নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের প্রকৃতির কোলে হেসে খেলে শৈশব কাটিয়েছেন আনিছ জামান৷ ইট কাঠ আর রড সিমেন্টের আস্তরণে মানুষের দমবন্ধ হওয়া গুমোট কান্না যেন আনিছের দৃষ্টিকে প্রশস্ত করেছে। তার ভাবনার আকাশকে একটু একটু করে আলো দিতে শুরু করে তার প্রকৃতিপ্রেম। তাই প্রকৃতির মাঝে বেড়ে উঠা আনিছ বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি গাছের নার্সারি নিয়ে কাজ শুরু করেন। এখন নাগরিক জীবনে শৌখিন গাছপ্রেমীদের ঘর কিংবা বারান্দার সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে বিভিন্ন গাছ সরবরাহ করছেন তিনি।
যেহেতু গাছের প্রতি একটা অন্যরকম ভালোবাসা রয়েছে, তাই হাতের মুঠোয় থাকা পৃথিবীটাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোগের শুরুতে গাছের একাধিক গ্রুপে সক্রিয় হতে শুরু করেন। তারপর একটু একটু করে নিজের জানাটুকু অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেন এবং অন্যদের থেকে ভালোটুকু গ্রহণ করার মাধ্যমে একটু একটু করে এগিয়ে যান। কোন বিনিয়োগ ছাড়াই ক্যাকটাস বিক্রির মাধ্যমে ৫০০ টাকা উপার্জনের মধ্য দিয়ে তার উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়।

যেহেতু অনলাইনভিত্তিক কাজ করে থাকেন, তাই যেসব গাছ সহজে নষ্ট হয় না, অনেক দিন বেঁচে থাকে, কম যত্নে অধিক ফুলের দেখা মিলে এবং নানা রঙের সমাহার থাকে; এমন সব গাছ নিয়েই কাজ করেন আনিছ।
তিনি তার অনলাইন প্লাটফর্মের নাম দিয়েছেন ‘প্রয়াস’। এখন পর্যন্ত তার সংগ্রহে কাঁটামুকুট আছে দেশী-বিদেশী মিলিয়ে প্রায় ৩৩০ জাতের। নিত্য নতুন বীজের জাত নতুন এক মাত্রা যোগ করছে কাঁটামুকুট ভুবনে। এছাড়াও কাঠগোলাপ আছে ৬৫ জাতের, ৬০ জাতের রেইজ লিলি আছে , বাগান বিলাস রয়েছে ১২, পদ্ম শাপলা ২০ জাতের, ক্যাকটাস প্রায় ১২০ জাতের, অর্কিড আছে ৪০ জাতের।
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে গাছ ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে। আশি শতাংশই রিপিট ক্রেতা, তাদের আস্থা ভালোবাসা সবসময় আরও দায়িত্ব এবং সুন্দর-সুচারু রূপে কাজ করতে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করে আনিছকে।

ঢাকা কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিং-এ অনার্স-মাস্টার্স করে আনিছ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তাই শুধুমাত্র শুক্রবার তিনি তার বাগানে সময় দিতে পারেন এবং অন্যদিনগুলোতে তার স্ত্রী, ভাই, ভাবি, ভাস্তে এবং বাড়ির অন্যান্য সহযোগী কর্মীরা গাছ দেখাশোনা করেন।
আনিছ মূলত বিভিন্ন জাতের কাঁটামুকুট নিয়ে কাজ করেন। নতুন নতুন বীজ উৎপাদন করেন। বীজের উৎপাদিত কাঁটামুকুটের একেকটি নতুন জাতের নামকরণ করা হয় তার নামে। সহজেই যেন কাঁটামুকুট সবাই চিনতে পারেন সেজন্য একটি গাছের গ্রুপ অ্যাডমিন আসিফ ইকবাল ‘আনিছ মিলি’ নামটি দেন৷ এখন অনেক গ্রুপেই এই নামটি বেশ পরিচিত৷

আনিছ জামান বলেন, আপনি যে সেক্টরেই কাজ করতে ভালোবাসেন, সেই সেক্টরে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন। লেগে থাকুন, মনে রাখবেন চেষ্টা শ্রম আর সততার সাথে যদি লেগে থাকতে পারেন, তাহলে একদিন সফলতা আসবে নিশ্চিত। ধৈর্য রাখতে হবে। একদিনেই কেউ উদ্যোক্তা বনে যান না, তার জন্যে কঠোরভাবে লেগে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আজকের বাগানী ভবিষ্যতের উদ্যোক্তা। আগে বাগানী হতে আপনার শিশুদের অভ্যস্ত করুন। ফুল-ফল, পশু-পাখি প্রকৃতির সাথে লেপ্টে থেকে আপনার শিশু বড় হলে, সে আর যাই হোক, মানুষ হিসেবে কখনোই খারাপ মানুষ হবে না।’
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা