উদ্যোক্তা - ফারহানা ফারুক

স্বপ্ন মানুষকে বাঁচতে শিখায়। মানুষ বড় হয় তার স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে। স্বপ্ন পূরণের জন্য মানুষ স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় সফলতার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। শ্রম দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করে। তেমনি ভাবেই ফারহানা ফারুক চেষ্টা করেছেন  নিজেকে সফল করার।

ফারহানা ফারুক পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। বর্তমানে চাকরি করছেন একটি ফ্যাশন হাউজের ডিজাইনার হিসেবে। পড়াশোনা করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজিতে; ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর।

২০১২ সালে বন্ধু বান্ধবীরা মিলে দৃক গ্যালারীতে একটা মেলার আয়োজন করেন। ১৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। সাথে সাথে “কার্পাস” নামক ফ্যাশন হাউসে  ডিজাইন দিতেন।

কিন্তু প্রেগন্যান্ট হওয়ার কারণে ব্যবসা ধীর গতিতে চলছিল। বাচ্চা একটু বড় হল ব্যবসা আবারো আগের মত চলতে লাগল কিন্তু বেশিদিন চলল না। কারণ তার ছোট মেয়ে তখন বড় ধরণের দুর্ঘটনার শিকার হয় । ফলে ব্যবসায় আবারো স্থবিরতা নেমে আসে।

ফারহানা খিলক্ষেত লেক সিটিতে নিজের বাসা থেকেই শুরু করেছেন ব্যবসা। যেহেতু ধীর গতিতে চলছিল তাই ভেবেছিলেন শো-রুম দিলে হয়ত ব্যবসাটা ভালভাবে চলবে। তাই ২০১৭ সাল লেকসিটিতেই একটা শো-রুম দিলেন। কিন্তু শুরু হল আরেক বিপত্তি; বিক্রি বেশি হয় না। নতুন দোকান, সব মিলিয়ে নিজের পকেট থেকে শো-রুম ভাড়া দেওয়া লাগত বলে জানান ফারহানা। এক পর্যায়ে শো-রুম বন্ধ করে দেন।

অনলাইন সম্পর্কে জানলেও ওই সময়টাতে অনলাইন ব্যবসাকে কাজে লাগাতে পারেননি এই উদ্যোক্তা।

তাই বলে থেমে যাবেন! থেমে থাকেন নি! নিজের বিশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়েছেন “ফারাহ’স ভ্যালি”। এখন এই নামে পেজ খুলে অনলাইনে করছেন ব্যবসা।

সহযোগিতা পেয়েছেন পরিবার থেকে এবং তার হাজব্যান্ড ওমর ফারুক এর কাছ থেকে। ওমর ফারুক সব সময় বলতেন  আমি তোমার সাথে আছি, তুমি এগিয়ে যাও। পরিবারের বাইরে সব থেকে বেশি সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ‘উই’ (উমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম) থেকে। কার্পাসের নিলা আপু সব সময় আমাকে বলত, তুমি অনেক দূর যাবা, অনেক ভাল কিছু করতে পারবা। তিনি আমাকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন বলেন ফারহানা।

ফারহানা আরো বলেন, নতুন উদ্যোক্তারা যখন ব্যবসা শুরু করে তখন তারা জানেনা কোথায় যেতে হবে, কোথায় থেকে কাজ শিখতে হবে। এইগুলো এক রকম বাধা বলা যায়। আমিও এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। দেশি পণ্য যখন আমি ডিজাইন করব তখন এর মূল্য বিদেশি পণ্যের থেকে বেশি হয়ে যায়, যার ফলে ক্রেতারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এইটা একটা অনেক বড় বাধা দেশি উদ্যোক্তাদের জন্য।

ফারাহ’স ভ্যালীতে নিজস্ব ডিজাইনের শাড়ি, ড্রেস, গহনা পাওয়া যায় এবং সামনে কসমেটিকস ও পাওয়া যাবে। গহনার সর্বনিম্ন মূল্য ৩০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ২০০০ টাকা পর্যন্ত। ড্রেসের মূল্য ৬০০-২০০০ টাকা এবং শাড়ির মূল্য ১২০০- ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ব্যবসা করার আগে বুঝে নিতে হবে কোন দিকটায় যাবেন তারপর শুরু করা উচিত। বাধা আসলে আপনি থেমে না গিয়ে সমাধান করে সামনে অগ্রসর হতে হবে। বিভিন্ন ওয়ার্কশপ গুলোতে উপস্থিত হয়ে কিছু শেখা জরুরী।’

ফারহানা ফারুক একজন সফল উদ্যোক্তা। পরিবার, সন্তান, অফিস সামলিয়ে এখন সামলাচ্ছেন ব্যবসা। মনের জোর না থাকলে হয়ত সম্ভব হত না এই উদ্যোক্তার সফল হওয়া। তাই মনের জোর এবং বিশ্বাস, স্বপ্ন এবং সততা নিয়ে সামনে এগিয়ে গেছেন ফারহানা। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে কথাটা যে একদম সত্য তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফারহানা ফারুক।

খাদিজা ইসলাম স্বপ্না 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here