সব পদে সৃষ্টি করেছেন কর্মী।
মাত্র ১টি মেশিন, দৃঢ় মনোবল এবং নতুন কিছু করবার উদ্যোগ নিয়ে আজ একজন সফল উদ্যোক্তা সাদিয়া ইসলাম ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে পরিচালনা করছেন ১২ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ব্যবসা।

ডেস্ক রিপোর্ট উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here