বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ৩০ বছর আগের বাংলাদেশের অর্থনীতি আর ২০১৮–এর অর্থনীতির হিসাব ভিন্ন। এখন পারিবারিক দায়িত্ববোধের সঙ্গে সঙ্গে একজন নারী তাঁর সত্তাকে এই সমাজে সফলভাবে পরিচিত করে তুলতে সক্ষম। জোনাকী হক একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি দৃঢ় মনোবল, সাহস, বুদ্ধি ও পরিশ্রমের সমন্বয়ে নিজেই গড়েছেন নিজের জগত।

চট্রগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে ডিগ্রিতে পড়াশুনা করা অবস্থায় নিজেই ডিজাইন করে টেইলরকে দিয়ে নিজের জন্য ড্রেস বানিয়ে নিতেন। আশে পাশের সবাই পছন্দ করেন তার ড্রেস গুলো। অনেকেই আবার তার কাছে থেকে ড্রেস বানিয়ে নিতে চাইতেন , আর তিনিও যেহেতু এ কাজের প্রতি পারদর্শী ছিলেন তাই সুন্দর ডিজাইন করে থ্রি পিছ, টু পিছ তৈরি করে দিতেন তাদের। ১৯৮৭ সালে কাল শিল্পী মর্তুজা বশির এর অনুপ্রেরনায় ‘বয়ন’ থেকে ব্লক- বাটিক এর উপর প্রশিক্ষণ নেন। ইতিমধ্যে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী এ সকল বিষয় পছন্দ না করায় জোনাকি তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। কয়েক বছর পর স্বামীর চাকুরীর জন্য ময়মনসিংহ চলে আসেন। সেখানে এসে ঘরে বসে না থেকে স্বামীকে লুকিয়ে ৬ জন কর্মী নিয়ে আবার কাজ শুরু করেন। আশে পাশের প্রতিবেশীরাও তার কাজ ভীষণ পছন্দ করেন এবং ব্যপক সাড়া পান।

কিন্তু স্বামীর অপছন্দ এবং নিষেধ করায় তিনি আবারও কাজ বন্ধ করে দেন। তার স্বামী ময়মনসিংহ থেকে পিএইচডি করার জন্য রাজশাহীতে আসেন। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় জোনাকিকে। এবার স্বামীর অনুমতি নিয়ে শুরু হল উদ্যোক্তার স্বপ্ন পূরনের যাত্র।
২০০৭ সালে রাজশাহীর সাধুর মোড়ে নিজ বাসাতে মাএ চার হাজার টাকা এবং ৩ জন কর্মী নিয়ে শুরু করলেন জোনাকী কালেকশনের যাএা। পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, এক বছরে চার হাজার টাকা পুঁজি থেকে তিন লক্ষ টাকা পুঁজিতে দাড়ায়। মনোবল বেড়ে যায়। ট্রেড লাইসেন্স করেন এবং ২০০৯ সালে BWCCI এর সদস্য হোন। বিভিন্ন মেলায় অংশ গ্রহন করেন, ২০১২ সালে কলকাতা মেলাতেও অংশগ্রহন করেন।আজ থ্রি-পিছ, টু-পিছ, পর্দা,চাদর, ম্যাট, শাড়ি সহ উদ্যোক্তার তৈরী বিভিন্ন পণ্য ঢাকা,চট্রগ্রাম,সিলেট, কুমিল্লা সহ যাচ্ছেদেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

২০১৫ সালে তার ছেলে আমেরিকা থেকে নিখোঁজ হয়। ছেলেকে হারিয়ে জোনাকী অনেক ভেঙ্গে পড়েন।। পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার নতুন উদ্যমে শুরু করেন। বর্তমানে BWCCI এর রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। প্রায় ৭৮০ জন নারী উদ্যোক্তার মা হিসেবে তাদের দেখা শুনা করছেন। তাদের প্রতিনিয়ত উৎসাহিত, সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
নতুন উদ্যোক্তাদের সমস্যা ও চাহিদা গুলো পর্যবেক্ষণ করে তাদের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করছেন জোনাকী।

বর্তমানে ১২জন স্থায়ী এবং ১০০০ জন অস্থায়ী কর্মী এবং BWCCI এর ৭৮০ জন নারী উদ্যোক্তাদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের উচ্চ শেখরে নিয়ে যেতে চান উদ্যোক্তা জোনাকী হক।
রাজশাহী থেকে রাইদুল ইসলাম শুভ
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা