যশোর শহরে ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টির বেড়ে ওঠা। প্রকৃতির সাথে সান্নিধ্য তার। নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা ভাবতে উপস্থাপন করতে চান। অদম্য মনোভাব। মন খারাপ হলে চলে যান কপোতাক্ষের পাড়ে। যশোর এমএম কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত তিনি। হঠাৎ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। সংসার নামক সুতোয় বাঁধা পড়েন তিনি।
তবুও বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু চাকরির জন্য দৌড়াদৌড়ি আর ভালো রাগে না। ভাবলেন নিজে কিছু করবেন। সেই ভাবনা থেকেই মাশরুম চাষের পরিকল্পনা।
২০১৬ সালে শুরু করেন মাশরুম চাষ। মাত্র আড়াই লাখ টাকা নিয়ে শুরু করেন তার ব্যবসা। যশোরে প্রথম নারী মাশরুম চাষী হিসেবে গড়ে তোলেন নিজেকে। নাম দিলেন বৃষ্টি মাশরুম সেন্টার। ২০১৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন মাশরুম চাষের। ১৫ জন কর্মচারি নিয়ে কাজ করেন তার কর্মযজ্ঞ। সফলতাও পেলেন।
যশোরের বিভিন্ন স্থানে তার মাশরুমের চাহিদা বাড়তে থাকে। নিজেও সময় দেন সেখানে। তবে যশোরে বীজ না পাওয়ায় তাকে ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। ঢাকার মাশরুম উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। বিভিন্ন সংস্থায় তিনি আলোচিত হন। প্রচুর পরিশ্রমী বৃষ্টি নিজেকে অনেক উঁচু স্থানে দেখতে চান।
ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, মাশরুম থেকে নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন সম্ভব। আমি একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি। মাশরুম থেকে উৎপাদন করতে চাই সাবান সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য।
তিনি বলেন, প্রতিদিন গড় উৎপাদন ৪০/৫০ কেজি। কাঁচা মাশরুম ৩০০ টাকা কেজি ও শুকনো মাশরুম ১,৮০০-২,০০০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করেন। করোনার থাবায় আমার ব্যবসায় ধ্বস নামে। বিক্রি কমে যাওয়ায় ঘরেই নষ্ট হলো অনেক টাকার মাশরুম। তবুও আমি থেকে থাকিনি। ঘরে বসে আচার বানানো শুরু করলাম। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার করে চাহিদা বাড়াতে থাকলাম।
মাশরুমের পাশাপাশি বৃষ্টির রান্নাঘরেও মিলল সাড়া। নানান ধরনের মুখরোচক আচারে মুগ্ধ আচার প্রিয়রা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখন অর্ডার আসা শুরু করেছে। মাশরুম দিয়েও বানাচ্ছেন নানা ধরনের খাবার। মাশরুমের মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বৃষ্টির হাতে তৈরি খাবার।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জয়িতা পুরস্কার ২০২০। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন টনি খান ইনস্টিটিউট থেকে বেকিং ও বেকারির কোর্সের। বৃষ্টির স্বপ্ন অনেক বড়। তার চাওয়া দেশের মেয়েরা ঘরের কাজের পাশাপাশি যে কোনো কাজের উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন।
চাকরির পেছনে না দৌড়ে যদি নিজে উদ্যোক্তা হতে পারে তাহলে পরিবারের স্বচ্ছলতার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
ইমরান পরশ
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা