উদ্যোক্তা- মহসিনা ইয়াসমিন জাফরিন

খুব অল্প বয়সেই বগুড়ার মেয়ে মহসিনা ইয়াসমিন জাফরিন নিজ সিদ্ধান্তে ভালোবাসার মানুষ মোঃ ফারুক আনোয়ার রাশেদকে বিয়ে করেন। পড়াশোনা করা ফারুক আনোয়ার তখনও বেকার। উপার্জন নেই কারোর-ই, কঠিন প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে সংসার জীবনের পথচলা শুরু এরইমধ্যে সন্তান। ভাগ্য পরিবতনের জন্য দিশা হারা ফারুক কিছু দিন পরেই বিদেশে পাড়ি জমান। ৫ টি বছর ভাগ্য পরিবতনের চেষ্টা, হঠাৎ নেমে আসে কালো অধ্যায়। বিদেশে থাকা অবস্থায় ফারুক যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার কিছুদিন পরেই আবার ব্রেইন স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে যান। বিপদ যেন নিত্য সঙ্গী।

স্বামীর চিকিৎসা করাতে চারপাশে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে কোনো সাহায্য পাননি জাফরিন। টাকা-পয়সা যা ছিল সব শেষ। স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে জীবন যুদ্ধে ঢাল-তলোয়ারহীন এক অসহায় সৈনিক মহসিনা ইয়াসমিন জাফরিন। ভাবলেন মরেইতো গেছি বাঁচার কোন উপায় পাই কিনা শেষ বারের জন্য দেখি। সংসারের হাল ধরলেন নিজেই।

একটা এনজিও থেকে ১লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়িতে মুরগী আর কোয়েল পাখীর একটি খামার শুরু করেন, প্রথম মাস থেকেই অল্প কিছু উপার্জন হতে লাগলো। পাশাপাশি ছোট ভাইয়ের কাছে ইউটিউব এর কাজ শিখেন একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। খামার থেকে যা আয় হতে শুরু হলো তা দিয়ে টানাটানি করে সংসার চলে। এই সময়টায় সরকারি নানা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক রকম প্রশিক্ষণ নিলেন। সেলাই এর কাজ শিখেন, কম্পিউটার শিখেন,পার্লারের কাজ শিখেন এবং হাতের কাজেরও কয়েকটি প্রশিক্ষণ নেন।

এরপর ২০১৯ এর অক্টোবর মাসে একটি ফেইসবুক পেইজ খোলেন হাতের কাজের নানা পন্য নিয়ে। প্রথম দিকে তেমন সাড়া পাচ্ছিলেন না। হতাশা হলেন আবার কিন্তু থেমে যাননি। অপেক্ষা আর অপেক্ষা। নভেম্বর মাসে প্রথম ১০হাজার টাকার পন্য বিক্রি করেন। এ এক নতুন দিগন্ত। ধারাবাহিক ভাবে সৃষ্টিকর্তার কৃপা এবং নিজ চেষ্টায় ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার পণ্যের অর্ডার পান। সব মিলিয়ে জানুয়ারি মাসে তার বিক্রির পরিমান দাড়ায় ৭৫ হাজার টাকা।

প্রথম দিকে কাজ গুলো একা করলেও জানুয়ারি থেকে অর্ডার এর পরিমান বাড়ায় ১৫ জন কর্মী নিয়ে প্রতিদিন কাজ করছেন। জানুয়ারি মাসে তার সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০হাজার টাকা আয় করেন। অর্ডার অব্যাহত থাকে। তার জীবনে নতুন একটা সকাল দেখলেন। এখন তার পণ্যের চাহিদা অনেক গুণ বেড়েছে। অনেক সৌখিন মানুষ আসেন তার কাছ থেকে পণ্য নিতে।

প্রতিটি পণ্য ই পাট এবং উলের তৈরি। দেশিয় পণ্যের সমাহার। জীবনের সব প্রতিকুলতায় হার না মেনে সাহস নিয়ে এগিয়ে চলেছেন জাফরিন। আজ অনেক খুশি জাফরিন, পরিবার তার আয়ে চলে। স্থায়ীভাবে ৬ জন কর্মী এবং অস্থায়ী ভাবে ৭০ জনের মতো কর্মী কাজ করেন। আজ অভাব থেকে সচ্ছলতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে জাফরিনের পরিবার। জাফরিনের হাত ধরে আরো অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি বিভিন্ন ট্রেনিংও দিয়ে থাকেন। এরকম জাফরিনরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পরিবার, সমাজ তথা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here