ফাহমিদা কবির নীলা ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইন্যান্সে এমবিএ করে প্রফেশনাল ডিগ্রির জন্য এখন পড়াশোনা করছেন আইসিএমবিএ-তে। এমবিএ শেষ করার পর দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন, কিন্তু স্বাছন্দ্যবোধ করতেন না। কারণ স্কুলজীবন থেকে তার স্বপ্ন ছিল বিজনেস করার।
একটা অর্গানিক রেস্টুরেন্ট করার স্বপ্ন ছিল তার। যখন স্কুলে যেতেন, দেখতেন রাস্তার পাশে ঝালমুড়ি, ফুচকা ও বিভিন্ন খাবারের দোকানগুলো বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু তার কাছে মনে হতো স্বাস্থ্যসম্মত না। এই খাবার যদি অর্গানিক হয়, স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, সেরকম কিছু করলে হয়তো মানুষ যতো দামই হোক কিনবেন। শেষ পর্যন্ত সেরকমই উদ্যোগ শুরু করেছেন ফাহমিদা কবির নীলা।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2023/07/2.Midle-photo-6.jpg)
একটা সময় ছিল নিজের বিজনেস আইডিয়া সবার সাথে শেয়ার করতেন। অনেকের কাছে বলতেন অর্গানিক রেস্টুরেন্ট দিতে চান। তার আইডিয়া শুনে অনেকে হাসি-ঠাট্টা করলেও তার কাছে ছিল সেটা ড্রিম প্রজেক্ট। স্বপ্ন বাস্তবায়নের শুরু ২০১৮ সালে অনলাইনে। উদ্যোগের নাম ‘স্বাদশিল্প’।
নিজের পড়াশোনার ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে একটু উল্টো পথে হেঁটেছিলেন বলে অনেকের বাঁকা কথা শুনেছেন, এখনও শুনছেন সবসময়। তারা আশা যে একদিন সবার ধারণা বদলাবে। বিজনেস যে অনেক সম্মানের সেটা একদিন নিশ্চয় সবাই বুঝতে পারবেন। মেয়েদের কাজগুলোর মূল্যায়নও হবে।
তার ইচ্ছে ছিল একটা অর্গানিক রেস্টুরেন্ট দেওয়ার যেখানে নিজের জমিতেই চাষ করা পণ্য দিয়ে খাবার তৈরি করবেন। কিন্তু রেস্টুরেন্ট করার মতো জমি কিনে বড় পরিসরে কাজ করার মতো অর্থ নেই। তাই তিনি অনলাইনে কাজ শুরু করেন। প্রথমে নিজের বাগানের শাকসবজি ও ফল দিয়ে বিভিন্ন খাবার। উদ্যোগের প্রথম পণ্য ছিলো ফ্রুটস লাড্ডু ও ভেজিটেবল লাড্ডু, যা এখন স্বাদশিল্পের সিগনেচার আইটেম। সবকিছুই ফরমালিনমুক্ত স্বাদশিল্পের বাগানের ফল ও সবজি দিয়ে তৈরি।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2023/07/2.Midle-photof.jpg)
মিষ্টি সবাই খায়, কিন্তু তা যদি স্বাস্থ্যসম্মত হয় তাহলে ছোট বড় সবাই খেতে পারবে। তার টার্গেট কাস্টমার ছিল ১৩ বছরের নিচে বাচ্চারা ও ৪০ ঊর্ধ্ব মধ্যবয়সীরা। কারণ এই বয়সের মানুষ নানারকম স্বাস্থ্য ঝুকিতে ভোগে। তারপর আরও অনেক আইটেম সংযোজন করেন। যেমন: আমলকি পিকলস, লেমন পিকলস, ভেজিটেবল ফিস কাটলেট, রাশিয়ান কাটলেট, বিট রুট-এর শাহী মালাই জর্দা। এগুলো স্বাদশিল্পের ইউনিক পণ্য।
এছাড়াও কাজ করছেন সব রকমের ফ্রোজেন খাবার, কেক, পিৎজা, বিস্কিট, পিঠা, পায়েস ও আচার নিয়ে। সবগুলোই একেবারে ঘরোয়া পরিবেশে তৈরি করা হয়। হো্মমেড খাবার মানেই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। দুজন কর্মী নিয়ে কাজ করছেন। বর্তমানে পুরো কাজই অনলাইনে, নিজস্ব কোন ফ্যাক্টরি এখনও নেই। বেশি অর্ডার পান ঢাকা থেকেই। আমেরিকা ও পর্তুগালে সন্দেশ পাঠিয়েছেন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2023/07/2.Midle-photos-1.jpg)
যেহেতু ফ্রেশ এবং অর্গানিক খাবার সরবরাহ করেন, তাই কোন খাবার স্টক করে রাখেন না। প্রতিটি অর্ডার পাওয়ার সাথে সাথেই খাবার তৈরি করে থাকেন। উদ্যোক্তা জানান, মাত্র ৬০০টাকা নিয়ে শুরু করেছিলেন উদ্যোগ। এখন তার মাসিক আয় ৫০ হাজারেরও বেশি।
ভবিষ্যতে তার উদ্যোগের কাজগুলো আরও বড় পরিসরে করতে চান। দুটো প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করবেন– স্বাদশিল্পের নিজস্ব জমি এবং রেস্টুরেন্ট। সেখানে অনেক মানুষ কাজ করার সুযোগ পাবেন, অনেকের কর্মসংস্থান হবে।
স্বপ্না আক্তার
উদ্যোক্তা বার্তা